Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অর্ডিন্যান্স প্রশ্নে জট নিয়েই আজ ফের বসছে মন্ত্রিসভা

এক দিনের ব্যবধানে আজ, রবিবার ফের মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত ক্যাবিনেট সচিবালয়ের তরফে মন্ত্রীদের কাছে বৈঠকের আলোচ্যসূচি পাঠানো হয়নি। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, ভোটের আগে কংগ্রেসের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার অঙ্ক মেনে কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কী সেই অঙ্ক? সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দুর্নীতি মোকাবিলায় যে বিলগুলি নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করার দাবি জানাচ্ছিলেন রাহুল গাঁধী, কাল সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ব্যাপারে রাত পর্যন্ত চেষ্টা চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৩
Share: Save:

এক দিনের ব্যবধানে আজ, রবিবার ফের মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত ক্যাবিনেট সচিবালয়ের তরফে মন্ত্রীদের কাছে বৈঠকের আলোচ্যসূচি পাঠানো হয়নি। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, ভোটের আগে কংগ্রেসের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার অঙ্ক মেনে কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

কী সেই অঙ্ক? সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দুর্নীতি মোকাবিলায় যে বিলগুলি নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করার দাবি জানাচ্ছিলেন রাহুল গাঁধী, কাল সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ব্যাপারে রাত পর্যন্ত চেষ্টা চলছে। সেবি আইন সংশোধন বিলটি অর্ডিন্যান্স হিসেবে জারি করার চেষ্টাও চলছে। সেই সঙ্গে রাজ্যভাগের পর এ বার অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবেও কাল সায় দিতে পারে মন্ত্রিসভা।

আগামী কালের বৈঠকে অবশ্য দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত বকেয়া চারটি বিলের দিকেই নজর থাকবে সব মহলের। সরকার তথা কংগ্রেসের মাথাব্যথাও এখন ওই চারটি বিল। এগুলিকে অর্ডিন্যান্স হিসেবে জারি করার জন্য অনেক দিন ধরেই দাবি জানাচ্ছেন রাহুল। কেন না কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগই লোকসভা ভোটে বিরোধীদের প্রধান হাতিয়ার। সূত্রের খবর, অর্ডিন্যান্স জারির প্রস্তাব মন্ত্রিসভার গত কালের বৈঠকেও তোলা হয়েছিল। কিন্তু আপত্তি তোলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল। তাঁকে সমর্থন করেন কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। নীতিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রীও এর পক্ষে নন। সরকারের এই শীর্ষ নেতাদের যুক্তি, এই বিলগুলি নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করার মতো জরুরি অবস্থা দেশে তৈরি হয়নি। তা ছাড়া কংগ্রেসের অধিকাংশ বর্ষীয়ান নেতা মনে করেন, জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া যে কোনও বিল সংসদে আলোচনার মাধ্যমে পাশ হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় কী করবেন, সে ব্যাপারেও কিছুটা চিন্তিত কংগ্রেস। কারণ প্রণববাবু বরাবরই সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলার পক্ষপাতী। বিদায়ী সরকার এ ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখে তবেই তিনি সই করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ধারণা অনেকের। সে দিক থেকে এক মাত্র সেবি সংশোধন বিলে অর্ডিন্যান্স জারির ব্যাপারে সংশয়

কম। কারণ, এ ব্যাপারে অর্ডিন্যান্স ছিলই। সংসদে বিলটি পেশ করা যায়নি। তাই আরও একবার অর্ডিন্যান্স জারি করা জরুরি। কেন না এর সঙ্গে প্রচুর মানুষের স্বার্থ জড়িত বলে সরকারের দাবি।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্ডিন্যান্স নিয়ে বাদানুবাদের পর স্থির হয়, এ নিয়ে কোর গ্রুপে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠে আসে যে, সরকার আলোচনার মাধ্যমেই বিল পাশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা সংসদ চলতে না দেওয়াতেই সেগুলি পাশ করানো যায়নি। এই যুক্তিতে অন্তত কিছু বিষয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা যেতে পারে। কোর গ্রুপের বৈঠকে স্থির হয়, রবিবার মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকা হবে। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য কাল রাতেই ক্যাবিনেট সচিবালয়ের তরফে অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত নথিপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তবু অর্ডিন্যান্স নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি। এ দিনও বিকেলে বিষয়টি নিয়ে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন কপিল সিব্বল, সুশীল শিন্দে, আহমেদ পটেলরা। পরে সিব্বল এবং শিন্দে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখাও করেন। মজার বিষয়, বিষয়টি নিয়ে এ দিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, এটির সঙ্গে আইনি বিষয় জড়িত বলে প্রধানমন্ত্রী নিজে না গিয়ে সিব্বলকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। অর্ডিন্যান্স জট কাটাতে কাল ফের কোর গ্রুপে কথা হতে পারে।

কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবে সায় দিতে পারে সরকার। রাজ্য ভাগের পর অন্ধ্রে কংগ্রেসের অবস্থা এখন যথেষ্ট নড়বড়ে। এই অবস্থায় অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সনিয়া অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। রাজ্যসভায় তেলঙ্গানা বিল পাশের সময় প্রধানমন্ত্রীও এই আশ্বাস দিয়েছিলেন। মনমোহন এ-ও জানিয়েছিলেন, অন্ধ্রপ্রদেশের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য প্যাকেজও দেবে কেন্দ্র।

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ বলেন, “কোনও রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার জন্য জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক ডাকার প্রয়োজন নেই। মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।” তিনি জানান, উত্তরাখণ্ড গঠনের দু’বছর পর বাজপেয়ী সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রাজ্যটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। তাই ইউপিএ সরকারের সে পথে হাঁটতে অসুবিধা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE