Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গিদের চেনেন না, দাবি জাকির নাইকের

তাঁর সঙ্গে কোনও জঙ্গির যোগাযোগ নেই। নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য কোনও দিন কাউকে প্ররোচনাও দেননি। বিতর্কের মুখে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলেন জাকির নাইক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

তাঁর সঙ্গে কোনও জঙ্গির যোগাযোগ নেই। নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য কোনও দিন কাউকে প্ররোচনাও দেননি। বিতর্কের মুখে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলেন জাকির নাইক।

ভারতে ফিরলেই এই বিতর্কিত ধর্ম প্রচারকের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা। তাই সৌদি আরবের মদিনা থেকেই আজ স্কাইপের মাধ্যমে মুম্বইয়ের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বাংলাদেশের গুলশনের জঙ্গি থেকে কেরলের আইএস যোগ দেওয়া যুবক— সন্ত্রাসবাদীদের একাধিক কর্মকাণ্ডের প্রেরণা হিসেবে নাম জড়িয়েছে মুম্বই নিবাসী এই ধমর্প্রচারকের। তাঁর ‘পিস টিভি’ চ্যানেলের সম্প্রচারও বন্ধ করেছে ঢাকা। ভারতেও চ্যানেলটি নিষিদ্ধ। গুলশন কাণ্ডের জঙ্গিরা জাকিরের বক্তব্য থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে, এমন অভিযোগ ওঠায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ঘটনাচক্রে গুলশন কাণ্ডের সময় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন জাকির। ভারতে ফিরলেই গ্রেফতার হতে পারেন, এই আশঙ্কায় মুম্বই ফেরা বাতিল করেন তিনি। তার পর থেকেই স্কাইপের মাধ্যমে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করছিলেন। আজ তা সফল হয়েছে।

জাকিরের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তাঁর বক্তব্য উস্কে দেয় জঙ্গি কার্যকলাপকে। জাকির আজ দাবি করেন, তিনি এক জন শান্তির দূত। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পঁচিশ বছর ধরে ধর্মের কথা শোনাচ্ছি, কখনওই কোনও জঙ্গিকে অনুপ্রাণিত করিনি। নিরীহ মানুষকে হত্যার বিরোধী আমি। কারণ সেটা ইসলামের বিরোধী। এই ধরনের যে কোনও হামলার নিন্দা করছি।’’ নাইকের দাবি, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই আমার বক্তব্য বিকৃত করে ব্যবহার করা হয়েছে। যারা এমন করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ গুলশনের হামলার পরে তাঁর বক্তব্যের অংশকে সংবাদমাধ্যম যে ভাবে তুলে ধরেছে, সে প্রসঙ্গে নাইকের মন্তব্য, ‘‘ভারতে আমার মিডিয়া ট্রায়ালের চেষ্টা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে দু’হাজার বাক্য শুনিয়েছি। কিন্তু সে সবে না গিয়ে এমন দশটা কথা টেনে আনা হচ্ছে, যার ব্যাখ্যা দু’রকম ভাবে দেওয়া যায়।’’ জাকিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তিনি আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্ররোচনা দেন। এ নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘নিজের দেশকে রক্ষা করতে কেউ যদি আত্মঘাতী হামলা চালায়, তা হলে তা যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান এই কাজ করেছে। কিন্তু আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে কেউ যদি সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’

সম্প্রতি কেরল থেকে ১৭ জন তরুণ-তরুণী সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগদান করে। যাদের মধ্যে একটি পরিবারের দুই ভাই ও তাদের স্ত্রী-রা রয়েছেন। ওই দুই ভাইয়ের পিতার অভিযোগ, তাঁর ছেলেরা জাকিরের সঙ্গে দেখা করার পরেই আইএসে যোগদান করতে সিরিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, জাকিরের সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কাজের অভিযোগ আছে। ওই সংগঠনে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগদান করেছেন, এমন তথ্যও আছে গোয়েন্দাদের কাছে। যদিও জাকিরের দাবি, ‘‘জেনেশুনে কোনও জঙ্গির সঙ্গে দেখা করিনি। কিন্তু কেউ যদি আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, আমি হেসে ছবি তুলি। তার মানে এই নয় যে আমি ওদের চিনি।’’ তবে অনেকেই ধর্মের নামে মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে আজ মন্তব্য করেন জাকির।

আপাতত মদিনা থেকে আফ্রিকা যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জাকিরের। জানিয়েছেন, এ বছর ভারতে ফিরছেন না। তাঁর ভাষণ নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে জাকির জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত মুম্বই পুলিশ যোগাযোগ করেনি। তবে তাঁরা যদি সহযোগিতা চান, নিশ্চয়ই করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zakir nayak Terrorism Islam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE