ফের নিগ্রহের শিকার উত্তর-পূর্বের ছাত্র। দিল্লির নিদো তানিয়ার মতো মৃত্যু না-হলেও, গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল তাঁকে। ঘটনাস্থল এ বার বেঙ্গালুরু।
মঙ্গলবার রাতে শহরের কোঠানুর এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় মাইকেল লামদাথাং হাওকিপ নামের ওই মণিপুরী তরুণের উপর চড়াও হয় স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। কন্নড় বলতে না পারায় বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। কপালে, মাথার পিছনে, ঘাড়ে ও পিঠে চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাইকেল। তবে তিনি বিপন্মুক্ত। হামলাকারীদের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বছর ছাব্বিশের মাইকেল বেঙ্গালুরুর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। কলেজের মণিপুরী ছাত্র সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট-ও তিনি। মঙ্গলবার বেশি রাতে দুই বন্ধুর সঙ্গে কোঠানুরের রেস্তোরাঁটিতে খাবার কিনতে গিয়েছিলেন। মাইকেল ও তাঁর বন্ধুদের ইংরেজিতে কথা বলতে শুনে এগিয়ে আসে কয়েক জন। কন্নড় ভাষায় প্রথমে তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়। মাইকেলরা না সরলে তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে ওই কয়েক জন। পাশাপাশি চলতে থাকে কটূক্তি। বাকি দু’জন পালিয়ে বাঁচলেও রোষের মুখে পড়ে যান মাইকেল। বাধা দিতে গেলে বলা হয়, “বাইরে থেকে এসে যদি কর্নাটকে থাকতে পারো, কর্নাটকে তৈরি খাবার খেতে পারো, তা হলে কন্নড় ভাষাও জানা উচিত তোমাদের। চিন নয়। এটা ভারত।” ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাকিদের ভূমিকা তখন নির্বাক দর্শকের মতোই।
ঘটনাচক্রে সে সময় রেস্তোরাঁটিতে পৌঁছন মণিপুরেরই আর এক যুবক। তাঁর বাইকে চেপে স্থানীয় থানায় গিয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নিগ্রহের মামলা করেন মাইকেল। মাইকেলকে তাড়া করে থানা পর্যন্তও পৌঁছে যায় হামলাকারীরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মেরি কম। মঙ্গলবারের ঘটনার নিন্দায় তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য ঐক্য এবং শান্তি বজায় রাখা উচিত দেশে।” বেঙ্গালুরুর যে এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে সেখানে মূলত দেশ-বিদেশ থেকে আসা পড়ুয়ারাই থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগই উত্তর-পূর্ব ভারত এবং আফ্রিকার বাসিন্দা। মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অলোক কুমার জানিয়েছেন, জাতি বিদ্বেষ না নিছকই মদ্যপ অবস্থায় এই আক্রমণ তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এর আগে গত মে মাসে দিল্লিতে শ্লীলতাহানির সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কোর্ট চত্বরেই অভিযুক্তের বন্ধুদের হাতে মার খান এক নাগা তরুণী। রেহাই পাননি তাঁর পুরুষবন্ধু এবং মহিলা আইনজীবীও। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দিল্লিতে পিটিয়ে মারা হয়েছিল অরুণাচলের বাসিন্দা, বছর কুড়ির নিদো তানিয়াকে। এর পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি যে বদলায়নি, এই ঘটনা তা প্রমাণ করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy