Advertisement
E-Paper

উন্নয়নের খরচে ই-নজরদারি কেন্দ্রের

উন্নয়নের টাকা উৎসবে বা মেলায় অপচয় হচ্ছে কি না, এ বার সরাসরি সে দিকে নজর রাখবে অর্থ মন্ত্রক। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্যের ট্রেজারিগুলিকে জুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের অর্থ কখন, কোন খাতে খরচ হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রক তা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরে যাবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৪:১৬

উন্নয়নের টাকা উৎসবে বা মেলায় অপচয় হচ্ছে কি না, এ বার সরাসরি সে দিকে নজর রাখবে অর্থ মন্ত্রক।

তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্যের ট্রেজারিগুলিকে জুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের অর্থ কখন, কোন খাতে খরচ হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রক তা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরে যাবে। অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়সচিব রতন ওয়াটালের নির্দেশে এই ই-নজরদারির কাজ শুরু করেছেন নর্থ ব্লকের আমলারা।

চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলির হাতে বাড়তি অর্থ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের হাতেও বাড়তি অর্থ আসছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদী জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের থেকে রাজ্য পেয়েছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী পাঁচ বছরে পাবে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকা।

কিন্তু মমতার আমলেই একাধিক বার উন্নয়নের টাকায় উৎসব বা মেলা করার অভিযোগ উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই মাটি উৎসবের আয়োজন করেছিল রাজ্য। সেই উৎসবের টাকা এসেছিল ‘এগ্রিকালচার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’-র অর্থ থেকে। কম জল বা কম সারে চাষ করা শেখানোর জন্য রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র ওই অর্থ দেয়। গত কয়েক বছরে পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লবের জন্য দেওয়া কেন্দ্রীয় অর্থে মাটি উৎসব করেছিল মমতার সরকার। সিএজি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এ বার কৃষি উন্নয়নের অর্থে ওই উৎসব করা হয়েছে।

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বারবার দাবি করেছেন, বিপুল ঋণ শোধ করতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগারে উন্নয়নের টাকা থাকছে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের উৎসব, মেলা, হাজারো রকমের পুরস্কার, ক্লাবগুলির জন্য অনুদানে ভাটা পড়েনি। কখনও বাংলা সঙ্গীতমেলা, কখনও উত্তরবঙ্গ উৎসব, কখনও এই মাটি উৎসব। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, সঙ্গীত মহাসম্মানের মতো অজস্র নগদ আর্থিক পুরস্কার। এমনকী টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডও বিলোচ্ছে রাজ্য সরকার।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এক দিকে কিছু রাজ্যে উন্নয়নের অর্থে সস্তা জনমোহিনী রাজনীতি করার অভিযোগ উঠছে। অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, পরিকাঠামো তৈরির অর্থ বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে। উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অর্থ খরচ না হয়ে কখনও যেমন পড়ে থাকছে, তেমনই কোনও কোনও প্রকল্পে রাজ্যগুলি প্রথম কিস্তির টাকা খরচের শংসাপত্র দিতে না পারায় পরের কিস্তির টাকাই আর দেওয়া যায়নি। এ ছাড়া, এক খাতে দেওয়া অর্থ অন্য খাতে খরচও করে ফেলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই আয় বাড়তে চলেছে রাজ্যগুলির। এত দিন কেন্দ্রীয় করের ৩২ শতাংশ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে এ বার করের থেকে ৪২ শতাংশ তাদের দেওয়া হবে। রাজস্ব খাতে বরাদ্দের সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ সাহায্য ও অনুদান যোগ করলে রাজ্যগুলির হাতে কেন্দ্রের মোট আয়ের ৬২ শতাংশই চলে যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

কিন্তু এই বাড়তি অর্থ হাতে পেয়ে যথেচ্ছ খরচের প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। করের ভাগ বা অনুদান হিসেবে রাজ্যগুলিকে যে অর্থ দেওয়া হয়, তার উপর নজর রাখে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগের ‘প্ল্যান ফিনান্স’ দফতর। ওই দফতরের সঙ্গেই এ বার রাজ্যের ট্রেজারিগুলিকে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে অর্থ মন্ত্রকের আমলারা দফতরের কম্পিউটারে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন, পরিকল্পনা খাতে কোন রাজ্য কোথায় কত ব্যয় করছে।

চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই চিঠিতে তিনি বাড়তি অর্থ উন্নয়ন খাতেই ব্যয় করার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। ব্যয় বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কেন্দ্রের থেকে বাড়তি অর্থ পেয়ে রাজ্যগুলি যাতে তা বেতন-পেনশন বা মহার্ঘ ভাতা দিতে খরচ করে না ফেলে, তা-ও দেখতে হবে। এই বাড়তি অর্থ সামাজিক উন্নয়ন বা পরিকাঠামো তৈরিতেই আরও ভাল ভাবে ব্যয় হওয়া উচিত।”

information technology developement centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy