‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে কলকাতায় এসে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও টাকা খোয়ানোর অভিযোগ করলেন জাপানের এক তরুণী। তদন্তে নেমে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
অভিযোগ কলকাতা পুলিশে হলেও কোনও ঘটনাই শহরে ঘটেনি। অভিযোগ অনুযায়ী কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেল থেকে ওই তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় দিঘা, সেখান থেকে ফের কলকাতা হয়ে বুদ্ধগয়ায়। ধৃতদের মধ্যে সাবির খান, ওয়াসিম খান এবং শাহিদ ইকবাল তপসিয়ার বাসিন্দা। জাভেদ খান ও সাজিদ খানকে বুদ্ধগয়ার ফতেপুর থেকে ধরা হয়েছে। শাহিদ সদর স্ট্রিটে ‘জাপানি শাহিদ’ নামে পরিচিত বলে পুলিশের দাবি। চক্রে আরও কয়েক জন আছে বলেও দাবি পুলিশের।
তবে এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা আছে বলে জানান তদন্তকারীরা। কারণ তরুণীর অভিযোগ, তিনি ২০ নভেম্বর কলকাতায় আসেন। ২৩ এবং ২৪ নভেম্বর দিঘায় ছিলেন। সেখানে তাঁর টাকা হাতিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়। ২৫ নভেম্বর শহরে ফিরে আবার বুদ্ধগয়ায় গিয়ে তিনি গণধর্ষিতা হন। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করতে এক মাস লাগল কেন, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণী কোন হোটেলে ওঠেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। সদর স্ট্রিটে নিয়ে গেলেও পুলিশকে হোটেলটি দেখাতে পারেননি তিনি। আদৌ তিনি কোনও হোটেলে উঠেছিলেন কি না, ধন্দে তদন্তকারীরা।
বছর চব্বিশের ওই তরুণীর অভিযোগ, ২০ নভেম্বর তিনি সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ওঠেন। ইংরেজি তেমন না জানায় হোটেলে পরিচয় হওয়া জাপানি ভাষা জানা দুই যুবককে গাইড হিসেবে সঙ্গে নেন। ওই যুবকেরাই গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে দিঘায় নিয়ে যায়। তরুণীর অভিযোগ, দিঘায় গিয়েই তারা তরুণীর এটিএম কার্ড নিয়ে নেয় এবং অস্ত্র দেখিয়ে কার্ডের পিন-ও জেনে নেয়। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৬ হাজার টাকা হাতিয়ে ওই দু’জন সেখানে তাঁর শ্লীলতাহানি করে। এর পরে তারা তাঁকে গাড়িতে করে ২৫ নভেম্বর কলকাতায় এনে সেই গাড়িতেই অন্য তিন যুবকের হাতে জোর করে তুলে দেয়। তারা ওই তরুণীকে নিয়ে চলে যান বুদ্ধগয়ায়।
তরুণীর অভিযোগ, বুদ্ধগয়ায় তাঁকে দু’সপ্তাহ আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। তার পরে জোর করে বারাণসীর বাসে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে তরুণীর পরিচয় হয় কয়েক জন জাপানি পর্যটকের সঙ্গে। তাঁরাই জানান, সদর স্ট্রিটে একটি চক্র গাইড সেজে জাপানি পর্যটকদের এ ভাবে প্রতারণা করে। তরুণী বুঝতে পারেন, তিনিও এই চক্রের শিকার।
কিন্তু অভিযোগ জানাতে তরুণীর এক মাস লাগল কেন? তা ছাড়া, বারাণসীতে জাপানি পর্যটকদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে ওই তরুণী তাঁদেরও কিছু বলেননি কেন? তদন্তকারীদের দাবি, তরুণী জানিয়েছেন, তিনি একা থাকায় অভিযোগ জানাতে ভয় পেয়েছিলেন। তাই কলকাতায় ফিরে জাপানি দূতাবাসে জানান। দূতাবাস থেকে পুলিশ কমিশনারকে জানালে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। তরুণীর কাছ থেকে পুলিশ প্রথমে প্রতারণা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ পায়। পরে গোপন জবানবন্দিতে তিনি গণধর্ষণের অভিযোগ জানান বলে তদন্তকারীদের দাবি।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জেরায় বুদ্ধগয়া থেকে ধৃত জাভেদ এবং সাজিদ দু’জনেই গণধর্ষণের কথা মেনে নেয়। তবে কলকাতার শাহিদ ওই তরুণীর আচরণ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেছে।
গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “কনস্যুলেট থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা বুদ্ধগয়ার গোয়েন্দা পুলিশের সাহায্যে একটি চক্রের সন্ধান পাই। সদর স্ট্রিটে এই চক্রটি মূলত জাপানি পর্যটকদেরই ‘টার্গেট’ করে। আগেও এমন অভিযোগ এসেছে।” জাপানি দূতাবাসের তরফে বলা হয়েছে, “এটি খুবই সংবেদনশীল বিষয়। কোনও ভিআইপি দূতাবাসের মাধ্যমে এলে আমরা দোভাষীর ব্যবস্থা করি। কিন্তু সাধারণ পর্যটকেরা হোটেল থেকেই সুবিধামতো দোভাষী বা গাইড নেন।”
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, জাপানি ভাষায় দক্ষতা এবং জাপানি স্ত্রী এই দুই বিষয়কেই হাতিয়ার করে এই চক্রটি সহজেই জাপানি পর্যটকদের বিশ্বাস অর্জন করে। এমনই নানা তথ্যপ্রমাণ গোয়েন্দারা পেয়েছেন।
কিন্তু টাকা হাতানো এবং অত্যাচারের জন্য তরুণীকে দিঘা ও বুদ্ধগয়া কেন নিয়ে যাওয়া হল? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, জাপানি পর্যটকদের কাছে বুদ্ধগয়া জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। তাই এই চক্রটি কলকাতা ও বোধগয়ার মধ্যে কাজ করে। কলকাতার আশপাশে বেড়াতে যেতে দিঘাকেই নিরাপদ ভেবেছিল তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy