Advertisement
E-Paper

ভোটের হাওয়ায় উঁকি মারছে অচেনা চেন্নাই

কফি-দোসা-সম্বরের মৌতাত, সিল্ক শাড়ির খসখস পথচলতি শব্দ, দিন থেকে রাত সরগরম মেরিনা সৈকত— সবই তো রয়েছে যেমন কে তেমন!

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৫০

কফি-দোসা-সম্বরের মৌতাত, সিল্ক শাড়ির খসখস পথচলতি শব্দ, দিন থেকে রাত সরগরম মেরিনা সৈকত— সবই তো রয়েছে যেমন কে তেমন!

কিন্তু ভোটের বাজারে চাঁদিফাটা রোদের এই চেন্নাইয়ের রাজপথের দু’ধারে যাঁদের সব চেয়ে বেশি থাকার কথা ছিল, তাঁরা কই?

কোদামবক্কম থেকে টি মার্কেট হয়ে মাউন্ট রোড ধরে তারামনি পর্যন্ত— কোথায় আকাশছোঁয়া কালো চশমা পরা করুণানিধি? অথবা সবুজ শাড়িতে বরাভয় মুদ্রায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা? নেই এ বারের তামিলনাড়ু ভোটে প্রবল ভাবে আলোচিত নেতা-অভিনেতা বিজয়কান্তের কাট-আউটও।

নির্বাচন কমিশনের বজ্রমুষ্টি এ বার তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক আচরণবিধিতে। রাস্তাঘাটে সর্বত্র নেতাদের পেল্লায় পোস্টার আর দানবাকৃতি কাটআউট ছিল তামিলনাড়ুর ভোট উৎসবের সব চেয়ে বড় অঙ্গ। রাজ্যের ‘প্রিভেনশন অব ডিফেসমেন্ট অ্যাক্ট অন পাবলিক প্লেস’ নামের আধমরা আইনটিকে কড়া ভাবে ফিরিয়ে এনেছে কমিশন। আর তাই নেতাদের লার্জার দ্যান লাইফ ফ্রেমগুলি ডিএমকে, এডিএমকে-র পার্টি অফিসের চাতালেই বন্দি।

তবে কাট আউট-এ নিষেধাজ্ঞা বা রাস্তা আটকে তাসা-ব্যান্ড পার্টির শোভাযাত্রা (যা কেবল এখানকার ভোট প্রচারেরই এক অনন্য বিশেষত্ব ছিল) বন্ধ করার যে পদক্ষেপ, তা ট্রেলার মাত্র। আসল ছবি হল, তামিলনাড়ুতে কমিশন রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির। নারদ কাণ্ড নিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে। আর এ রাজ্যে গোপন ক্যামেরার ছবি সামনে না এলেও ভোটে টাকার খেলা আটকাতে কমিশনের পদক্ষেপ ঘিরে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। তামিলনাড়ু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার কথায়, “আচরণবিধি জারির পরে এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে লুকোনো ৬৫ কোটি নগদ টাকা, আড়াইশো সোনার কয়েন। অনেক নেতার ড্রাইভার, আত্মীয়ের বাড়ি থেকেও মিলছে বেআইনি ধনসম্পদ।” বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও এডিএমকে নেতা কোলাচ্চি জয়কুমারের জামাইয়ের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে আট কোটি টাকা, যা নাকি সেলাই করা ছিল বিভিন্ন গদিতে!

ভোট কিনতে টিভি, মিক্সির মতো আকর্ষণীয় পণ্য দেওয়ার রেওয়াজও ছিল তামিলনাড়ুতে। বিষয়টি সমালোচিত হওয়ায় কমিশনের দৃষ্টি এ দিকে ফিরেছে। লোকসভা ভোটের সময়ই কড়াকড়ি শুরু হয়। এ বার
আরও জোরালো অভিযান শুরু করেছে
কমিশন। জয়ললিতার দলের প্রার্থী অভিনেতা শরৎকুমারের জনপ্রিয়তা অনেকটা দেবের মতোই। কালই তাঁর গাড়ি দাঁড় করিয়ে নগদ নয় লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে কমিশন। টাকা মিলছে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর থেকেও। কারুর জেলা সদরে দাঁড়িয়ে ছিল সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। আচমকা হানা দিয়ে মিলেছে নগদ পাঁচ কোটি টাকা।

এপ্রিলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ভোটে টাকার সুনামি আটকাতে চায় কমিশন। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে আয়কর বিভাগের ৩২টি দল রাজ্যে এসেছে। চলছে জোর তল্লাশি। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার রাজেশ লাহোনির কথায়, “ভোটারদের জন্য বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচির আয়োজন করবে কমিশন। ভোটাররা শপথ নেবেন যে টাকার বিনিময়ে ভোট দেবেন না তাঁরা।”

কমিশনের পদক্ষেপে প্রবল অস্বস্তি হলেও মুখ খুলছে না আম্মার দল। তবে উল্লসিত করুণানিধির ডিএমকে। তাদের মুখপাত্র টি কে এস ইলানগোভানের মন্তব্য, “জেলায় জেলায় টাকা পাঠিয়েছে এডিএমকে। পুলিশ সব জেনেও টুঁ শব্দ করেনি। কমিশনের কাজে আমরা খুশি।” তবে যে দলে টু-জি কেলেঙ্কারির নায়কেরা প্রতিদিন করুণানিধির দু’পাশে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের মুখে এই ধরনের কথা কতটা শোভা পায়, সেই প্রশ্ন তুলছে আম্মা-বাহিনী।

tamilnadu assembly election dmk karunanidhi aidmk jaylaitath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy