Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে খুন তরুণী চিকিৎসককে, ধৃত সহপাঠী

মাসখানেক ধরে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয় ডিব্রুগড়ের অসম মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী সরিতা তোসনিওয়ালকে। তার আগে ওই তরুণীকে যৌন নিগ্রহও করা হয়। গলা টিপে খুন করার পর স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেহ পরীক্ষাও করেছিল আততায়ী।

সরিতা তোসনিওয়াল।

সরিতা তোসনিওয়াল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

মাসখানেক ধরে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয় ডিব্রুগড়ের অসম মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী সরিতা তোসনিওয়ালকে। তার আগে ওই তরুণীকে যৌন নিগ্রহও করা হয়। গলা টিপে খুন করার পর স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেহ পরীক্ষাও করেছিল আততায়ী। নিশ্চিত হওয়ার জন্য শেষে তাঁর গলা কেটে দেওয়া হয়।

ঘটনায় গ্রেফতার হাসপাতালের এক ওয়ার্ড-বয়কে জেরা করে তদন্তকারীরা এমনই জানতে পেরেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সরিতারই সহপাঠী দীপমণি শইকিয়া। তার শাগরেদ ছিল হাসপাতালের ওয়ার্ড-বয় কিরো মেচ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সরিতাকে খুন করে দীপমণি। আজ পুলিশের জালে সে-ও ধরা পড়েছে। আদালত তাকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।

৯ মে সকালে হাসপাতালের আইসিইউয়ের সামনে সরিতার গলাকাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় শল্য-চিকিৎসায় ব্যবহৃত ছুরি, গ্লাভ্স। ওই রাতে আইসিইউয়ে কাজ করছিলেন সরিতা। যে ভাবে শল্য-চিকিৎসার ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছিল, তাতে তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, ঘটনায় হাসপাতালেরই কেউ জড়িত।

পুলিশ জানিয়েছে, সরিতার বাড়ি শিবসাগরে। তাঁর বন্ধু রৌশন অগ্রবাল ওই মেডিক্যাল কলেজেই এমডি পড়ছেন। জুন মাসে তাঁদের বিয়ের তারিখও ঠিক ছিল। রৌশন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তাঁর পরীক্ষা ছিল। ভোর ৫টা নাগাদ সরিতা ফোন করে তাঁকে ঘুম থেকে তোলেন। তার পর থেকে নিহতের মোবাইল ফোন সুইচড-অফ হয়ে যায়। তদন্ত শুরুর পর পুলিশ ঘটনার দিনই কিরোকে গ্রেফতার করে। জেরায় কিরো জানায়, সরিতাকে প্রেম নিবেদন করেছিল দীপমণি। কিন্তু, তাঁর দিক থেকে সাড়া পায়নি। মাসখানেক ধরে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। কিরো পুলিশকে জানায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে দীপমণি তার কাছে যায়। স্থায়ী চাকরি করিয়ে দেওয়ার লোভ দেখায় কিরোকে। ধৃত ওয়ার্ড-বয়ের দাবি, পাকা চাকরির জন্য সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার আগের রাতে দীপমণি এবং সরিতার একই সঙ্গে আইসিইউয়ে ডিউটি ছিল। শরীর খারাপের অজুহাতে দীপমণি কাজে যায়নি। পর দিন ভোরে কর্তব্যরত নার্সকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছুটি দিয়ে দেয় দীপমণি। তার পর কিরোকে নিয়ে আইসিইউয়ে ঢোকে।

তদন্তকারীদের কিরো জানিয়েছে, প্রথমে সে সরিতার মুখ চেপে ধরেছিল। দীপমণি তখন ওই তরুণীকে যৌন নিগ্রহ করে। পরে, দীপমণিই তাঁকে গলা টিপে খুন করে। স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করার পর সে পালিয়ে যায়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিরো ছুরি দিয়ে সরিতার গলা কেটে দেয়। এর পর, নিহতের মোবাইল ফোন নিয়ে পালায়। কিরোর শ্বশুরবাড়ি থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। আজ পুলিশ দীপমণিকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি নগাঁওতে।

ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রীর খুনের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা ৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সেখানে গিয়ে ছাত্রছাত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি পূরণে লিখিত আশ্বাস দেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সরিতার পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। একই কারণে তিন দিন ধরে কর্মবিরতি চলছিল গুয়াহাটির মেডিক্যাল কলেজেও। আজ এসএসপি, জেলাশাসকের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে তা প্রত্যাহার করেন সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা।

এ দিকে, অনুমতি না-নিয়ে বিদেশ চলে যাওয়ায় ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অথীন্দ্রকুমার অধিকারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে সামান্য বেতনে অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁদের দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তা-ই প্রশ্ন উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

doctor murder case rajibakkha rakshit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE