Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাংলা পেল কী, বঞ্চনা বনাম বাস্তবতার তরজা

বাংলার প্রাপ্তির খাতায় তরজা! ইউপিএ-র দ্বিতীয় জমানা প্রায় শেষ। বাংলায় রেল প্রকল্পের অধিকাংশ ঘোষণা কাগজে-কলমেই রয়ে গেল বলে আজ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। অভিযোগ করলেন, রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবাস্তব পরিকল্পনারই ফল এটা।

এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে অধীর চৌধুরী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে অধীর চৌধুরী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৩
Share: Save:

বাংলার প্রাপ্তির খাতায় তরজা! ইউপিএ-র দ্বিতীয় জমানা প্রায় শেষ। বাংলায় রেল প্রকল্পের অধিকাংশ ঘোষণা কাগজে-কলমেই রয়ে গেল বলে আজ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। অভিযোগ করলেন, রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবাস্তব পরিকল্পনারই ফল এটা। আর তৃণমূলের তরফে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করা হল, কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণেই এগোতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গের বহু রেল প্রকল্পের কাজ।

লোকসভা ভোটের মুখে রেলের প্রকল্পগুলি নিয়ে বাংলার মানুষের কাছে জবাবদিহির রাজনৈতিক দায়ও রয়েছে অধীরবাবুর। আগামিকাল লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে চলেছে। তার ঠিক আগের দিন নতুন কিছু স্টেশনে দূর পাল্লার ট্রেন থামানোর কথা ঘোষণা করার পিছনেও সেই দায়ই স্পষ্ট। এর পাশাপাশি রেলের খাতায় বাংলার প্রাপ্তির খাতায় খামতি ও তার দায় নিয়েও রেল প্রতিমন্ত্রী সরব হন এ দিন।

গত পাঁচ বছরে রেল মন্ত্রকে বাংলার যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষবেলায় দেখা যাচ্ছে রাজ্যের অধিকাংশ বড় মাপের রেল প্রকল্প ডানা মেলেনি বাস্তবের মাটিতে। রয়ে গিয়েছে রেল মন্ত্রকের দস্তাবেজেই। রেল কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, বর্তমানে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে। সেই তালিকায় ওই প্রকল্পগুলিও সম্ভবত জুড়তে চলেছে। ফলে আখেরে ক্ষতি হবে পশ্চিমবঙ্গেরই।

দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা ১৬টি কারখানা ঘোষণা করেছিলেন। পরে একই পথে হেঁটে রেলমন্ত্রী হিসেবে বাংলার জন্য একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায়ও। সরকার থেকে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পরে রেল মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হন অধীরবাবু। কেন্দ্রের সরকার ছেড়ে আসার পর থেকেই বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হন তৃণমূল নেতৃত্ব। যে কারণে দায়িত্ব পাওয়ার ছ’মাসের মধ্যেই তৃণমূল নেতৃত্বের ঘোষিত বাংলার প্রকল্পগুলি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন রেল প্রতিমন্ত্রী। তখনও তাঁর দাবি ছিল, রাজ্যের অধিকাংশ রেল প্রকল্পের কোনও বাস্তবভিত্তি নেই। ভোটের মুখে ফের সেই অভিযোগ তুলেই তৃণমূল নেতৃত্বকে বিঁধতে চাইছেন সদ্য প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব পাওয়া অধীরবাবু। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, “তারা সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে সব ক্ষেত্রেই বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে কেন্দ্র। রেলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।”

অধীরবাবু আজ পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখাতে চান, মমতা জমানায় ঘোষিত প্রকল্পগুলিতে বাস্তবতার অভাব। যে কারণে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও অধিকাংশ বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে থেমে গিয়েছে। রেলের যুক্তি, হলদিয়ায় ডিএমইউ কারখানায় বছরে মাত্র আটটি কোচের আসন, লাইট, ফ্যান লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল মমতার মন্ত্রক। ওই কোচগুলিও তৈরি হওয়ার কথা চেন্নাইয়ে। সেখান থেকে তারা প্রায় আটশো কিলোমিটার উজিয়ে আসবে লাইট-ফ্যান লাগাতে। ফলে বাড়বে উৎপাদন খরচ।

যেগুলির ক্ষেত্রে তা-ও কাজ করার সুযোগ ছিল, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় সে সব ক্ষেত্রেও এগোনো যায়নি বলে অধীরবাবু অভিযোগ। তাঁর কথায়, “রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন, কিন্তু রাজ্যের কর্ণধার হিসেবে সেই প্রকল্পগুলির জন্য জমি ছাড়তে রাজি হননি তিনি।” রেল মন্ত্রক সূত্রে দাবি, ডানকুনির ডিজেল লোকো কারখানা, কিংবা বজবজের বগি বা ট্রলি নির্মাণের কারখানার জন্য রাজ্যের কাছে জমি চেয়েও পাওয়া যায়নি। একই সমস্যা ফুরফুরা শরিফের লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রেও হয়েছে। ফলে টাকা থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারেনি রেল। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে থেকেছে রাজ্য সরকার আর দোষ হয়েছে রেল মন্ত্রকের। একই ভাবে রাজনৈতিক ভাবে সিঙ্গুরের কৃষকদের জন্য যেখানে কিষাণ-ভিষাণ প্রকল্প ঘোষণা করা হয় সেখানে যাওয়ার কোনও রাস্তা পর্যন্ত নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি রেল।

অধীরবাবু দায়িত্বে আসার পরেও কিছু ক্ষেত্রে কাজ এগোয়নি আর্থিক বরাদ্দের অভাবে। এর জন্যও তৃণমূলকে দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য কিছু প্রকল্পে তৃণমূল নেতারা বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও কাজ থমকে ছিল। ফলে সেই অর্থের অধিকাংশই ফেরত যায়। ফলে পরবর্তী বছরে সেই প্রকল্পগুলির জন্য টাকা বরাদ্দ করতে সমস্যা হয়েছে বলে দাবি অধীরবাবুর। মমতার পিপিপি মডেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। মমতা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের ওই মডেলে কুলটি, জেলিংহাম, বুনিয়াদপুরে ওয়াগান যন্ত্রাংশ নির্মাণ, নিউজলপাইগুড়িতে রেল অ্যাক্সেল নির্মাণ কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও কোনও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি বলে দাবি করেছেন অধীরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “ওই প্রকল্পগুলির পরিকল্পনাতেই ভুল ছিল। নিজেদের লাভের সুযোগ না থাকায় এগিয়ে আসতে চায়নি বেসরকারি সংস্থাগুলি।”

তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, গত পাঁচ বছরে বাংলার রেল প্রকল্পগুলির অগ্রগতি না হওয়ার কারণ রাজ্যর প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা। এই পাঁচ বছরের বেশ খানিকটা সময় রেলের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা অধীরবাবুও হতাশ। তবে তিনি দুষছেন তৃণমূল নেতৃত্বকে। তাঁর কথায়, “আসলে গোড়ায় গণ্ডগোল। তৃণমূল নেতৃত্বের ঘোষিত রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলির না ছিল কোনও সার্বিক পরিকল্পনা না ছিল কোনও যৌক্তিকতা। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কেবল সস্তা রাজনৈতিক প্রচার পেতেই একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। যে কারণে পরে শত চেষ্টা করেও কাজ শুরু করা যায়নি অধিকাংশ প্রকল্পে।” যদিও বাড়তি খরচের দায় এড়িয়ে নতুন কিছু স্টেশনে ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্তের পিছনেও অধীরবাবুদের ভোট-ভাবনাই প্রকট। সন্দেহ নেই, স্থানীয় ভোটাররা এতে তুষ্ট হলেও, দূরপাল্লার ওই ট্রেনগুলির গতি তাতে কমবেই।

এ বার থামবে

গোবিন্দপুরে ধানবাদ-আলেপ্পি এক্সপ্রেস

নাগরাকাটায় শিলিগুড়ি-ধুবুরি ইন্টারসিটি

নিউ মালে পুরী-কামাখ্যা এক্সপ্রেস

জলপাইগুড়ি রোডে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস

নিউ ময়নাগুড়িতে গুয়াহাটি এক্সপ্রেস

বরাভূমে হাতিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস

শিলিয়ারিতে নাগপুর ইন্টারসিটি

মহম্মদপুর ও রামনাথপুরে শিলচর-ভৈরবী এক্সপ্রেস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anamitra sengupta mamata bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE