দমদম বিমানবন্দরে শিলচরমুখী এটিআর-এ বাসের ধাক্কার ঘটনায় আজ আতঙ্কিত বরাকবাসী। আতঙ্ক ‘দুর্ঘটনা’-র জন্য নয়, বরাকবাসী আতঙ্কিত পরবর্তী পরিস্থিতির কথা ভেবে। এই দুর্ঘটনার ফলে বরাকের সার্বিক বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা ধাক্কা খাবে বলেই তাঁদের উদ্বেগ। এমনিতেই এই সেক্টরে খুবই কম বিমান চলাচল করে। এরই মধ্যে একটি এটিআর বিমান অকেজো হয়ে পড়ায়, তা আরও ধাক্কা খাবে বলে চিন্তিত তাঁরা।
আজ দুর্ঘটনার পর বিমান বাতিলের খবরে বেশি সমস্যায় পড়েন কলকাতা-শিলচর যাত্রীরা। এটিআর বিমানটি কলকাতা থেকে সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা। সেই হিসেবে যাত্রীদের ভোর ছ’টায় বিমানবন্দরে ‘রিপোর্ট’ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছনোর জন্য অনেককে রাত থাকতেই বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়। আচমকা বিমান বাতিলের খবরে তাঁরা মুষড়ে পড়েন। একই অবস্থা আজকের শিলচর-কলকাতা যাত্রীদেরও। কারণ ওই বিমানটি এলে তবেই সেটি ফের শিলচর থেকে কলকাতার দিকে রওনা হবে। বহু দিন আগে থেকে টিকিট কাটা থাকলেও অনেকেই আজ রওনা হতে পারেননি।
এয়ার ইন্ডিয়ার শিলচরের স্টেশন ম্যানেজার জয়ন্ত দত্ত জানান, ‘‘এখান থেকে একটি এয়ারবাস ও একটি এটিআর কলকাতা রুটে চলাচল করে। ৪২ আসনের এটিআর-টি মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার চলাচল করে। আজ শিলচর থেকে ৩৩ আসন বিশিষ্ট এটিআর-টিরই কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।’’ আজ তবু ৩৩ যাত্রীর মধ্যে ১২জনকে জেট এয়ারওয়েজের বিমানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এয়ার ইন্ডিয়া। বাকিদের কাল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাল এয়ারবাস থাকায় সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন জয়ন্তবাবু। তবে ভাবনা বৃহস্পতিবারের যাত্রীদের নিয়ে। অন্য এটিআর দেওয়া না হলে এই অঞ্চলের মানুষের যেমন দুর্ভোগ বাড়বে, তেমনই মুশকিলে পড়বেন তাঁরা।
এক দিকে, দু’দিন বাদে বড়দিন, অন্য দিকে বর্ষশেষ। অধিকাংশ বাড়ির ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। তাদের এখন বেড়ানোর মরসুম। ফলে ক’দিন থেকেই টিকিটের চাহিদা বাড়ছে। চার জেলার দক্ষিণ অসমে বিমানবন্দর একটিই। শিলচরের কুম্ভীরগ্রাম। বিমানসেবা বলতে এয়ার ইন্ডিয়া এবং জেট এয়ারওয়েজ। দুই সংস্থারই যাত্রী পরিবহণে হিমসিম খাওয়ার জোগাড়। টিকিটের খোঁজ নিলে জবাব মেলে, এক মাসের আগে কোনও আসন ফাঁকা নেই। এই অবস্থায় এয়ার ইন্ডিয়ার এটিআর সেবার কী হবে, তা ভেবেই শিলচরের মানুষ উদ্বিগ্ন।
শিলচর-কলকাতা রুটে ৭২ আসনের নতুন এটিআর চালানোর দাবি উঠেছে। এয়ার ইন্ডিয়া ক’দিন আগে অত্যাধুনিক তিনটি এটিআর কিনেছে। সেগুলিকে দিল্লি বিমানবন্দরে প্রায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর একটিকে এই অঞ্চলে চালানো গেলে সমস্যা মিটে যায় বলে জানান ভুক্তভোগী নিয়মিত বিমানযাত্রীরা।
এই অঞ্চলের প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ কুশল করের কথায়, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়া সপ্তাহে চারদিন এয়ারবাস চালায়। তিনদিন চলে এটিআর। এর পরও বরাকের যাত্রীরা টিকিটের অভাবে বাইরে বেরোতে পারেন না। এখন এটিআর মেরামতে একমাস সময় লাগতে পারে বলে শুনছি। ততদিন এটিআর সেবা বন্ধ থাকলে মানুষের সঙ্কট তীব্রতর হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, বরাকের মানুষ শখে বিমান চড়েন না। জরুরি প্রয়োজনে, বাধ্য হয়েই বিমানের খোঁজ নেন।
শিলচর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল মজুমদার জানান, ‘‘এই অঞ্চলের বিমান যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বরাকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। লোকজনের যাতায়াত বাড়ছে। বাড়েনি বিমানসেবা। বরং আগের চেয়ে কমছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান সময় মতো চলে না। প্রায়ই বাতিল হয়। বাতিল হলে বিশেষ বিমান মেলে না। তাতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। এখান থেকে অনেকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যান, কেউ যান চিকিত্সা করাতে। অনেকে আবার বিমানে কলকাতা পৌঁছে ট্রেন ধরেন। তাঁদের ভোগান্তি অকল্পনীয় বলে মন্তব্য করেন মৃদুলবাবু।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র অবধেশ সিংহ বলেন, ‘‘২৭ ডিসেম্বর আমাদের নেত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শিলচর আসছেন। এই অঞ্চলের বিমান পরিষেবা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব বলে আমরা আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। আরও বিমান দেওয়ার জন্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আজকের ঘটনায় সেই দাবির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেল।’’ বিষয়টি যাতে সুষমাজি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন তার জন্য বরাক বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে অনুরোধ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy