মোদীময় দিল্লি। ছবি: পিটিআই
যমুনা সেতু পেরিয়ে ব্যস্ত আইটিও বরাবর রফি মার্গে আনন্দবাজারের দফতরে আসার পথে অন্তত ছ’টি বড় ট্র্যাফিক-বাতি। সেখানে দিনে সিগন্যাল লাল হলেই কলম থেকে পেপারব্যাক নিয়ে থেমে থাকা গাড়ির দিকে ছুটে আসেন বিক্রেতারা। রাতে তাঁদের হাতে থাকে বেল-জুঁই।
এটাই প্রত্যেক দিনের পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু বিজেপি-সুনামি পাল্টে দিয়েছে সেই চেনা ছবিটা।
এখনও ছুটে আসছেন বিক্রেতারা। কিন্তু তাঁদের হাতে রয়েছে স্থলপদ্ম! সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাচ্ছে কাচ। নিমেষে গাড়ির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কমল!
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ব্র্যান্ড ভারতকে বিশ্ব বাজারে কতটা তুলে ধরতে পারবেন, তা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু দিল্লিতে এখন একটি ব্যাপার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তা হল, ফল ঘোষণার পরে মোদী-ঝড় প্রভাব ফেলেছে বাজারেও। গোটা শহর বিজেপি তথা মোদীকে সামনে রেখে মেতে উঠেছে বিপণন-উৎসবে। ভোটের ফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে থেকেই যা শুরু হয়েছে। আপাতত তা কমার কোনও লক্ষণ নেই।
যেমন বাবা খড়্গসিংহ মার্গের গুজরাতি এম্পোরিয়ামগুলি ভোট চলাকালীন একটি প্ল্যাকার্ড বাইরে থেকে ভিতরে ঢুকিয়ে রেখেছিল। নির্বাচন কমিশন যদি কোনও সমস্যা তৈরি করে? কাল থেকে সেই প্ল্যাকার্ডটি আবার বাইরে। যেখানে বড় করে লেখা ‘মোদী কুর্তা।’ শুধু গুজরাত নয়, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, এমনকী দিল্লির সরকারি এম্পোরিয়ামগুলিতেও হই হই করে বিক্রি হচ্ছে কনুই পর্যন্ত লম্বা সুতির কুর্তা। ঠিক যেমনটি পরেন মোদী। এক এম্পোরিয়াম কর্তা রাজরানী শর্মা জানান, প্রতি ১০টির মধ্যে সাতটি বিক্রি হচ্ছে মোদী-কুর্তা। অল্পবয়েসি ছাত্রদের মধ্যে এর চাহিদা সব চেয়ে বেশি। মোদীর ব্যক্তিত্ব, তাঁর সাধারণ অবস্থা থেকে শীর্ষে উঠে আসার ইতিহাসও ধরা আছে এই কুর্তায়। রাজরানীর কথায়, “মোদী নিজেই জানিয়েছেন, উনি খুব সাধারণ ভাবে বড় হয়েছেন। বাড়ির কাজের জন্য কাউকে মাইনে দিয়ে রাখার সামর্থ্য ছিল না। এই কুর্তাগুলির সুবিধা হল, চটপট কাচা-ধোওয়া হয়ে যায়। দামেও সস্তা।”
শুধু মোদী-কুর্তা নয়, মাথাব্যথার মলম থেকে টি শার্ট, প্যারাসিটামল থেকে বিয়ার মাগ, মোবাইল থেকে খেলনা, বেডকভার থেকে নরম পানীয় সর্বত্র মোদী। অনলাইনে চাঙ্গা হয়েছে মোদী-পণ্যের বিপণন। বাজার বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই মুহূর্তে মোদীকে কেন্দ্র করে যে পণ্য বাজারে রয়েছে, তার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা!
এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ ভাবে পণ্যের উৎসব কি দেখা গিয়েছে? মনমোহন সিংহের ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই নেই। অটলবিহারী বাজপেয়ী, নরসিংহ রাও, রাজীব গাঁধী? রাজধানীর রাজনৈতিক অলিন্দ বলছে, না, অতীতে এমন ঘটনার কোনও নজির নেই।
অশোক রোডের বিজেপি সদর দফতরও কাল ছিল মোদীময়। সকাল ন’টা থেকেই কাড়া-নাকাড়া-তাসা, ব্যান্ডপার্টি আবির, পটকা আর উদ্দাম নৃত্য। প্রীতবিহার থেকে বিজেপি-র এক নেতা তথা ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সিংহ আবার ভাড়া করে নিয়ে আসেন এক পাল হাতি! বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উল্লাসের মধ্যে যারা হতভম্ব হয়ে কান চুলকোচ্ছিল শুঁড় দিয়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy