চিনা সেনার অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে ক’দিন আগে পর্যন্ত অশান্তির আবহ ছিল সীমান্তে। এমনকী চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের ভারত সফরের সময়েও অনুপ্রবেশ হয়েছে। তা নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে বিপাকেও পড়তে হয়েছে বিজেপিকে। তার পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে বেজিংয়ে আমন্ত্রণ জানাল চিনা কমিউনিস্ট পার্টি।
ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির বরাবরই যোগাযোগ ছিল। এক সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট নেতারাও চিনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তবে এ বার ভারত সফরে এসে চিনা প্রেসিডেন্ট কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তা নিয়ে কমিউনিস্ট শিবিরে কিছুটা হতাশাও দেখা দেয়। কংগ্রেসের সঙ্গেও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক বহু পুরনো।
কিন্তু বিজেপি-র সঙ্গে চিনা কমিউনিস্টদের এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ আগে ছিল না। অটলবিহারী বাজপেয়ীর বেজিং সফরে কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ অনেকটাই গলেছিল। আবার লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন বিজেপি সভাপতি ছিলেন, তখন বিজেপি-র বৈদেশিক বিষয়ক শাখার অন্যতম সদস্য জনা কৃষ্ণমূর্তিকে বেজিংয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, অতীতের এই সব ঘটনার সঙ্গে অমিত শাহকে নিমন্ত্রণ জানানোর মৌলিক ফারাক রয়েছে। কেন্দ্রে বিজেপি-র এখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কোনও রকম শরিকি বাধ্যবাধকতা এই সরকারের নেই। তাই কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুর্বলতাও এই সরকারের থাকার কথা নয়। সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে, সীমান্ত দিয়ে বার বার অনুপ্রবেশের ঘটনার বিরুদ্ধে বিজেপি-র কঠোর এবং অনমনীয় মনোভাবই দেখাচ্ছে। কূটনীতিকদের মতে, এই সময়ে অমিতকে নিমন্ত্রণ করে হয়তো পার্টিস্তরে বিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করছে বেজিং। কূটনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই ‘ট্র্যাক ২’ বা দ্বিতীয় পথে আলোচনা চালানো হয়। বেজিং অমিতকে নিমন্ত্রণ করে সে পথেই হাঁটতে চাইছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, সম্ভবত ডিসেম্বরে বেজিং সফরে যাবেন দলীয় সভাপতি। তবে তাঁর সফরের জমি তৈরি করতে আগে চিনে যাচ্ছে দলের এক প্রতিনিধি দল। আগামিকাল রওনা দিচ্ছে ওই দলটি। নেতৃত্বে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। প্রতিবেশী দু’দেশের দুই শাসক দলের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের সেই আলোচনার পরেই অমিত শাহ বেজিং পাড়ি দেবেন।
সাউথ ব্লকের এক কূটনীতিকের মতে, নয়াদিল্লিতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে চিন যে সুষ্ঠু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে তার প্রতিফলন রয়েছে এর মধ্যে। তাই তারা ‘পার্টি টু পার্টি’ যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাইছে। বেজিংয়ের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি ‘মেকানিজম’-এ এখন ভারতের কোনও প্রতিনিধি নেই। শিবশঙ্কর মেনন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে আলোচনায় কোনও মধ্যস্থতাকারীও নিয়োগ হয়নি। এই অবস্থায় রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু হওয়াও ইতিবাচক।
তবে বিজেপি সূত্র বলছে, এর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ও রয়েছে। সিদ্ধার্থনাথ সিংহের নেতৃত্বাধীন দলটি হ্যাংঝৌ, চুংকিং ও সাংহাইতে যাবেন। চিনের শিল্প ও বণিক মহলের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলবেন। শিল্পে বিনিয়োগের জন্য বেজিং কেমন ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ শুরু করেছে তাও বোঝার চেষ্টা করবে বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। সিদ্ধার্থ আজ জানান, রাজনৈতিক দলের পর্যায়ে এই আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে সাহায্য করবে বলেই তাঁদের ধারণা। তা ছাড়া চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং তাঁর ভারত সফরের সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছিলেন, চিন কী ভাবে আধুনিক শহর তৈরি করেছে তা দেখতে বিজেপি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে। ভারতে নগরায়নের জন্য আসন্ন এই সফরের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy