Advertisement
E-Paper

কুয়াশায় খোঁড়া ড্রিমলাইনার, ভুগল অন্যেরাও

এত দিন সংস্থার সব চেয়ে দামি বিমান বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ড্রিমলাইনারের প্রচার চালিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু এ বার তারাই জানিয়ে দিল, সেই দামি উড়ান কুয়াশায় চালানো যাবে না। কুয়াশা যে ওই মহার্ঘ বিমানের পথের কাঁটা, সদ্য সদ্য তার তিনটি দৃষ্টান্ত মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮

এত দিন সংস্থার সব চেয়ে দামি বিমান বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ড্রিমলাইনারের প্রচার চালিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু এ বার তারাই জানিয়ে দিল, সেই দামি উড়ান কুয়াশায় চালানো যাবে না।

কুয়াশা যে ওই মহার্ঘ বিমানের পথের কাঁটা, সদ্য সদ্য তার তিনটি দৃষ্টান্ত মিলেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ২১৮ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল ড্রিমলাইনার ৭০১ উড়ানের। শেষ পর্যন্ত সেই উড়ান ছাড়ে রাত ৯টা নাগাদ। দিল্লির কাছাকাছি গিয়ে ড্রিমলাইনারের পাইলট যাত্রীদের জানিয়ে দেন, কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে গিয়েছে। তাই নামা যাবে না। বিমানটি ফিরে আসে কলকাতায়। ওই রাতেই রোম আর ফ্র্যাঙ্কফুর্ট থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারের নামার কথা ছিল দিল্লিতে। কুয়াশার জন্য নামতে পারেনি তারাও। মুখ ঘুরিয়ে মুম্বই চলে যায় দু’টি উড়ানই।

নিজে তো কুয়াশায় খোঁড়া বটেই। অন্যান্য উড়ানের দেরির দায়ভারও চাপছে ড্রিমলাইনারের কাঁধে। এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লিমুখী অন্যান্য বিমান বৃহস্পতিবার গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, ড্রিমলাইনার কুয়াশার জন্য নামতে পারছে না। আর তার জেরেই যাবতীয় উড়ান-সূচি ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। সকাল ১০টার দিল্লিমুখী উড়ান ছাড়ে বেলা সওয়া ২টোয়। বিকেল সাড়ে ৫টার উড়ান ছাড়তে সন্ধ্যা ৭টা হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, বিমানকর্মী না-থাকাতেই এই বিপত্তি। কিন্তু বিমানকর্মীর অভাব মানতে অস্বীকার করেছেন এয়ার ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষ।

এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, কুয়াশার জেরেই অন্যান্য জায়গা থেকে বিমান কলকাতায় আসতে দেরি করছে। তাই কলকাতা থেকেও বিমানের উড়তে দেরি হচ্ছে। কম দৃশ্যমানতা সত্ত্বেও বিমান যাতে নির্বিঘ্নে নামতে পারে, তার জন্য দিল্লি বিমানবন্দরে ক্যাট ৩বি প্রযুক্তি আছে। তার সাহায্যে নামতে গেলে পাইলটকে দীর্ঘ পৃথক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তার পরে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট বিমান এবং তার পাইলটকে ওই প্রযুক্তির সাহায্যে অবতরণের অনুমতি দেয়। কিন্তু মুশকিল হল, স্প্ন-উড়ান ড্রিমলাইনারে সেই ক্যাট ৩বি প্রযুক্তির অনুকূল ব্যবস্থা নেই!

দিল্লিতে কুয়াশার জন্য সব থেকে বেশি উড়ান-বিভ্রাট হয়। সেখানে ক্যাট ৩বি-র অনুকূল না-হওয়া সত্ত্বেও ড্রিমলাইনার চালানো হচ্ছে কেন?

এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানান, চলতি বছরেই ড্রিমলাইনার নিয়ে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখন দেশ-বিদেশে ১৭টি ড্রিমলাইনার চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। সমস্যা হচ্ছে সব জায়গাতেই। ওই মুখপাত্র বলেন, “ড্রিমলাইনারগুলি এখন ডিজিসিএ-র ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা কিছু বোয়িং-৭৭৭ আনাচ্ছি। সেগুলি ক্যাট ৩বি-র সঙ্গে সঙ্গে ক্যাট ৩সি প্রযুক্তির অনুকূল। তাই কুয়াশায় সেগুলির নামতে সমস্যা হবে না।”

কুয়াশাই অবশ্য ড্রিমলাইনারের একমাত্র কাঁটা নয়। নানা কারণেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উচ্চকোটির এই বিমানের যাত্রীদের। বিমানসেবিকা না-থাকায় সম্প্রতি কলকাতা-দিল্লি রুটে পরপর দু’টি উড়ান বাতিল করে এয়ার ইন্ডিয়া। তার মধ্যে একটি ছিল ড্রিমলাইনার, অন্যটি এয়ারবাস-৩২১। সেই ঘটনায় বহু যাত্রীকে রাতভর কলকাতা বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়। পরের দিন ভোরে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৭৭ বিমানে সেবিকা এনে দু’টি বাতিল উড়ানের যাত্রীদের দিল্লি পাঠানো হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার যুক্তি ছিল, সেবিকারা ‘রিফ্রেশার কোর্স’ করছেন। সেবিকা-ঘাটতি সেই জন্যই।

এয়ার ইন্ডিয়া যে-যুক্তিই দেখাক, সমস্যা কমেনি যাত্রীদের। বুধবার কুয়াশায় দিল্লি পৌঁছতে না-পেরে অনেকেই সেখান থেকে বিদেশমুখী উড়ান ধরতে পারেননি। ভেস্তে যায় পর্যটক যাত্রীদের ঘোরার পরিকল্পনাও। বুধবার দিল্লি হয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল সৃজা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর আত্মীয়দের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে বসে তিনি বলেন, “দিন কয়েক ছুটি নিয়ে এসেছি সকলেই। বুধবার হোটেলের ঘর, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়া করা ছিল। টাকা তো গেলই। শুরুতেই দু’টো দিন নষ্ট হওয়ায় বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি!”

dreamliner flight fog
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy