Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অমিতের রাজ্য নিয়ে ভাবেই না সাধের সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরে যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই নতুন উড়ান শুরু হচ্ছে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের মঞ্চে। গত সপ্তাহে কলকাতায় ‘গ্লোবাল বেঙ্গল বিজনেস সামিটে’র মঞ্চ থেকে এমন বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। গাঁধীনগরে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’র মঞ্চে দাঁড়িয়ে সিঙ্গাপুর কিন্তু বলছে, আপাতত বাংলার দিকে তাকানোর সময় তাদের নেই। বরং বিনিয়োগ এবং ব্যবসার নিরিখে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে গুজরাত এবং অন্ধ্রপ্রদেশ। আর এ কথা যিনি বলছেন, তিনি আর কেউ নন, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিষয়ক মন্ত্রী ই ঈশ্বরণ।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
গাঁধীনগর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

সিঙ্গাপুরে যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই নতুন উড়ান শুরু হচ্ছে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের মঞ্চে। গত সপ্তাহে কলকাতায় ‘গ্লোবাল বেঙ্গল বিজনেস সামিটে’র মঞ্চ থেকে এমন বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

গাঁধীনগরে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’র মঞ্চে দাঁড়িয়ে সিঙ্গাপুর কিন্তু বলছে, আপাতত বাংলার দিকে তাকানোর সময় তাদের নেই। বরং বিনিয়োগ এবং ব্যবসার নিরিখে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে গুজরাত এবং অন্ধ্রপ্রদেশ। আর এ কথা যিনি বলছেন, তিনি আর কেউ নন, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিষয়ক মন্ত্রী ই ঈশ্বরণ। সিঙ্গাপুর সরকারের এই অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রীকে অমিতবাবু নিজের বন্ধু বলেই ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করে থাকেন!

ফলে বাংলার শিল্প মানচিত্রে সবেধন নীলমনি যে দেশটিকে ঘিরে এগোনোর স্বপ্ন দেখানো হচ্ছিল, তা যে আদতে প্রত্যাশার ফানুসমাত্র, তা স্পষ্ট হয়ে গেল ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’র মঞ্চেই।

এ বার শিল্প সম্মেলনের জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র দেশের তাবড় শিল্পপতিদের যে চিঠি লিখেছিলেন, তাতে সিঙ্গাপুরের সাফল্যই তুলে ধরা হয়েছিল। ১৩টি মউ স্বাক্ষরের পাশাপাশি রাজ্যে কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তা উল্লেখ করে মুখ্যসচিব লিখেছিলেন, এ বার নতুন পর্বের শুরু হতে চলেছে। সিঙ্গাপুরে যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই নতুন করে শুরু করা হবে।

কিন্তু ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’র মঞ্চে বোঝা গেল, না, কিছুই শুরু হয়নি! এখানে গুজরাত সরকারের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে যে প্রতিনিধি দল এসেছে, তার নেতৃত্ব দিয়েছেন ঈশ্বরণ। সম্মেলনে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুর সরকার নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব নিয়ে বিশেষ উৎসাহী। তাঁর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানে আমরাও আগ্রহী। সারা দেশে ১০০টি স্মার্ট সিটি তৈরির যে পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তাতে অংশ নিতে চায় সিঙ্গাপুর।”

এর পরেই ঈশ্বরণ নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিবরণ দিয়ে বলেন, “গুজরাতে আমাদের দেশের অনেক সংস্থা বিনিয়োগ করেছে। গুজরাতের সঙ্গে কাজ করাটা আমাদের অগ্রাধিকার। স্মার্ট সিটি নির্মাণের এই প্রকল্পে আমরা এ বার অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানী তৈরির কাজেও নামছি।”

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে গুজরাতি শিল্পপতিদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, দ্বীপরাষ্ট্রে অসংখ্য গুজরাতি আছেন। এমনকী ভারত-সিঙ্গাপুর যৌথ বণিকসভার প্রথম সভাপতিও ছিলেন এক জন গুজরাতি। সে দেশের মাটিতে গুজরাতিরা যথেষ্ট প্রভাবশালী। ফলে আমদাবাদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সম্পর্ক প্রাচীন ও দৃঢ। তেমনই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গো চক টং-য়ের সম্পর্কও।

সিঙ্গাপুর যে আমদাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চায়, তার উদাহরণও তুলে ধরেছেন ইশ্বরণ। তাঁর কথায়, “টাটা ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের যৌথ উদ্যোগের এয়ারলাইন্সের দিল্লি-আমদাবাদ প্রথম উড়ানের যাত্রী হতে পেরে ভাল লাগছে। সিঙ্গাপুর এ বার আমদাবাদের আরও কাছাকাছি এল।”

স্মার্ট সিটি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ওয়াটার এবং অ্যামিউজমেন্ট পাকর্র্, নগর পরিকল্পনার মতো একাধিক বিষয়ে সিঙ্গাপুর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে চায় বললেও একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “গুজরাতের বাণিজ্য-বান্ধব পরিবেশ এবং ইতিবাচক সরকারি মনোভাবই এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাই গুজরাত সবার আগে।”

ঈশ্বরণের নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর থেকে ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এসেছেন গাঁধীনগরে। সেই দলে টেমাসেক, জিআইসি, ডিবিএস ব্যাঙ্ক, ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের মতো একগুচ্ছ সংস্থা রয়েছে। কলকাতার শিল্প সম্মেলনে এদের কাউকেই দেখা যায়নি। কলকাতার এক ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের কয়েকটি স্বল্পনামী সংস্থাকে আনতে সমর্থ হলেও সরকারি স্তরে এই ধরনের কোনও প্রতিনিধি দল পাঠানোর দাবি করা হয়নি কোথাও। আর সিঙ্গাপুরের মতো দেশে যে সরকারই সে দেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে, তা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রই একাধিক বার দাবি করেছেন। তাই চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনালের এক কর্তাকে বিশ্ব বঙ্গের মুখ করে তোলার চেষ্টা হলেও গাঁধীনগর বুঝিয়ে দিল, সিঙ্গাপুরের লগ্নি র্যাডারে আপাতত কলকাতার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের অস্তিত্বই নেই!

নেই যে, সেটা অবশ্য গত বছর অগস্ট মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গাপুর সফরের সময়ই বোঝা গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পরেই আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিতে বসেছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী কে ষন্মুগম। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের জমি পাওয়া যাবে তো? মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন ১০ হাজার একরের ল্যান্ড ব্যাঙ্ক রয়েছে? পরক্ষণেই তিনি বলেন, আসলে ২৩টি শিল্প পার্কে ১০ হাজার একর জমির কথা জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। আর তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও তো বলে গেলেন তাদের শিল্পের জন্য ১ লক্ষ একর তৈরি জমি রয়েছে।

তাঁদের চোখে ফারাকটা কত স্পষ্ট, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সে দিনই। আমদাবাদ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE