Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে আকাশ দু’ভাগ

আকাশপথে ভাঙন! উড়ন্ত বিমানের উপর ঠিকমতো নজরদারি চালিয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যতটা সম্ভব কমাতে কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) আওতায় থাকা আকাশের দক্ষিণ এলাকা দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৪

আকাশপথে ভাঙন!

উড়ন্ত বিমানের উপর ঠিকমতো নজরদারি চালিয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যতটা সম্ভব কমাতে কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) আওতায় থাকা আকাশের দক্ষিণ এলাকা দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। এ বার থেকে ওই দক্ষিণ আকাশে সমুদ্রের উপর দিয়ে যে সব বিমান উড়ে যাবে, সেগুলোর উপর নজরদারি করবেন এক জন কন্ট্রোলার। অন্য এক জন কন্ট্রোলার মূলত মাটির উপর দিয়ে ওড়া বিমানগুলোর উপর নজরদারি করবেন। এত দিন দক্ষিণ আকাশে সব বিমানের উপর নজরদারির দায়িত্ব ছিল এক জন কন্ট্রোলারের উপরেই। আজ, বুধবার থেকে এই নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

কলকাতার এটিসি-র দক্ষিণ আকাশপথ বলতে বোঝায় পশ্চিমে রায়পুর, সেখান থেকে সোজা দক্ষিণে বিশাখাপত্তনম, তার পর আরও দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে গিয়ে প্রায় চেন্নাইয়ের সমান্তরাল এলাকা থেকে পূর্ব দিকে বেঁকে আন্দামান (১০০ নটিক্যাল মাইল আগে) হয়ে মায়ানমার পর্যন্ত সমুদ্রের উপর বিস্তৃত এলাকা। এখন ঠিক হয়েছে, এই দক্ষিণ আকাশপথ ভেঙে দু’টুকরো করার পরে দক্ষিণ এলাকা বলতে বোঝাবে কলকাতা থেকে দক্ষিণে রায়পুর, ভুবনেশ্বর, বিশাখাপত্তনমের উপরে থাকা আকাশপথ। অন্য অংশটিকে বলা হবে কলকাতা ওশ্যানিক কন্ট্রোল। যার মধ্যে পড়বে পুরো বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে প্রায় আন্দামান পর্যন্ত এলাকা।

এমনিতেই কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিংয়ে যাওয়ার পথে দশ দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই কলকাতার এটিসি-কে তার দক্ষিণ আকাশপথ ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কেন?

এই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে তিনটি ঘটনার কথা।

ঘটনা এক: জুরিখ থেকে সিঙ্গাপুরে আসছিল সুইস এয়ারের একটি বিমান। আর সেই সময়ে স্পাইসজেটের একটি বিমান কলকাতা থেকে চেন্নাই উড়ে যাচ্ছিল। মাঝ আকাশে প্রায় মুখোমুখি পড়ে যায় ওই দু’টি বিমান।

ঘটনা দুই: তাসখন্দ থেকে কুয়ালা লামপুরে যাচ্ছিল উজবেকিস্তানের একটি বিমান। সেই সময়ে অন্য একটি বিমান তার কাছাকাছি চলে আসে।

ঘটনা তিন: সিঙ্গাপুর থেকে লন্ডন যাচ্ছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমান। হঠাৎই সে ঘাড়ের কাছে দেখল একটি বিদেশি বিমানকে।

ওই তিনটি ঘটনাই ঘটেছে কলকাতা এটিসি-র দক্ষিণ আকাশপথে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাঝ আকাশে দু’টি বিমানের যে দূরত্ব থাকার কথা, তার চেয়ে অনেকটাই কমে তারা বিপজ্জনক ভাবে কাছাকাছি চলে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও তিনটি ঘটনাই মারাত্মক আকার নিতে পারত বলে স্বীকার করে নিচ্ছে এটিসি। শুধু ওই তিনটিই নয়, দক্ষিণ আকাশে একের পর এক ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বিমানের উপর থেকে নজরদারি সরে গিয়েছে কন্ট্রোলারের। যার ফলেই তৈরি হয়েছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি এটিসি-র অফিসারদের মনঃসংযোগে কোনও কারণে বিঘ্ন ঘটছে? কিন্তু সব কিছু খতিয়ে দেখার পর বোঝা যায়, নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ আকাশের কন্ট্রোলার অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। অথচ, কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-র আওতায় থাকা পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর আকাশের কন্ট্রোলারদের উপরে কখনওই এতটা চাপ পড়ে না।

ব্যাপারটা কী রকম?

এটিসি-র এক অফিসারের বক্তব্য, এমনিতে পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর আকাশের তুলনায় অনেক বেশি বিমান ওড়ে দক্ষিণ আকাশে। দক্ষিণ আকাশের গোটা এলাকা, অর্থাৎ সমুদ্র ও মাটির উপর দিয়ে রোজ ৬০০-র বেশি বিমান উড়ে যায়। তার উপর সম্প্রতি দক্ষিণ আকাশে ক্রসিংয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার কন্ট্রোলারের উপর চাপ বেড়েছে। ক্রসিংয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এটিসি-র এক কর্তা জানান, আকাশপথে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ দিয়ে এক একটি বিন্দু চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। এই বিন্দুগুলিকেই বলা হয় ক্রসিং। প্রতিটি ক্রসিংয়ে পৌঁছে পাইলটেরা যোগাযোগ করেন এটিসি-র সঙ্গে। দক্ষিণ আকাশে আগে এ রকম ৪৭টি ক্রসিং ছিল। সম্প্রতি চেন্নাই ও কলকাতার মধ্যে নতুন একটি রুট চালু হওয়ার পর ১২টি ক্রসিং বেড়েছে। এটিসি-র এক অফিসারের কথায়, “ওই ৫৯টি ক্রসিং-এর কোথায় কখন কোন বিমান গিয়ে পৌঁছচ্ছে, সেটা নজরে রাখতে হচ্ছে। একই সময়ে পাইলটদের নির্দেশ দিতে হচ্ছে, কোন উচ্চতায় বিমান উড়বে।” কিন্তু অধিকাংশ বিমানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকলেও কিছু বিমানের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে ওই অফিসার মানছেন।

এটিসি সূত্রের খবর, মাঝ সমুদ্রের উপরে থাকা বিমানগুলিকে রেডারের মনিটরে দেখা যায় না। ওই সব বিমানের পাইলটেরা হাই ফ্রিকোয়েন্সি মারফত বার্তা পাঠান আর সেই বার্তা কন্ট্রোলার পাওয়ার পর তিনি বিমানের ভিড়ের মধ্যে মাঝ সমুদ্রের উপর থাকা বিমানকে নির্দেশ দেন। আবার কয়েকটি বিমানের সঙ্গে কন্ট্রোলারকে যোগাযোগ রাখতে হয় কেবল উপগ্রহের মাধ্যমে।

এই ব্যবস্থায় দক্ষিণ আকাশপথের কন্ট্রোলার হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানাচ্ছে এটিসি। একটি শিফ্টে এক জনকেই কন্ট্রোলার হিসেবে থাকতে হয়, কারণ একাধিক কন্ট্রোলার থাকলে এক-এক রকম সিদ্ধান্তে গোটা ব্যবস্থা জট পাকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ আকাশপথে বর্তমানে বিমানের ও ক্রসিংয়ের সংখ্যার চাপে টানা সাত ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে, বিশেষ করে রাতে মারাত্মক চাপে পড়ছেন কন্ট্রোলার। এটিসি-র অফিসারদের কথায়, “কয়েক ঘণ্টা পরই অফিসারদের মাথাব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই চাপের মধ্যে ভুল হওয়া তো স্বাভাবিক।” আর তাই দক্ষিণের আকাশপথ ভাগ করে সমাধানে নেমেছেন কর্তৃপক্ষ। ভাগ হওয়ার পর সমুদ্রের উপর আকাশপথে আটটি রুট ও ২০টি ক্রসিং থাকবে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বাঞ্চলের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি বলেন, “পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যে যোগাযোগের প্রক্রিয়ায় নিত্যনতুন অগ্রগতি হচ্ছে। দক্ষিণ আকাশপথকে দু’ভাগে ভাগ করাটা ওই অগ্রগতিরই অঙ্গ।”

sunanda ghosh atc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy