Advertisement
E-Paper

ওকাম্পোর সান্নিধ্যে কবি এ বার পর্দায়

কবি এবং তাঁর ‘বিজয়া’। রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর বিদেশিনি বান্ধবী।দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পরে ভারত এবং আর্জেন্তিনার যৌথ সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ এবং ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর রসায়নকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘থিংকিং অব হিম’।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো। — ফাইল চিত্র

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো। — ফাইল চিত্র

কবি এবং তাঁর ‘বিজয়া’। রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর বিদেশিনি বান্ধবী।

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পরে ভারত এবং আর্জেন্তিনার যৌথ সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ এবং ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর রসায়নকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘থিংকিং অব হিম’। আর্জেন্তিনার বর্ষীয়ান পরিচালক পাবলো সিজারের এই ছবির শ্যুটিং শান্তিনিকেতনে শুরু হওয়ার কথা আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করবেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, ওকাম্পোর চরিত্রে আর্জেন্তিনার অভিনেত্রী আলিয়োনোরা ওয়েক্সলার। ছবিতে একটি ভারতীয় তরুণীর চরিত্রে দেখা যাবে রাইমা সেনকেও।

এই সম্পর্কটি নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নীরব ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯২৫ সালের ২৯ অক্টোবর ওকাম্পোকে লেখা চিঠিতে (যাঁকে তিনি সর্বদা সম্বোধন করেছেন বিজয়া বলে, এবং ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন সেই বিজয়াকেই) এই আশাই প্রকাশ করেছিলেন যে, তাঁর পাঠকেরা কেউই কোনও দিন জানবে না, কে এই বিজয়া! কিন্তু পরে, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীতে খোলাখুলি ভাবেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছিলেন ওকাম্পো তাঁর বইয়ে। স্প্যানিশ ভাষায় তিনি নিজের আবেগের প্রসঙ্গে অকপট এবং অলজ্জ হয়েই বলেছিলেন, কী ভাবে কবির দরজার সামনে ‘নিছক কুকুরের মতো’ তিনি শুয়ে থাকতেন, কী ভাবে তাঁর ভিতরের বন্য জন্তুটা ক্রমশ ধীরে ধীরে পোষ মেনেছিল। স্প্যানিশ ভাষায় লেখা রবি-ওকাম্পো কথা পরে অনুবাদ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ, যার নাম ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’।

চলচ্চিত্রে এই প্রবাদপ্রতিম সম্পর্ককে তুলে ধরার উদ্যোগটি সম্পর্কে শঙ্খ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘ওঁদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর সম্পর্ক ছিল। দু’জনের কাজের পক্ষেই তা ছিল ফলপ্রসূ। ফলে এই নিয়ে একটি সুন্দর ছবি করা যেতেই পারে। কিন্তু সমস্যা একটাই, অনেকেই এই ধরনের বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মাত্রা রাখতে পারেন না। একটু এ-দিক ও-দিক হলেই গোটা কাজটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজন বিশ্বাস্য চিত্রনাট্য, পরিচালনা।’’

এই সম্পর্ক নিয়ে কৌতূহল আজকের নয়। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে রবীন্দ্রভবনে তাঁর কিছু ফোটোগ্রাফ পাঠিয়েছিলেন ওকাম্পো। একটি ছবিতে তাঁরা দু’জনেই ছিলেন। সেই ছবিতে নিজের মুখটি পেন দিয়ে কেটে দিয়েছিলেন ওকাম্পো। শঙ্খ ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘‘সেই সময় তাঁকে এতটাই উত্যক্ত করা হচ্ছিল নানা ভাবে যে, সম্ভবত বিরক্ত হয়েই ওকাম্পো এই কাজটি করেন।’’

১৯২৪ সালের নভেম্বরে আর্জেন্তিনার সান ইসিদ্রো শহরে রিয়ো দে প্লাতা নদীর ধারে ওকাম্পো পরিবারের পুরুষানুক্রমিক বাসস্থানের কাছেই ‘মিরালরিয়ো’ নামের একটি বাড়িতে অসুস্থ শরীর নিয়ে ভিক্তোরিয়ার আতিথ্য নিয়েছিলেন কবি। প্রথমে স্থির ছিল দু’সপ্তাহ থাকবেন, সেটা শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় দু’মাসে। সেই বাড়ির বারান্দার আরামকেদারায় বসে রবীন্দ্রনাথ লিখে চলেন একের পর এক কবিতা, যেগুলি ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ছ’বছর পরে যখন প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের চিত্র প্রদর্শনী হয়, তার মূল উদ্যোগ ছিল ওকাম্পোরই। রবীন্দ্র গবেষক কেতকী কুশারী ডাইসনের অভিমত, তাঁর আঁকা অনেক নারীমুখের আদলে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছেন ওকাম্পোই। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগটি যে নতুন নয় সে কথা লন্ডন থেকে জানালেন ডাইসনই। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে শুনে আসছি এই বিষয়টি নিয়ে সিনেমা হচ্ছে। হওয়া তো উচিতই ছিল। পাবলো সিজারের সঙ্গে কথাও হয়েছে এই নিয়ে। আমার মতামতও নেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য তাঁরা আর যোগাযোগ করেননি।’’ রবীন্দ্রনাথ এবং ওকাম্পোর সম্পর্ক নিয়ে ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘ইন ইয়োর ব্লসমিং ফ্লাওয়ার গার্ডেন’ স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। তার তিন বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্‌তোরিয়া ওকাম্পোর সন্ধানে’। ডাইসনের কথায়, ‘‘আমার যা বলার, তা আমার গবেষণাগ্রন্থতেই বলেছি। সেখানে বানিয়ে গল্প বলার কোনও জায়গা নেই। ফলে এই ছবিটি কী হবে, কেমন হবে, তা না জেনে আমার পক্ষে কিছু বলা এখনই সম্ভব নয়। আমি তাই আপাতত এর বাইরেই থাকতে চাই।’’ তবে পাশাপাশি ডাইসনের বক্তব্য, ভারত-আর্জেন্তিনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ এবং ওকাম্পোর পারস্পরিক আদানপ্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

আর্জেন্তিনার দূতাবাস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য প্রথমে তিন জনের নাম ভাবা হয়েছিল। তাঁরা, অমিতাভ বচ্চন, নাসিরুদ্দিন শাহ এবং বেন কিংগ্স্‌লে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয়েছে ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপকেই। ছবিটির চিত্রনাট্যে একইসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে দু’টি ভিন্ন সময়কে। সমসাময়িক আর্জেন্তিনার এক শিক্ষক ফেলিক্সের হাতে আসে অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ। ক্রমশ তিনি জানতে পারেন ওকাম্পোর সঙ্গে কবির যোগাযোগের বিষয়টি। তিনি ভারত এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নিজের ভিতর প্রবল আগ্রহ বোধ করতে থাকেন এবং ভারত দর্শনে আসেন। এই প্লটের পাশাপাশি এগোতে থাকে কবি এবং বিজয়ার ঘটনাবলি, তাঁদের চরিত্রায়ণ। কেতকী কুশারীর ভাষায়, ‘ভিক্‌তোরিয়া আর রবীন্দ্রনাথের যে-বন্ধুত্ব, তার অন্তরেও বিরাজ করে একটা টেনশন, একটা প্যারাডক্‌স্...’। সুতরাং পাবলো সিজারের কাজটা কঠিন।

Rabindranath Tagore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy