Advertisement
E-Paper

অসহায় প্রবীণদের পাশে তরুণ-ব্রিগেড

দু’টো শহরের মধ্যে দূরত্ব কয়েকশো কিলোমিটারের। ঝাড়খণ্ডের শিল্পনগরী জামশেদপুর। অন্যটি কলকাতার পরিকল্পিত উপনগরী সল্টলেক। কিন্তু দূরত্ব থাকলেও, একটি বিষয়ে মিল রয়েছে দু’টি শহরেরই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৫৮

দু’টো শহরের মধ্যে দূরত্ব কয়েকশো কিলোমিটারের।

ঝাড়খণ্ডের শিল্পনগরী জামশেদপুর। অন্যটি কলকাতার পরিকল্পিত উপনগরী সল্টলেক। কিন্তু দূরত্ব থাকলেও, একটি বিষয়ে মিল রয়েছে দু’টি শহরেরই।

দু’জায়গাতেই কার্যত নিঃসঙ্গ বয়স্ক নাগরিকদের একাংশ।

ছেলেমেয়েরা চাকরি সূত্রে, অন্য কোনও কারণে তাঁদের থেকে দূরে। প্রতিদিন দেখভালের কেউ-ই নেই। আপদ-বিপদে ভরসা প্রতিবেশিরাই। জামশেদপুরে এ বার এমনই অসহায় প্রবীণদের দেখাশোনা করতে এগিয়েছে ‘জেনারেশন-ওয়াই’এর তরুণ-তরুণী।

গত ডিসেম্বরে জামশেদপুরের কাছে পটমদার একটি বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ দম্পতির কোপানো দেহ উদ্ধার হয়। ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে থাকেন বাইরে। দু’দিন ধরে মা-বাবার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ না-হওয়ায় বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, তাঁরা খুন হয়েছেন।

পুজোর আগে সল্টলেকে এইচএ ব্লকের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা ছিনতাইকারীদের হাতে আক্রান্ত হন। পুলিশে খবর দিতে লণ্ডনে ছেলেকে ফোন করেন তিনি। লণ্ডন থেকেই ওই বৃদ্ধার ছেলে কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট খুঁজে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার ফোন নম্বর জোগাড় করেন।

ইস্পাতনগরী জামশেদপুরে এ সব ঘটনা রুখতেই জোট তৈরি হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থার প্রাক্তন এক আধিকারিকের নেতৃত্বে পাঁচ তরুণ-তরুণী কাজ শুরু করেছেন। ‘মাধব সেবা’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেছেন তাঁরা। জামশেদপুরের সোনারিতে অফিসও রয়েছে। নিজেদের মোবাইল নম্বর শহরের কয়েকজন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দিয়েছেন তাঁরা। সমস্যায় পড়লেই কোনও প্রবীণ নাগরিক সেই নম্বরে ফোন করলে সংস্থার সদস্যরা তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যান।

কী ভাবে সাহায্য করেন তাঁরা?

সংস্থাটি জানিয়েছে, বাজার থেকে শুরু করে বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া, ওষুধ এনে দেওয়া, পেনশন তুলে দেওয়া, কেউ শহরের বাইরে গেলে তাঁদের স্টেশনে কিংবা স্টেশন থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া---সব দায়িত্বই নিতে পারেন তাঁদের সদস্যরা। সুবিধা মেলে ২৪ ঘন্টাই।

সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাম্মি শ্রী কুমার। সদস্যরা হলেন রাজা ঘোষ, পিয়ালী চট্টোপাধ্যায়, মমতা যাদব, রাজা দাস এবং অজিতেশ কুমার। অজিতেশ একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অন্যান্যরা বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন। কুমার ছাড়া সকলেই তিরিশের মধ্যে।

সল্টলেকেও এমন পরিস্থিতি জেনে অবাক শ্রীকুমার। তাঁর কথায়, “জামশেদপুরের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে বাধ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা ফিরতে চান না। বৃদ্ধ বাবা-মা একা বাড়িতে পড়ে থাকেন। অসুস্থ হলেও কেউ দেখার নেই। তাই মনে হয়েছিল এই মানুষগুলির জন্য কিছু করা দরকার।” তিনি জানান, কাজের জন্য কোনও ‘সার্ভিস চার্জ’ নেওয়া হয় না। নিজেদের অন্য রোজগারেই সংসারের খরচ চলে যায়। দলের নবীন সদস্য পিয়ালীর কথায়, “বাড়িতে দাদু-দিদিমাকে দেখে বুঝেছি তাঁরা কত অসহায়। তাই কুমার স্যারের সঙ্গে কাজ করতে এসেছি।”

কুমারের ছেলেও চাকরিসূত্রে জামশেদপুরের বাইরে থাকেন। তাঁর আশা ছেলে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসবে। কিন্তু ছেলের মন বদল হলে? কুমারের কথায়, “মাধব সেবা তো রয়েছেই। বাকিটা ভগবানই দেখবেন।”

prabal gangyopadhyay ranchi jamshedpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy