Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাঁচির গ্রামে রাতের কড়া নাড়া, ‘ভূত’ পড়ল জালে

গভীর রাতে বার-দরজায় আওয়াজ উঠত খট্খট্, খট্খট্। ঘুম ভেঙে উঠে এসে বাড়ির লোক দরজা খুলত। কেউ নেই, দূরে ছায়ার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে একটি অবয়ব। তার হাত সামনে, হাতে ধরা-ছোঁয়ার আভাস। গ্রামবাসীদের কেউ বলত, ছায়ামূর্তির পরনে শাড়ি। কেউ বলত ধুতি। কেউ দেখত, হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে মূর্তিটি। কেউ বলত, ছোরা হাতে ছুটে চলে যাচ্ছে ছায়ামূর্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৩৪
Share: Save:

গভীর রাতে বার-দরজায় আওয়াজ উঠত খট্খট্, খট্খট্। ঘুম ভেঙে উঠে এসে বাড়ির লোক দরজা খুলত। কেউ নেই, দূরে ছায়ার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে একটি অবয়ব। তার হাত সামনে, হাতে ধরা-ছোঁয়ার আভাস। গ্রামবাসীদের কেউ বলত, ছায়ামূর্তির পরনে শাড়ি। কেউ বলত ধুতি। কেউ দেখত, হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে মূর্তিটি। কেউ বলত, ছোরা হাতে ছুটে চলে যাচ্ছে ছায়ামূর্তি।

রাঁচির নামকুম থানার সিদরোলের বাসিন্দারা গত পনেরো দিন ধরে এই ছায়ামূর্তি বা ভূতের ভয়ে কাবু ছিল। গভীর রাতে কান খাড়া করে থাকত সবাই, ওই বুঝি নড়ে উঠল তাঁদের দরজার কড়া।

শেষ পর্যন্ত গ্রামেরই কিছু যুবক উদ্যোগী হয়ে রহস্যের কিনারায় নামে। রবিবার গভীর রাতে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় ভূত। এর পর শুরু হয় গণপ্রহার। আধমরা অবস্থায় পুলিশ ভূতরূপী যুবককে গ্রামবাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে রিমস হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। সে গ্রামের কেউ নয়।

গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, দিন পনেরো ধরে গভীর রাতে এই উত্পাত শুরু হয়েছিল। পর পর কয়েক দিন বিভিন্ন বাড়িতে এই ভাবে কড়া নাড়া ও তার পর ছায়ামূর্তি দেখে গ্রামবাসীরা ভয় পেতে শুরু করেন। সন্ধ্যারাতেই দরজায় খিল পড়ে যাচ্ছিল বাড়িতে বাড়িতে। এর পর স্থানীয় যুক্তিবাদী লোকেরা গ্রামেরই এক মানসিক রোগগ্রস্ত যুবককে নামকুম থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাদের সন্দেহ হয়, ওই যুবকই ভূত সেজে তাদের ভয় দেখাচ্ছে। নামকুম থানার পুলিশ ওই যুবককে কাঁকের মানসিক হাসপাতাল, রিনপাসে ভর্তি করে।

এক গ্রামবাসী জানান, এ বার ভূতের উপদ্রব শেষ হল ভেবে তারা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যান। কিন্তু, গভীর রাতে ফের শোনা যায় সেই খট্খট্, খট্খট্—কড়া নাড়ার আওয়াজ। সোমবার সকালে কয়েক জন যুবক ঠিক করেন, রাতে পাহারা দিয়ে ভূত ধরবেন। সেই অনুযায়ী গত কাল রাতে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় নজরদারি। মধ্যরাতে ফের শাড়ি পড়া, হাতে ভোজালি নিয়ে হাজির হয় সেই ভূত। এ বার আর দেরি করেননি রাতের পাহারাদাররা। শাড়ি পড়া ভূতের পিছনে দৌঁড়ে তাকে ধরে ফেলেন।

অভিযোগ, ওই যুবককে এর পর নগ্ন করে হাত পা বেধে নির্মম ভাবে পেটাতে থাকে গ্রামবাসীরা। মোবাইলে গণপিটুনির ছবিও তোলে তারা। খবর যায় নামকুম থানায়। পুলিশ এসে ওই যুবককে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে রিমসে ভর্তি করেন। রাঁচির এসপি (গ্রামীণ) রাজকুমার লকড়া বলেন, ‘‘ধৃত যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই জানা গিয়েছে। তবে এখনও তার পরিচয় জানা যায়নি। ওই যুবকের অবস্থা স্থিতিশীল। এখনও পর্যন্ত গণপ্রহারের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হলেও গণপিটুনিতে সামিল গ্রামবাসীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Ranchi villager MostReadStories ghost
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE