Advertisement
E-Paper

ভাঙনে উধাও স্কুল, বিপাকে বাঙালি শিক্ষক

নদীর ভাঙনে বছর তিনেক আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল স্কুলটি। তাতে তৈরি হয়েছে এক গোলকধাঁধা! অভিযোগ, শিক্ষা বিভাগের কর্তারা এ নিয়ে বেশি চিন্তা করেননি। প্রধান শিক্ষক নামেই রয়েছেন, তাঁর স্কুলে যাওয়ার বালাই নেই। পড়ুয়ারা কে কোন ক্লাসে পড়ে, তা নিজেরাই জানে না। এক হাল অভিভাবকদেরও। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি জ্ঞানের বহর সবার সমান। বর্ণের সঙ্গে কারও পরিচয় ঘটেনি। জাতীয় সঙ্গীত কী তা নিয়েও ধন্দে ছাত্রছাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
কাছাড়ের মধুরার সেই স্কুল।—নিজস্ব চিত্র।

কাছাড়ের মধুরার সেই স্কুল।—নিজস্ব চিত্র।

নদীর ভাঙনে বছর তিনেক আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল স্কুলটি। তাতে তৈরি হয়েছে এক গোলকধাঁধা!

অভিযোগ, শিক্ষা বিভাগের কর্তারা এ নিয়ে বেশি চিন্তা করেননি। প্রধান শিক্ষক নামেই রয়েছেন, তাঁর স্কুলে যাওয়ার বালাই নেই। পড়ুয়ারা কে কোন ক্লাসে পড়ে, তা নিজেরাই জানে না। এক হাল অভিভাবকদেরও। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি জ্ঞানের বহর সবার সমান। বর্ণের সঙ্গে কারও পরিচয় ঘটেনি। জাতীয় সঙ্গীত কী তা নিয়েও ধন্দে ছাত্রছাত্রীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রধান শিক্ষক মেহবুব আলম বড়লস্কর আগে মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতেন। নদীর খামখেয়ালে স্কুলঘর ধ্বংস হওয়ার পর থেকে তা-ও বন্ধ। অন্য শিক্ষক অজিত দাস পড়াতে চান। কিন্তু জায়গা কোথায়? সাচিতা বর্মন নামে এক মহিলার বাড়ির একটি ভাঙা ঘরে এখন ক্লাস হচ্ছে। টিনের ছাউনি দেওয়া ওই ঘরে ছাত্রদের বসার ব্যবস্থাও নেই। তার চেয়েও বড় সমস্যা ভাষাগত। ওই ডিমাসা গ্রামের শিশুরা বাংলা বলতে, বুঝতে পারে না। আবার বাঙালি শিক্ষক অজিতবাবু জানেন না ডিমাসা ভাষার কারিকুরি।

উধারবন্দ ব্লক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোপীনাথ সিংহ জানিয়েছেন, “ওই স্কুলে ডিমাসাভাষী কোনও শিক্ষককে নিয়োগ করা হবে। স্কুলঘরের জন্য জমি পেতে রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।”

এমনই স্কুল ছিল কাছাড় জেলার মধুরা পঞ্চায়েতের চলিতাছড়ায়। সেখানে পৌঁছনোর ঝক্কি অনেক। মধুরা কেয়ারি ও বিনোদপুর দু’জায়গায় হেঁটে পার করতে হয় মধুরা নদী। তার পর কিছুটা এগোলে বড়াইল পাহাড়। তার পাদদেশে ছিল ৮০৫ নম্বর চলিতাছড়া নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন সেই ঠিকানা উধাও হয়েছে নদীবক্ষে।

ছাত্রসংখ্যা কত? উত্তর জানেন না অজিতবাবু। কারণ ছাত্রদের হাজিরা খাতা তিনি এখনও পর্যন্ত দেখতেই পাননি। স্কুলে আসার আগে তিনি শুধু প্রধান শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে সরকারি খাতায় সই করে আসেন। এলাকার সোনা বর্মন, সুদেব বর্মন, জয়কান্ত বর্মনরা জানান, প্রধান শিক্ষক সেখানে যান মাসে দু’চার দিন। মিড ডে মিলও পায় না পড়ুয়ারা।

সম্প্রতি ওই স্কুলের হাল দেখতে গিয়েছিলেন ডিমাসা সংগঠনের প্রতিনিধি দল। তাঁরা জানান, স্কুলটিকে ফের গড়তে সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে। প্রধান শিক্ষক মেহবুব আলম বড়লস্কর অবশ্য স্কুলে না যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, দু’বার নদী পেরিয়ে ৮ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। প্রতি দিন ১৫-১৬ কিলোমিটার হাঁটা। তাই মাঝেমধ্যে ছুটি নিতে হয়। বর্ষার সময় ইচ্ছা থাকলেও নিয়মিত যাওয়া যায় না। মিড ডে মিলের প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘টাকা নেই বলে আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিভাগীয় কর্তাদের সব কথা জানিয়েছি।’’

kachar school teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy