Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ছক ভাঙবে কি, আজ বসছে বিজেপি

হরিয়ানা না মহারাষ্ট্র? ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের জন্য কোন রাজ্যকে ‘মডেল’ করা হবে, সেটাই এখন চিন্তা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের। আসলে মোদী-অমিতদের যাবতীয় অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে দলের আদিবাসী মুখ তথা তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার অপ্রত্যাশিত হার। রাজ্যে প্রবল বিজেপি হাওয়াতেও নিজের দীর্ঘদিনের ‘গড়’ খরসোয়াঁ কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন এই উপজাতি নেতা। আর তাতেই ঝাড়খণ্ডের কুর্সি নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ হাতে এসেছে মোদী-অমিত শাহদের।

মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা বিজেপি নেতা রঘুবর দাসকে ঘিরে উল্লাস। মঙ্গলবার জামশেদপুরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা বিজেপি নেতা রঘুবর দাসকে ঘিরে উল্লাস। মঙ্গলবার জামশেদপুরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

হরিয়ানা না মহারাষ্ট্র? ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের জন্য কোন রাজ্যকে ‘মডেল’ করা হবে, সেটাই এখন চিন্তা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের।

আসলে মোদী-অমিতদের যাবতীয় অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে দলের আদিবাসী মুখ তথা তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার অপ্রত্যাশিত হার। রাজ্যে প্রবল বিজেপি হাওয়াতেও নিজের দীর্ঘদিনের ‘গড়’ খরসোয়াঁ কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন এই উপজাতি নেতা। আর তাতেই ঝাড়খণ্ডের কুর্সি নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ হাতে এসেছে মোদী-অমিত শাহদের।

হরিয়ানা বিধানসভায় বিপুল জয়ের পরে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে গিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ভেঙে দিয়েছেন দীর্ঘদিনের জাঠ-আধিপত্যের বিষয়টি। মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নিয়েছেন অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খাট্টারকে। ঝাড়খণ্ডে দলের একাংশের দাবি, হরিয়ানা-ফর্মুলা মেনে অনুপজাতির কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। কিন্তু আদিবাসী প্রধান ঝাড়খণ্ডে অনুপজাতি কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে তা আখেরে ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে ফিরে আসবে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন দলের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে বিরোধীরা ‘আদিবাসী-বঞ্চনার’ বাড়তি অস্ত্র হাতে পেয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে মোদী-অমিতের সামনে রয়েছে মহারাষ্ট্র-মডেল। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কোনও নতুন আদিবাসী নেতাকে তুলে আনা।

আগামী কাল দিল্লিতে বিজেপি সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে ঝাড়খণ্ডের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত হওয়ার কথা। প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আলোচনায় উঠে আসছে অনুপজাতি নেতা তথা প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস এবং প্রাক্তন স্পিকার চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিংহের নাম। উঠেছে রাজমহল থেকে নির্বাচিত প্রথম বারের বিধায়ক অনন্ত ওঝার নাম। অন্য দিকে, উপজাতি নেতা হিসেবে তালিকায় রয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদর্শন ভগত এবং গুমলা থেকে নির্বাচিত প্রথম বারের বিধায়ক শিবশঙ্কর ওরাঁও-এর নাম।

ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পর, গত ১৪ বছরে এই প্রথম কোনও প্রাক্-নির্বাচনী জোট বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। তবে ফলাফল বলছে, বিজেপির সঙ্গে তাদের একমাত্র শরিক আজসু-র ফারাক এতটাই যে, মুখ্যমন্ত্রী মনোনয়নের ব্যাপারে জোট শরিকের চাপের মুখে পড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। রয়েছেন একাধিক নির্দলও।

ঝাড়খণ্ডে ১৪ বছরের মধ্যে বিজেপি সব মিলিয়ে ন’বছর ক্ষমতায় থেকেছে। তার মধ্যে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হন অর্জুন মুন্ডা। কিন্তু অর্জুনের নেতৃত্ব রাজ্যকে দিশা দেখাতে পারেনি বলে নির্বাচনের আগেই শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির অনুপজাতি নেতাদের একাংশ। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘আদিবাসীরাই এ রাজ্যে আদিবাসীদের পিছিয়ে দিয়েছেন! মাওবাদীরা সব থেকে বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে এক শ্রেণির আদিবাসী নেতার থেকে! তাই এ বার বদলের কথা ভাবা হচ্ছে।”

ফলপ্রকাশের আগে থেকেই ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অর্জুন মুন্ডা, নিরসার প্রার্থী গণেশ মিশ্র, বহোরাগোড়ার প্রার্থী দীনেশানন্দ গোস্বামী, জামশেদপুর (পূর্ব)-র রঘুবর দাস এবং জামশেদপুর (পশ্চিম) এর সরযূ রাইয়ের নাম বিজেপির বিভিন্ন শিবির থেকে ভাসানো হচ্ছিল। শেষ দু’জন ছাড়া প্রত্যেকেই হেরে গিয়েছেন। তবে সরযূ রাইয়ের নাম খারিজ করে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদেরই একাংশ। তুলনায় মুখ্যমন্ত্রী পদে রঘুবরের সম্ভাবনা বেশি।

জাতিতে বৈশ্য বা বণিক সম্প্রদায়ের নেতা রঘুবরের পিঠে সঙ্ঘের ছাপ রয়েছে। তিনি একই সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। উঠে আসছে রাঁচি থেকে নির্বাচিত দলের রাজপুত নেতা তথা প্রাক্তন স্পিকার চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিংহের নামও। শোনা গিয়েছে আরও একটি নাম। এবং তিনিও অনুপজাতি সম্প্রদায়ের। জাতিতে ব্রাহ্মণ, অনন্ত ওঝা। রাজমহলের বিজেপি বিধায়ক অরুণ মণ্ডলকে সরিয়ে অনন্ত ওঝাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রাজ্য নেতাদের দাবি, ওঝা সঙ্ঘের খুবই ঘনিষ্ঠ।

মাথায় রাখতে হচ্ছে উপজাতি নেতাদের নামও। এ ক্ষেত্রে দু’টি নাম নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। এক জন সুদর্শন ভগত, মোদী মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা যায় কিনা, তা নিয়ে কথা চলছে। তবে আপত্তি দলেরই একটি অংশের।

এবং শিবশঙ্কর ওঁরাও। অনেকের চোখে কালো ঘোড়া এখন শিবশঙ্করই। কিন্তু প্রথম বারের বিধায়ককেই মুখ্যমন্ত্রী পদে? অনেকের কপালে ভাঁজ পড়লেও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীকে মোদী-অমিতরা যথেষ্টই পছন্দ করেন। সঙ্ঘের ছাড়পত্রও তাঁর আছে। এক বিজেপি নেতার কথায়, “শিবশঙ্কর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং চিন্তাভাবনাও স্বচ্ছ। ভাল কথা বলেন।”

এবং এটাই শিবশঙ্করের পক্ষে সবচেয়ে বড় বাজি হতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপির একাংশ। মহারাষ্ট্রে যে ভাবে দেবেন্দ্র ফডনবীশকে তুলে এনে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, তেমনই ঝাড়খণ্ডে শিবশঙ্করকে রাজ্য চালানোর ভার দেওয়া হতেই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prabal gangyopadhyay jharkhand assembly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE