Advertisement
E-Paper

জঙ্গি হানার আশঙ্কা ‘আখরি রাস্তা’র কায়দায়

স্ত্রী মেরি-র ধর্ষণ ও আত্মহত্যার বদলা নিতে এক সাংসদকে খুন করবেন বলে পণ করেছিলেন ডেভিড। সে কথা আগাম জানিয়েও দিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে সেই নেতার বিমান মুম্বইয়ে নামা মাত্রই পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়। নেতার যাত্রাপথে মোতায়েন করা হয় অসংখ্য পুলিশ। কিন্তু ডেভিড লুকিয়ে ছিলেন ম্যানহোলে। ওই জায়গা থেকে খুনি যে আঘাত হানতে পারে, সে কথা পুলিশের মাথাতেও আসেনি।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:১৩
সেই দৃশ্য। ম্যানহোলের ভিতর থেকে সাংসদের গাড়িতে আইইডি লাগাচ্ছেন ‘ডেভিড’ অমিতাভ।

সেই দৃশ্য। ম্যানহোলের ভিতর থেকে সাংসদের গাড়িতে আইইডি লাগাচ্ছেন ‘ডেভিড’ অমিতাভ।

স্ত্রী মেরি-র ধর্ষণ ও আত্মহত্যার বদলা নিতে এক সাংসদকে খুন করবেন বলে পণ করেছিলেন ডেভিড। সে কথা আগাম জানিয়েও দিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে সেই নেতার বিমান মুম্বইয়ে নামা মাত্রই পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়। নেতার যাত্রাপথে মোতায়েন করা হয় অসংখ্য পুলিশ। কিন্তু ডেভিড লুকিয়ে ছিলেন ম্যানহোলে। ওই জায়গা থেকে খুনি যে আঘাত হানতে পারে, সে কথা পুলিশের মাথাতেও আসেনি।

অমিতাভ বচ্চনের ছবি ‘আখরি রাস্তা’। ২৮ বছর আগে সেলুলয়েডের সেই কাহিনির পুলিশ ম্যানহোলের ‘বিপদ’ আঁচ করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে কথা ভাবছে। নেতা-মন্ত্রীর মতো কোনও ভিআইপির সভাস্থলের কাছে থাকা ম্যানহোলগুলো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলে সম্প্রতি এক নির্দেশে উল্লেখ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রতিটি রাজ্যের কাছে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে চলতি মাসে। তাতে ম্যানহোলের পাশাপাশি নালা-নর্দমা-পয়ঃপ্রণালীর অঙ্গ কার্ব চ্যানেল, গালিপিট-ও ঘেঁটে দেখতে বলা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ভিআইপি-নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত, রাজ্য পুলিশের এক অভিজ্ঞ অফিসার বলেন, “ভিআইপি-র সভাস্থলের কাছাকাছি বিভিন্ন জিনিস পরীক্ষা করে দেখা হয়। তার মধ্যে ম্যানহোল-ও যে আমরা কখনও কখনও পরীক্ষা করে দেখি না, তা নয়। তবে এ-ই প্রথম ম্যানহোল পরীক্ষা করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাঠাল।” অর্থাৎ এখন থেকে থেকে ম্যানহোল তল্লাশিও রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়াল ভিআইপি-নিরাপত্তায়। যা আগে হয়নি বলে জানাচ্ছেন ওই পুলিশকর্তা।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিপদ বড় বালাই। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে জঙ্গি হামলার ছোবল কোথায়, কখন কী চেহারায় বিষ ঢালবে, সেটা আগাম বোঝা অভিজ্ঞ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা অফিসারদের পক্ষেও কঠিন। গোয়েন্দাদের খবর, সাধারণ মানুষ তো বটেই, সেই সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীদের উপর আঘাত হানতে তক্কে তক্কে রয়েছে জেহাদি জঙ্গি সংগঠনগুলি ও মাওবাদীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ভিআইপি-দের সভাস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগাপাশতলা ঢেলে সাজতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কী ধরনের আশঙ্কা থেকে ম্যানহোল পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে?

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র বক্তব্য, ভিআইপি-র সভাস্থলের নিকটবর্তী এক বা একাধিক ম্যানহোলের ভিতরে কেউ ঢুকে টাইমার ডিভাইস-সহ কোনও আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বসিয়ে রাখতে পারে। খুব শক্তিশালী আইইডি হলে ওই ম্যানহোলের উপর দিয়ে ভিআইপি-র গাড়ি যাওয়ারও দরকার নেই। সে ক্ষেত্রে স্রেফ বিস্ফোরণের

অভিঘাতেই উড়ে যেতে পারে সভাস্থল। আবার ম্যানহোলের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে লুকিয়েও থাকতে পারে আত্মঘাতী জঙ্গিরা।

‘আখরি রাস্তা’ ছবিতে অবশ্য ম্যানহোলের মধ্যে টাইমার ডিভাইস লাগানো আইইডি হাতে নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন ডেভিডরূপী অমিতাভ। তাঁর লক্ষ্য ছিল, মেরিকে অত্যাচার করা সাংসদের গাড়ি যখন ম্যানহোলের উপর দিয়ে যাবে, তখন তার ঢাকনা খুলে টুক করে সবার অলক্ষ্যে আইইডি তিনি গাড়ির নীচে লাগিয়ে দেবেন। বার কয়েকের চেষ্টায় গাড়িতে আইইডি লাগিয়েও দেন ডেভিড। কিন্তু তার ঠিক আগের মুহূর্তে সিআইডি ইন্সপেক্টর বিজয় (এই ভূমিকাতেও অমিতাভ) সেটা দেখে ফেলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি থেকে আইইডি খুলে ছুড়ে ফেলার পর বিজয় নেমে পড়েন ম্যানহোলে। বিজয় আবার ডেভিডেরই ছেলে। ছবির ক্লাইম্যাক্সে ম্যানহোলের সুড়ঙ্গে পিতা বনাম পুত্র দুরন্ত ফাইট।

ছেলের হাতে নিজে মারা যাওয়ার আগে ওই সাংসদকে গুলি করে খুন করেন ডেভিড।

ডেভিড জঙ্গি ছিলেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁর কায়দায় বাস্তবেও কি ম্যানহোলে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী কোনও ভিআইপি-র গাড়িতে আইইডি দিয়ে নাশকতা ঘটাতে পারে? আইবি-র এক অফিসারের কথায়, “ওই ভাবে গাড়ির তলায় আইইডি বসানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। ছবিতে নাটকীয়তা আনার জন্য অনেক সময়ে অনেক কিছুই করতে হয়। বাস্তবটা একটু আলাদা।” ওই পুলিশকর্তার বক্তব্য, “ভিআইপি-র সভা শুরু হওয়ার আগে একাধিক ম্যানহোলে টাইমার ডিভাইস-সহ শক্তিশালী আইইডি রেখে দিলে জঙ্গিদের পক্ষে ঝুঁকি কম। নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়িয়ে গেলে নাশকতা ঠেকানো মুশকিল।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ভিআইপি-র সভামঞ্চে রাখা চেয়ার-টেবিলও ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে। বিপদ ঘাপটি মেরে থাকতে পারে উপহার সামগ্রী, ফুলের তোড়া, ফুলদানিতেও। তা ছাড়াও শামিয়ানা, আলোকসজ্জা, মাইক্রোফোন, স্পিকার-অ্যাম্পলিফায়ার-মিক্সার কিছুই নিরাপদ নয়।

চ্যালেঞ্জটা তাই নিতেই হচ্ছে গোয়েন্দাদের। কে না জানে, তাঁদের প্রতিপক্ষ ডেভিডের চেয়েও কয়েকশো গুণ ভয়ঙ্কর।

terrorist attack manhole amitabh bachchan red alert surdek biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy