Advertisement
E-Paper

জিতবে কী করে, বন্ধু রাজার প্রশ্ন রাহুল-সনিয়াকে

বাবা-মায়ের সঙ্গে পাটিয়ালার মহারাজের বন্ধুত্ব আশৈশব দেখে এসেছেন তিনি। এতটাই ঘনিষ্ঠ সেই বন্ধুত্ব যে, তাঁর মাকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ‘সনিয়া’ বলেই ডাকেন প্রবীণ মহারাজ। আজ বাড়ি বয়ে এসে মায়ের সামনেই রাহুল গাঁধীর দল চালানো নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলেন তিনি। পাটিয়ালার মহারাজ, প্রাক্তন সেনা-ক্যাপ্টেন এবং লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা অমরেন্দ্র সিংহ তাঁর দলের তরুণ সহ-সভাপতিকে আজ যা বলেছেন তার নির্যাস ‘হয় পঞ্জাবের প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে প্রতাপ সিংহ বাজওয়াকে সরাও, নইলে ভোটে জেতার কথা ভুলে যাও!’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
অমরেন্দ্র সিংহ

অমরেন্দ্র সিংহ

বাবা-মায়ের সঙ্গে পাটিয়ালার মহারাজের বন্ধুত্ব আশৈশব দেখে এসেছেন তিনি। এতটাই ঘনিষ্ঠ সেই বন্ধুত্ব যে, তাঁর মাকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ‘সনিয়া’ বলেই ডাকেন প্রবীণ মহারাজ। আজ বাড়ি বয়ে এসে মায়ের সামনেই রাহুল গাঁধীর দল চালানো নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলেন তিনি। পাটিয়ালার মহারাজ, প্রাক্তন সেনা-ক্যাপ্টেন এবং লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা অমরেন্দ্র সিংহ তাঁর দলের তরুণ সহ-সভাপতিকে আজ যা বলেছেন তার নির্যাস ‘হয় পঞ্জাবের প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে প্রতাপ সিংহ বাজওয়াকে সরাও, নইলে ভোটে জেতার কথা ভুলে যাও!’

ভোটে ভরাডুবি ইস্তক রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা হয়েছে অনেক! কিন্তু সহ-সভাপতির মুখের ওপর প্রশ্ন তোলেননি কেউ। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, বাজওয়া উপলক্ষ মাত্র। আসলে দশ জনপথের দুর্গে ঢুকে বিদ্রোহের শিঙা ফুঁকে দিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন। বাজওয়াকে প্রদেশ সভাপতি করেছিলেন রাহুল নিজে। তাই প্রদেশ সভাপতির প্রতি অনাস্থা মানে রাহুলের কর্তৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা।

কেন এই বিস্ফোরণটা ঘটালেন অমরেন্দ্র? অনেকে বলছেন, নিছক বিদ্রোহ ঘোষণার জন্য আজ দশ জনপথে আসেননি তিনি। বরং পঞ্জাবের বর্তমান রাজ্য-রাজনীতির হাওয়া বুঝেই কথাগুলো বলেছেন। নিজে দু’দফায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দু’দফায় প্রদেশ সভাপতি। লোকসভা ভোটে মোদী-ঝড়ে যখন কংগ্রেসের শেকড় নড়বড়, তখনও অমৃতসরে অরুণ জেটলিকে হারিয়েছেন। অমরেন্দ্র জানেন, রাজ্যে কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরার এখনই একটা ক্ষীণ সুযোগ রয়েছে। আর এটাই সেই সময়।

এক দিকে দুঁদে রাজনীতিকের বিশ্লেষণ, অন্য দিকে রাজার মেজাজ। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। অমরেন্দ্রর আজকের মুখ খোলায় এই দুইয়েরই ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ৭২ বছরে পৌঁছে শরীরের বাঁধন কিছুটা শিথিল হলেও পাকানো গোঁফ আর গালপাট্টায় এখনও তাঁর চেহারা সম্ভ্রম জাগায়। ’৬৫-র পাকিস্তান যুদ্ধে লড়েছেন। আবার মুখ্যমন্ত্রিত্ব যখন করেছেন, তখন পাটিয়ালার প্রাসাদের উঠোন থেকে নিত্য চণ্ডীগড়ের সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা দিত তাঁর হেলিকপ্টার। অমরেন্দ্র আতিথেয়তায় বহু দিন পাটিয়ালা প্রাসাদে কাটিয়েছেন রাজীব ও সনিয়া গাঁধী। পশ্চিমী পোশাক পরিহিত সনিয়ার পুরনো ছবি এখনও সযত্নে রয়েছে মহারাজের অ্যালবামে।

এ হেন অমরেন্দ্র আজ সকালে সটান ‘বন্ধুপত্নী’র বাড়ি গিয়ে বলেন, পঞ্জাবে অকালি সরকারকে ছি-ছি করছে মানুষ। কংগ্রেস এখন লড়বে না তো কখন লড়বে? তার পর সনিয়ার সামনেই রাহুলকে বলেন, “বাজওয়াকে প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে হটাও। নইলে পঞ্জাবে দলটাই উঠে যাবে।” পরে দশ জনপথের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদেরও বলেন, “সনিয়াকে বলেছি, বাজওয়াকে সরাও। যে নিজে জিততে পারে না সে কীসের নেতা!”

লোকসভা ভোটে হেরেছিলেন বাজওয়া। এখন তাঁকে নিয়েই ঘোর দোটানায় রাহুল। বাজওয়াকে সরালে নিজের মান যাবে। কিন্তু তা না করলে অমরেন্দ্রই যদি দল ছাড়েন! গত অধিবেশনে এক দিনও সংসদে আসেননি। সে সময়ে অমরেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছিল, ক্যাপ্টেন হয়তো পৃথক দল গড়বেন। তবে এখন কারও কারও মতে, অমরেন্দ্রর আসল লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি। কাজেই দুম করে দল হয়তো তিনি ছাড়বেন না।

সত্যিটা যা-ই হোক, একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল, রাহুলের কর্মপন্থা নিয়ে দলে অসন্তোষ। ইতিমধ্যেই পৃথক দল গড়ার কথা ভাবছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। যেমন একদা গড়েছিলেন তাঁর বাবা মাধবরাও। মহারাষ্ট্রেও একই তাল খুঁজছেন অশোক চহ্বাণ, নারায়ণ রানে-রা। এই পরিস্থিতিতে আজ দশ জনপথ থেকে অমরেন্দ্র বেরিয়ে যাওয়ার খানিক পরেই কংগ্রেস সূত্রে শোনা যায়, আগামী মঙ্গলবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন সনিয়া।

নেতাদের একাংশের সন্দেহ, সেই বৈঠক হবে উত্তপ্ত। কেউ কেউ বলতে পারেন, ইতস্তত ভাব ছেড়ে এ বার সভাপতি পদে আসুন রাহুল। তাঁর দল পরিচালনা নিয়েও হয়তো প্রশ্ন উঠবে। এ দিকে বাজওয়ার দাবি, রাজনাথ সিংহ তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অনেকের মতে, এটা আসলে রাহুলকেই চাপে রাখার কৌশল।

পরিস্থিতি যে দিকেই ঘুরুক, ঝড়ের মুখে রাহুল গাঁধী। যার পূর্বাভাস আজ দিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র!

amarendra singh rahul gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy