Advertisement
E-Paper

কোটি সদস্যে বাংলা দখলের ছক অমিতের

আগ্রাসন, আবেগ আর অঙ্ক এই তিন অস্ত্রেই পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এ মাসের শেষে কলকাতায় জনসভা করার কথা তাঁর। তার আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও রাজ্যের দায়িত্বে থাকা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী দিনের রণকৌশল চূড়ান্ত করে ফেলেছেন অমিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯

আগ্রাসন, আবেগ আর অঙ্ক এই তিন অস্ত্রেই পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এ মাসের শেষে কলকাতায় জনসভা করার কথা তাঁর। তার আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও রাজ্যের দায়িত্বে থাকা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী দিনের রণকৌশল চূড়ান্ত করে ফেলেছেন অমিত।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, দলের সভাপতি হওয়ার দু’মাসের মাথায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন অমিত। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা এই পরপর সফরেই স্পষ্ট। কাল রাতে রাহুল সিংহ ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। ৩০ নভেম্বর কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপির প্রস্তাবিত (এখনও এই সভার অনুমতি মেলেনি) সভার আগে অমিত শাহ দলের নেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল কী ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের মোকাবিলা করবে। বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের বক্তব্য, গত কাল রাতের বৈঠকে দলকে তিনি যে পাঁচমুখী কৌশল বাতলে দিয়েছেন, তার মধ্যে আগ্রাসন, আবেগ এবং অঙ্ক এই তিন অস্ত্রেরই মিশেল রয়েছে।

কী ভাবে? এক, অমিতের নির্দেশ, সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাব নিতে হবে দলের নেতা-কর্মীদের। সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার পর রাজ্য বিজেপি নেতাদের লক্ষ্য ছিল, দশ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ। দিল্লির চাপে সেটি বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ করা হবে বলে জানান রাহুল সিংহরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কর্পোরেট ভাবনা নিয়ে এগোনোর পক্ষপাতী অমিত। অর্থাৎ আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উঁচুতে বেঁধে দেওয়া। অমিত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে সদস্য সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যেতে হবে। বিজেপির এক শীর্ষ সূত্রের মতে, মাস কয়েক আগেও মনে করা হতো, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভাল ফল করবে ঠিকই, কিন্তু তার পরেও মমতা টিকে থাকবেন ক্ষমতায়। কিন্তু গত দু’মাসে পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। পশ্চিমবঙ্গে এখন বিজেপি একার জোরেই ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে আশা কেন্দ্রীয় নেতাদের। সেই মনোভাব নিয়েই রাজ্য নেতৃত্বকে ঝাঁপাতে হবে। বড় লক্ষ্যের পিছনে দৌড়তে হবে।

দুই, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, মমতা এখন বুঝেছেন যে, তাঁর পায়ের তলায় জমি সরছে। তৃণমূল থেকে দলে দলে লোক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। এমনকী সংখ্যালঘুরাও। বাঁচার দায়ে মমতা তাই কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন, এমনকী সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতার পথও খোলা রাখছেন। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, তাঁদের ঠেকাতে কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা যত বাড়বে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন তত তাঁদের দিকে ঝুঁকবে। অমিতের পরামর্শ, সেই আবেগ পুঁজি করেই বিজেপিকে নিজেদের তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে হবে।

তিন, বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার জন্য বিজেপি কর্মীদের এখন থেকেই জনসংযোগ বাড়াতে হবে। অমিতের নির্দেশ, মানুষকে বোঝাতে হবে, কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপির সরকার হলে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। বামেদের তিন দশক ও মমতা জমানায় উন্নয়ন একেবারে থমকে গিয়েছে। এর জন্য নরেন্দ্র মোদীর কর্মসূচিও বেশি করে পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কাছে।

চার, এখন থেকেই ভোটের অঙ্ক কষা শুরু করতে হবে। ভোট জেতার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল বুথ আগলে রাখা। অমিতের নির্দেশ, রাজ্যের ৭৭ হাজারের বেশি বুথে অবিলম্বে ‘বুথ রক্ষা বাহিনী’ গড়তে হবে। এখনও যে সব জায়গায় বুথ সংগঠন দুর্বল, দ্রুত সেখানে সংগঠন বাড়াতে হবে। উপনির্বাচনে বুথ আগলেই শাসক দলের সঙ্গে টক্কর নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ বার গোটা রাজ্যে একই কৌশল নিতে হবে।

পাঁচ, বড় বড় নেতাদের ২-৩টি সংসদীয় কেন্দ্রের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে এখন থেকেই সেখানে ঘাঁটি গাড়া। এই নেতারা সবাই রাজ্যের হবেন, তার মানে নেই। এই নেতাদের দায়িত্ব হবে, পুরো বিষয়টির উপরে নজর রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবগত করা।

এ সবের পাশাপাশি অন্য দলের যে সব নেতারা বিজেপিতে আসার জন্য তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁদের দ্রুত দলে টানতে নির্দেশ দিয়েছেন অমিত। শুধু তাই নয়, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেদের দলে টানার যে প্রক্রিয়া বাংলায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, তাকে আরও গতি দিতে বলেছেন তিনি।

৩০ নভেম্বর কলকাতায় অমিত শাহ যে সভা করবেন, তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দল। সরকারি ভাবে ওই দিন কলকাতায় ৫ লক্ষ মানুষের জমায়েত করতে চায় দল। সেই মর্মে নির্দেশও পাঠানো হয়েছে জেলায় জেলায়। যদিও বিজেপিরই একটি সূত্রের বক্তব্য, কলকাতায় বিজেপি যদি একক ভাবে দেড় লক্ষেরও জমায়েত করতে পারে, তা হলেও সেটাকে বিরাট সাফল্য হিসেবেই দেখা হবে।

বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, মমতাকে আক্রমণের জন্য মূলত চারটি বিষয়কে সামনে রাখা হবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনুপ্রবেশ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা। সে জন্য বিজেপির পাশাপাশি মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারও। আরএসএস-এর মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনিতে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনাটি তুলে ধরে নিবন্ধটির নাম দিয়েছে ‘জিহাদিদি’!

নামেই বক্তব্য স্পষ্ট। নিবন্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বাংলাদেশের জামাত জঙ্গি এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেনের রাজনীতি রয়েছে। জামাত যেমন তৃণমূলকে সংখ্যালঘু ভোটের ব্যবস্থা করে দিয়ে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে, তেমনই মমতাও জামাত নেতাদের সন্ত্রাসের কারখানা চালু রাখার জন্য অর্থ এবং সব রকম সহায়তা দিয়েছেন। আরএসএস মুখপত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে গদিচ্যুত করার জন্য জামাতের ষড়যন্ত্রে পরোক্ষ ভাবে মদত দিয়েছেন মমতা। এবং দিয়েছেন নিজের রাজনৈতিক প্রয়োজনেই।

পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিকে জামাত জঙ্গিদের ঘাঁটি বানানোর অভিযোগ নিয়ে কিছু দিন ধরেই তোলপাড় চলছে রাজনীতিতে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ঢাকা ভারতের কাছে রিপোর্টও চেয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মমতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করেছেন। তবে প্রশাসনিক স্তরে মোকাবিলা করার পাশাপাশি ‘অর্গানাইজারে’ প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করায় একটি বিষয় স্পষ্ট। ভবিষ্যতে বিজেপি যে সংখ্যালঘু রাজনীতির বিষয়টি নিয়ে মমতার বিরুদ্ধে উচ্চগ্রামে যাবে, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন অবশ্য এই অভিযোগকে আদৌ গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর কথায়, “ভারতের সামগ্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আরএসএস। বিজেপি যদি মুখ হয়, আরএসএস হল আসল চালিকাশক্তি। পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চলছে।”

bjp amit shah west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy