বড়োভূমির যে গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে একে-৪৭ থেকে গুলি চালিয়ে গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে এনডিএফবি জঙ্গিরা, সেই বালাপাড়ার দূরত্ব জলপাইগুড়ির কুমারগ্রাম থেকে বড়জোর ২৫ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গ ঘেঁষা অসমের কোকরাঝাড়ে এই ধরনের জঙ্গি হামলায় যখন চাপ বাড়ছে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে, তখন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) সম্পর্কে একটি নতুন তথ্য আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের। পুলিশের বক্তব্য, কেএলও এত দিন পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছিল। এ বার পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে হিংসাত্মক আন্দোলনে নামতে তাদের চাপ দিচ্ছেন চরমপন্থী আলফা নেতা পরেশ বরুয়া। ওই আন্দোলনে নামলে এক প্রতিবেশী দেশ অস্ত্র ও অর্থের জোগান দেবে, সেই আশ্বাসও দিচ্ছেন পরেশ।
কেএলও-র সাংগঠনিক সম্পাদক মালখান সিংহ ওরফে মাধব মণ্ডলকে জেরা করেই পরেশের বক্তব্য জানা গিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর। জেরায় মালখানের দাবি, ওই আলফা নেতা একটি প্রতিবেশী দেশে আত্মগোপন করে আছেন। ওই প্রতিবেশী দেশ গোড়া থেকেই আলফা-কে মদত দিয়ে আসছে বলে গোয়েন্দাদের বক্তব্য। তাঁদের দাবি, গোয়েন্দাদের মালখান বলেছেন, পরেশের সঙ্গে জীবন সিংহ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন। জীবনকে পরেশই জানিয়েছেন, ওই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও অর্থ সাহায্য পাওয়ায় কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু পৃথক রাজ্যের বদলে কেএলওকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিতে জঙ্গি আন্দোলনে ঝাঁপাতে হবে।
প্রসঙ্গত, আলফার আন্দোলন কিন্তু সার্বভৌম অসমের দাবিতেই।
উত্তরবঙ্গের ছ’টি ও নামনি অসমের চারটি জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবিকে সামনে রেখে ১৯৯৫ সালে কেএলও তৈরি হয়েছিল। ২০১৩-র মার্চে সংগঠনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরে নামনি অসমের আরও সাতটি জেলাকে প্রস্তাবিত কামতাপুর রাজ্যের মধ্যে অন্তর্গত করার দাবি তুলেছে কেএলও। কেএলও-র তদানীন্তন কমান্ডার-ইন-চিফ, এখন মূলস্রোতে ফিরে আসা মিল্টন বর্মা বলেন, “বরাবর পৃথক রাজ্যের দাবিতেই আমাদের আন্দোলন। কিন্তু নয়ের দশকেও কিছু দিনের জন্য আমরা রাষ্ট্রের দাবি তুলতে বাধ্য হয়েছিলাম আলফার চাপে। না হলে আলফা আমাদের আশ্রয় ও সাহায্য দিচ্ছিল না।” গত চার মাসের মধ্যে কেএলও-র একের পর এক শীর্ষ নেতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় এখন জীবন সিংহের উপর পরেশ বরুয়া ফের চাপ বাড়াচ্ছেন বলে মিল্টন মনে করেন।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, মালখান জানিয়েছেন, বর্তমানে কেএলও-র জঙ্গি শিবির চলছে মায়ানমারের কাচিনে এবং ওই তল্লাটে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি (কেআইএ) অনেকটা পরেশের কথাতেই কেএলও-কে সাহায্য করছে।
রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র এক কর্তা অবশ্য বলছেন, মালখানের আগে কেএলও নেতা টম, মনচলাল, ইকবাল সিদ্দিকি ও তরুণ থাপা ধরা পড়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই জেরায় পরেশের শর্তের কথা জানাননি। তাই মালখানের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ধৃত অন্য চার কেএলও নেতাকে ফের জেরা করা হবে। গোয়েন্দাদের একাংশের আশা, পরেশ বড়ুয়ার শর্ত জীবন সিংহ মেনে নিলে অর্থ-অস্ত্রের অভাব হয়তো হবে না, কিন্তু সেই শর্ত উত্তরবঙ্গের কেএলও জঙ্গিদের অনেকে মানতে না পেরে মূলস্রোতে ফিরে আসবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy