ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স
কংক্রিটের কাঠামোটা খড়কুটোর মতো পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে অসংখ্য লোহার শিক। চেন্নাইয়ের শহরতলিতে মউলিভক্কমের নির্মীয়মাণ ১১তলা বাড়িটার কোথায় কী ছিল, তা এখন চেনা দায়। গত কাল বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঝড়বৃষ্টি চলাকালীন ভেঙে পড়ে বাড়িটি। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আগেই হাত তুলে নিয়েছে প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২-৩ দিনের আগে উদ্ধারকাজ শেষ করা অসম্ভব।
এর মধ্যেই আজ, রবিবার ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করা হল আরও ৭টি দেহ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। কোনও মতে বেঁচে ফিরেছেন ৩০ জন। কারও কারও অবস্থা গুরুতর। আশঙ্কা, এখনও অন্তত ৭২ জন আটকে রয়েছে ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপের নীচে। সকলেই মূলত শ্রমিক, ঘটনার সময় বাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা।
আজ পাথরের চাঁই সরিয়ে হাত ধরে টেনে বের করতে দেখা গেল এক মহিলাকে। আপাদমস্তক তাঁর ধুলোয় ঢাকা। পরনের শাড়িটি ছিঁড়ে গিয়েছে। দমকলকর্মীরাই তাঁকে একটা শার্ট পরিয়ে দিয়েছেন কোনও মতে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা জানালেন, ইট সরাতে সরাতে তাঁরা ভগ্নস্তূপের নীচে এক জনের গোঙানির আওয়াজ শুনতে পান। পাথরের চাঁই আরও খানিকটা পরিষ্কার করতেই মুখটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু বেঁচে আছেন তখনও। এ ভাবেই পরে উদ্ধার করা হয়, সুজাতা ও কৃষ্ণবেণী নামে দুই মহিলাকেও।
তখনও রয়েছে প্রাণ। সাহায্যের আর্তি। ছবি: পিটিআই
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে বাড়িটির দুই মালিকও রয়েছেন। ধরা হয়েছে দুই ইঞ্জিনিয়ারকেও। তাঁদের দাবি, খারাপ আবহাওয়া, টানা ঝড়বৃষ্টিতেই এই বিপর্যয়। কিন্তু পুলিশের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে বাড়িটি নির্মাণ করছিলেন অভিযুক্তরা। তার ফলেই এই দুর্ঘটনা। আশপাশের কয়েকটি বাড়িও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে সামনের রাস্তাটিও। ফলে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকলের গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকে।
“এর মধ্যেই পুরোদমে উদ্ধার কাজ চলছে”, বললেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডিআইজি এসপি সেলভান। তাঁর কথায়, “জীবিত কেউ কোথাও আটকে রয়েছেন কি না, সেটা খুঁজে বের করাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। আধুনিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে কোনও আওয়াজ ভেসে আসছে কি না, নজর রাখা হচ্ছে সে দিকেও।” দমকল বাহিনীর ১০০ কর্মী দিনরাত এক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীরও ১২০ জন হাত লাগিয়েছেন উদ্ধার কাজে। ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর।
উদ্ধার হওয়া কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে দেখছে পুলিশ। কত জন সে সময় ঘটনাস্থলে ছিল, জানার চেষ্টা চলছে তা। আহতদের সঙ্গে কথা বলেই পুলিশের একাংশের আন্দাজ, এখনও অন্তত ৭২ জন ভগ্নস্তূপে আটকে।
কাঞ্চিপুরমের জেলাশাসক বলেন, “আমাদের এখানে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় দমকলের ২২টি গাড়ি তৈরি রয়েছে। প্রয়োজন হলেই, পাঠানো হবে। ঘটনাস্থলে হাজির ৫০টি অ্যাম্বুল্যান্সও।” আজ পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে মউলিভক্কম গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। জানান, আহত ব্যক্তিদেরও ৫০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy