Advertisement
E-Paper

দেশে নোবেলের খরা কেন, উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপতি

সি ভি রামন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ৮৩-৮৪ বছর আগে। এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে করতেই। তার পরে কেটে গিয়েছে সাত-সাতটা যুগ। এর মধ্যে দেশের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর এক জনও নোবেল-প্রাপক উঠে আসেননি। কেন? শুধু প্রশ্ন তোলা নয়, এই নিয়ে রবিবার উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৯
শিবপুরে আইআইইএসটি-র উদ্বোধনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি।  নিজস্ব চিত্র

শিবপুরে আইআইইএসটি-র উদ্বোধনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি। নিজস্ব চিত্র

সি ভি রামন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ৮৩-৮৪ বছর আগে। এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে করতেই। তার পরে কেটে গিয়েছে সাত-সাতটা যুগ। এর মধ্যে দেশের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর এক জনও নোবেল-প্রাপক উঠে আসেননি। কেন? শুধু প্রশ্ন তোলা নয়, এই নিয়ে রবিবার উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই ব্যাপারে বেশ কিছুটা আক্ষেপও আছে তাঁর।

রাষ্ট্রপতির বক্তব্য, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর থেকে অমর্ত্য সেন সকলেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায়। অথচ এঁদের পড়াশোনা এ দেশেই। প্রতিভার অভাব না-থাকলেও কেন তাঁদের দেশে ধরে রাখা যাচ্ছে না, রাষ্ট্রপতির সখেদ প্রশ্ন সেটাই।

রাষ্ট্রপতি এ দিন শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশে নোবেল-খরা, নানা ক্ষেত্রে প্রতিভার বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা, উচ্চশিক্ষার দুর্দশা নিয়ে সেখানেই নিজের উদ্বেগের কথা জানান তিনি। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় বেসু-র আইআইইএসটি-তে উন্নীত হওয়ার পিছনে প্রণববাবুর প্রভূত অবদান আছে বলে মন্তব্য করেন ওই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা অজয় রায়। এ দিনের অনুষ্ঠানে আইআইইএসটি-র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করার সঙ্গে সঙ্গে শিবপুরের ওই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ যাত্রাপথেরও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। আর সেই সঙ্গেই তাঁর গলায় ছিল উচ্চশিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ও আক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক মানের নিরিখে এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কেন পিছিয়ে, এ দিন ফের সেই প্রশ্ন তোলেন রাষ্ট্রপতি। এর আগেও বহু অনুষ্ঠানে এই নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ দিন রাষ্ট্রপতি বলেন, “দেশে ৭২০-র বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৭ হাজারের বেশি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ, ১১ হাজারের বেশি পলিটেকনিক কলেজ আছে। কিন্তু যেটা আমাকে সব থেকে পীড়া দেয়, তা হল, আন্তর্জাতিক বিচারে এগুলির মান শোচনীয়।” বিশ্বের প্রথম ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দেশের কোনও প্রতিষ্ঠানেরই ঠাঁই হয়নি। কেন? প্রশ্ন প্রণববাবুর। তিনি জানান, আইআইটি, এনআইটি-র মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলি যে এই তালিকায় নেই, এটা তাঁকে পীড়া দেয়।

শুধু শিক্ষার মান নিয়েই নয়। দেশের অন্যান্য বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রণববাবু জানান, কয়েক দিন আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে আইআইটিগুলির অধিকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, টাকা ছাপার কাগজ ও কালি কেন আমদানি করতে হবে? প্রযুক্তিগত ভাবে এই দেশ তো যথেষ্ট উন্নত। তা হলে এখানেই ওগুলো উৎপাদন করা যাবে না কেন? তাঁর কথায়, “এই সব গোপনীয় জিনিস হাতিয়ে নিয়ে অনেক সময়েই দুষ্কৃতীরা নকল টাকা তৈরির ব্যবসা ফেঁদে বসে। দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।”

রাষ্ট্রপতি ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কানপুর আইআইটি-র বোর্ড অব গভর্নর্সের চেয়ারম্যান এম আনন্দকৃষ্ণন, রাজ্যসভার সাংসদ তরুণ বিজয়, লোকসভার সাংসদ তথা রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।

ছাত্র-শিক্ষকের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং পড়ুয়াদের অছাত্রসুলভ আচরণ না-করার পরামর্শ দেন পার্থবাবু। বস্তুত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক গোলমালের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়েই এই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যদিও তাতে কাজের কাজ কতটা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

পরামর্শ দিয়ে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে লাভ যে খুব একটা হচ্ছে না, এ দিন সেটা কার্যত মেনে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতিও। বক্তব্যের গোড়াতেই দেশের উচ্চশিক্ষার হাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “শিক্ষা সংক্রান্ত যে-কোনও অনুষ্ঠানেই আমি এই কথা বলি। বিষয়টি আমাকে এতই চিন্তাগ্রস্ত করেছে যে, টিয়াপাখির মতো একই কথা আওড়াই!”

nobel prize president pranab mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy