Advertisement
E-Paper

জমি হারানোর চিন্তাতেই কি হামলা অসমে

জোড়া ফাঁসের চাপটা বাড়ছিল গত ছ’মাস ধরেই। এক দিকে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অপারেশন শুরু করেছিল আধা-সামরিক বাহিনী। যার ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের পায়ের তলার জমি হারাতে শুরু করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড বা এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর জঙ্গিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০১

জোড়া ফাঁসের চাপটা বাড়ছিল গত ছ’মাস ধরেই। এক দিকে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অপারেশন শুরু করেছিল আধা-সামরিক বাহিনী। যার ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের পায়ের তলার জমি হারাতে শুরু করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড বা এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর জঙ্গিরা। অন্য দিকে, বড়ো জঙ্গিদের অন্য আর একটি দল, গোবিন্দ বসুমাতারি গোষ্ঠীকে আলোচনার টেবিলে বসাতে সক্ষম হয় কেন্দ্র। দু’পক্ষের এই চাপে কার্যত অস্তিত্বের সংকটে ভুগতে শুরু করেছিল সংবিজিত গোষ্ঠী। মনে করা হচ্ছে সেই ফাঁস আলগা করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই কাল পরিকল্পিত হামলা চালায় তারা।

সংবিজিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কাল ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজই ৫০ কোম্পানি অতিরিক্ত বাহিনী অসমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নামানো হয়েছে আরও ১০ কলাম সেনা-জওয়ান। শুরু হয়েছে ফ্ল্যাগ মার্চ। পাশাপাশি, ৫১টি জায়গায় শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর স্পেশাল এরিয়া ডমিনেশন পেট্রল। এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠী অবশ্য ঘটনার দায় নিতে নারাজ। ইমেল-বিবৃতি দিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতা বি বিদাই আজ বলেন, “নির্ঘাত এর পিছনে কোনও তৃতীয় শক্তি রয়েছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেই খামোখা আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।”

আজ দিল্লিতে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ঘটনায় তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। তার আগে রাজনাথ আলাদা করে বসেন আইবি, সিআরপিএফ ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের ডিজিদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ভারত-ভুটান সীমান্তে লুকিয়ে থাকা ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে ফের ভুটান সরকারের সাহায্য নিতে পারে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, এর আগে আলফার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ফ্লাশআউট’ চালানোর সময় ভুটানের সাহায্য পেয়েছিল ভারত সরকার।

চলতি বছরের শুরু থেকেই বড়ো জঙ্গিদের তত্‌পরতা বৃদ্ধিতে ঘরোয়া মহলে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্র। শুধু ভারতই নয়, বড়ো জঙ্গি তত্‌পরতা নিয়ে চিন্তিত ছিল ভুটানও। সম্প্রতি ভুটান প্রশাসন ও কেন্দ্রের এক শীর্ষ প্রতিনিধি দলের এক বৈঠকে ভুটান রয়্যাল পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বড়ো জঙ্গিরা মাঝেমধ্যেই সীমান্ত পার হয়ে ভুটানে প্রবেশ করে সে দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারীদের অপহরণ করে ভারতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। চাওয়া হচ্ছে বিপুল মুক্তিপণও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ছ’মাসে সে দেশের জনা দশেক ব্যবসায়ী অপহরণ করেছে এনডিএফবি। ওই জঙ্গি গোষ্ঠী বর্তমানে এতটাই শক্তি অর্জন করেছে যে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর দু’টি বর্ডার আউট পোস্টে হামলাও চালায় তারা।

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে গত তিন-চার মাস ধরেই বড়ো জঙ্গিদের উপর প্রত্যাঘাত শুরু করে আধা-সামরিক বাহিনী। মারা যায় ডজন খানেক জঙ্গি। গত কয়েক দিনে সেনা-কেন্দ্রীয় বাহিনী ও অসম পুলিশের ইউনিফায়েড কম্যান্ডের নেতৃত্বে সেই অভিযান আরও তীব্র করা হয়। আজ ঠিক হয়েছে, পাল্টা-আক্রমণ আরও তীব্র করতে ভুটানের সঙ্গে যৌথ অভিযানের রূপরেখা দ্রুত তৈরি করা হবে। আগামী বছরের শুরুতেই এ নিয়ে দিল্লিতে ভারত-ভুটান চূড়ান্ত বৈঠক করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, যে ভাবে ওই জঙ্গিরা একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে তা থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, একাধিক স্থানে হামলা করে পুলিশ তথা নিরাপত্তাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা। দ্বিতীয়ত, যত বেশি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি করা। হামলার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছক রয়েছে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তবে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বর্ষা শুরু না হওয়া পর্যন্ত বড়ো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালু থাকবে। জঙ্গিদের একেবারে নির্মূল করার বিষয়ে সরকারের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ এসেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রকের কর্তারা।

আজ সন্ধ্যায় গুয়াহাটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বৈঠকেও এই অভিযানের ব্যাপারে কেন্দ্র-রাজ্য একমত হয়েছে।

assam terrorist attack NDFB kokrajhar home ministry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy