Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক নয়, আলোচনাই চাই কাশ্মীর নিয়ে: মোদী

কাশ্মীর নিয়ে চড়া সুর নয়, সন্ত্রাস মোকাবিলা ও সকলের জন্য আর্থিক বিকাশের কথা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার মঞ্চে তাঁর বার্তা, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি তাঁর সরকার। কিন্তু সন্ত্রাসমুক্ত আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে ইসলামাবাদকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে কোনও লাভ হবে না।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
৯/১১ হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য মোদীর। গ্রাউন্ড জিরোতে শনিবার পিটিআইয়ের ছবি।

৯/১১ হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য মোদীর। গ্রাউন্ড জিরোতে শনিবার পিটিআইয়ের ছবি।

কাশ্মীর নিয়ে চড়া সুর নয়, সন্ত্রাস মোকাবিলা ও সকলের জন্য আর্থিক বিকাশের কথা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার মঞ্চে তাঁর বার্তা, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি তাঁর সরকার। কিন্তু সন্ত্রাসমুক্ত আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে ইসলামাবাদকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে কোনও লাভ হবে না।

শুক্রবার কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই মঞ্চেই সুর চড়িয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সম্প্রতি বাতিল হয়েছে ভারত-পাকিস্তান বিদেশসচিব স্তরের বৈঠক। তার কিছু দিন আগে থেকেই বেড়েছিল সীমান্তে পাক গোলাবর্ষণ ও জঙ্গি গতিবিধি। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শান্তি প্রক্রিয়ার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। বিদেশসচিব স্তরের বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি।

শুক্রবার পূর্বসূরিদের সুরে শরিফ জানান, আলোচনা বন্ধ হওয়ার জন্য ভারতই দায়ী। কাশ্মীর ভারত-পাক সম্পর্কের মূল বিষয়। তার উপরে পর্দা টেনে রাখা সম্ভব নয়। কাশ্মীরে গণভোট নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

এর পরে মোদীর বক্তৃতায় শরিফের বক্তব্যের কড়া জবাব আশা করেছিল কূটনৈতিক শিবির। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের অফিসাররা জানান, কাশ্মীর নিয়ে শীর্ষ স্তরে বাগ্যুদ্ধে জড়াতে আর রাজি নয় ভারত। শরিফের বার্তার সরাসরি জবাব তাই দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অভিষেক সিংহ। তিনি সাফ বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। ভবিষ্যতেও তাঁরা তাই করবেন। আমরা পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্য পুরোপুরি খারিজ করছি।”

কাশ্মীর নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীও, কিন্তু কিছুটা অন্য সুরে। মোদী জানান, বহুমেরু বিশ্বে বিশ্বাস করে ভারত। আর সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁর সরকার প্রথমেই প্রতিবেশীদের দিকে নজর দিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গেও আলোচনা চান তিনি। কাশ্মীরে বন্যাত্রাণের সময়ে তাই পাক-অধিকৃত অংশের মানুষের দিকেও হাত বাড়াতে চেয়েছিল ভারত। মোদীর কথায়, “কিন্তু সন্ত্রাসের ছায়ামুক্ত আলোচনার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা পাকিস্তানেরই দায়িত্ব। এই মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে কোনও লাভ হবে কি না তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে।” ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, বক্তব্যের এই অংশে এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যাত্রাণের জন্য পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রতি সহমর্মিতার কথা বলে তিনি পরোক্ষে বুঝিয়েছেন, গোটা কাশ্মীরই ভারতের। কাশ্মীর বিবাদের আন্তর্জাতিকীকরণে এখনও দিল্লির সায় নেই। আর আলোচনা শুরু নিয়ে বল ঠেলে দিয়েছেন পাকিস্তানের কোর্টে।

বিদেশ মন্ত্রকের অফিসাররা জানাচ্ছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জে শরিফ যে কাশ্মীর তাস খেলবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, ইতিমধ্যেই ভারত-পাক কূটনীতির একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শরিফের ভারতে আসা থেকে বিদেশসচিব স্তরের বৈঠক বাতিল-সৌজন্য থেকে বিরোধের পুরো পথ হেঁটেছে দিল্লি ও ইসলামাবাদ।

কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, শরিফের ভোলবদলের পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরির বিক্ষোভে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন শরিফ। সমস্যা মেটাতে তিনি সেনার সাহায্য চান। সেই সুযোগে তাঁকে ফের ভারত-বিরোধী সুর চড়াতে বাধ্য করে ফেলে পাক সেনা, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও মোল্লাতন্ত্র। জঙ্গিদের মদতদাতা এই শক্তিগুলি দিল্লি-ইসলামাবাদ শান্তি প্রক্রিয়ায় আদৌ খুশি ছিল না। শরিফ দুর্বল হওয়ায় ফের হাত শক্ত হয় তাদের। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জে শরিফের কাশ্মীর-বক্তৃতাকে বিশেষ আমল দিচ্ছে না সাউথ ব্লক।

কাশ্মীর নিয়ে সুর না চড়ালেও সন্ত্রাস নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন মোদী। তাঁর কথায়, “সন্ত্রাস নয়া চেহারায়, নয়া নামে মাথাচাড়া দিচ্ছে। অনেক দেশ এখনও সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।” সব দেশ এক সুরে কথা না বললে যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা সম্ভব নয় তা সাফ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় নীতির হাতিয়ারের কথা বলে যে তিনি পাকিস্তানকে ঠুকেছেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের। তেমনই ‘ভাল সন্ত্রাস, খারাপ সন্ত্রাস’-এর কথা বলে কটাক্ষ করেছেন আমেরিকাকেও। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে মার্কিন সেনা। তার আগে তালিবানের ‘ভালো অংশের’ সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিল ওয়াশিংটন। জঙ্গিদের মধ্যে ভাল-খারাপ খুঁজতে যাওয়া যে অর্থহীন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসের নয়া চেহারার কথা বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন পশ্চিম এশিয়ায় সক্রিয় আইএস জঙ্গিদের কথা। এই জঙ্গিরা ইরাকে যাঁদের অপহরণ করেছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয়রাও। ৩৯ জন ভারতীয়ের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে ইরাকে ফের সামরিক হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা।

সন্ত্রাসের পাশাপাশি আর্থিক বৃদ্ধিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো মঞ্চ থাকতে আমরা জি-এর পাশে দেশের সংখ্যা বসিয়ে একের পর এক মঞ্চ বানিয়ে চলেছি কেন? এখন জি-১ বা জি-অল-এর কথা ভাবার সময়।” উন্নত দেশগুলির জি-৮ মঞ্চের পাশাপাশি রয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বের মঞ্চ জি-২০। কিন্তু মোদী রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চকে ব্যবহার করে সকলের জন্য একই রকম আর্থিক উন্নতির কথা বলতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অটলবিহারী বাজপেয়ীর পরে রাষ্ট্রপুঞ্জে হিন্দিতে বক্তৃতা দিলেন দ্বিতীয় এক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বার্তা কি শুনতে চায় দুনিয়া? প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

narendra modi new york kashmir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy