Advertisement
E-Paper

মোদী-ঝড় কই, জোশীর প্রশ্নে অস্বস্তি বিজেপিতে

দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথোপকথনে নরেন্দ্র মোদী আজ সকালেও জানিয়েছিলেন, যা হাওয়া রয়েছে, তাতে দল দু’শোর বেশি আসন পেলেও তিনি আশ্চর্য হবেন না। কিন্তু বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর সেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়ে দিলেন দলেরই প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর জোশী। আজ দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দিয়ে জোশী বললেন, “হাওয়া রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাকে মোদী ঝড় বললে ভুল হবে। হাওয়াটা বিজেপি-র অনুকূলে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১২

দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথোপকথনে নরেন্দ্র মোদী আজ সকালেও জানিয়েছিলেন, যা হাওয়া রয়েছে, তাতে দল দু’শোর বেশি আসন পেলেও তিনি আশ্চর্য হবেন না। কিন্তু বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর সেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়ে দিলেন দলেরই প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর জোশী। আজ দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দিয়ে জোশী বললেন, “হাওয়া রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাকে মোদী ঝড় বললে ভুল হবে। হাওয়াটা বিজেপি-র অনুকূলে।”

কেন মোদী ঝড় নয়, তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন জোশী। তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদীকে দল প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছে। উনি বিজেপির প্রতিনিধি। তাই এটা কোনও ব্যক্তিনির্ভর হাওয়া নয়।” একই সঙ্গে তিনি জানান, দেশ ও সমাজ তো বটেই বিজেপিরও সব স্তরের নেতার সমর্থন পাচ্ছেন মোদী।” সরাসরি না বলেও জোশীর ইঙ্গিত, সবাই পাশে আছে বলেই একটা হাওয়া আছে, কিন্তু তা মোটেও মোদী-ঝড় নয়।

জোশী অবশ্য কেবল এটুকু বলেই থেমে থাকেননি। একদা বিজেপি-তে বাজপেয়ী-আডবাণীর প্রায় সমমর্যাদার এই বর্ষীয়ান ব্রাহ্মণ নেতা গুজরাত মডেল নিয়েও আজ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গুজরাতে ‘সুশাসনের’ যে মডেল সামনে রেখে দেশের মন পেতে চাইছেন মোদী, জোশীর মতে, তা সব রাজ্যে প্রযোজ্য নয়। জোশীর কথায়, “ভারতের মতো এতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে কোনও একটা মডেল মাপকাঠি হতে পারে না। হয়তো কোনও বিষয় গুজরাতে ভাল, তো ত্রিপুরায় কোনও কাজ ভাল হচ্ছে।” একই সঙ্গে যশোবন্ত সিংহকে দল থেকে বহিষ্কার করাটাও ঠিক হয়নি বলে আজ দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন জোশী।

বিজেপির অন্যতম প্রবীণ নেতাই যদি এমন বলেন, তা হলে কংগ্রেসের বেশি কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না! কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদের মন্তব্যেও সেটা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “এই কথাটা কংগ্রেস বারবারই বলেছে। এটা ভাল যে বিজেপি নেতারাও তা বুঝছেন!”

স্বাভাবিক ভাবেই জোশীর মন্তব্য নিয়ে বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। রবিশঙ্কর প্রসাদ-সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি ঠিকই। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় মোদী শিবিরের অনেকেই বলছেন, দলেরই একাংশ এ বার অন্তর্ঘাত শুরু করেছে।

বিজেপির অনেকেই বলছেন, দেশ জুড়ে মোদীর হাওয়া বইছে বলে যে প্রচার চলছে, তাতে কংগ্রেসের মতোই হতাশ বিজেপিও একাংশ। সেই দলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, জোশী, যশোবন্ত সিংহ, যশবন্ত সিন্হা, সুষমা স্বরাজ, উমা ভারতী বা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের মতো নেতারা রয়েছেন। গত ক’দিনে এঁরা নানা ভাবে এমন কথা বলেছেন, যা বিজেপি তথা মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। পরে তাঁদের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে বলছেন, তাঁদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। কিন্তু তত ক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাচ্ছে।

মোদীপন্থী এই নেতাদের বক্তব্য, জোশী-সুষমাদের আশঙ্কা মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি একক ভাবে দুশো’র বেশি আসন পেলে দলে তাঁদের কোনও মূল্য থাকবে না। অচিরেই তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। বিজেপির এই নেতারা এখন আডবাণীকেই নেতা মেনে চলছেন। তাঁরা মনে করছেন, যত সহজে যশোবন্তকে মোদী-বাহিনী ছেঁটে ফেলেছে, তত সহজে আডবাণীকে ব্রাত্য করা সম্ভব নয়। তাই আডবাণীকে বোঝাতে মোদীকেও তাঁর বাসভবনে গিয়ে পোহা খেতে হচ্ছে!

বিজেপির এক নেতার কথায়, “সে দিক থেকে বলতে গেলে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র অরুণ জেটলিই মোদীর সঙ্গে রয়েছেন। এমনকী রাজনাথ সিংহ প্রকাশ্যে মোদীর হয়ে সওয়াল করলেও তিনিও পুরোপুরি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর পাশে নেই।” উদাহরণ দিতে গিয়ে ওই নেতা জানান, কিছু দিন আগে টুইটারে ‘অব কি বার, ভাজপা-সরকার’ কথাটি লিখেও বিতর্কের মুখে রাজনাথ সেটিকে বদলে ‘অব কি বার, মোদী-সরকার’ লেখেন ঠিকই, কিন্তু পুরনো টুইট-টি রেখেই দেন!

মজার বিষয় হল, দলে মোদী বিরোধীদের আশ্বস্ত করতে আডবাণী তাঁদের নানা আশ্বাস দিলেও তিনি যে মোদীকে চটাচ্ছেন, তা-ও নয়। আজও গাঁধীনগরে গিয়ে আডবাণী বলেন, “কোনও সংশয় নেই মোদীর নেতৃত্বেই বিজেপি সরকার গড়বে।” সেই সঙ্গে আডবাণী এ-ও জানান যে, বিজেপি সরকার গড়লে তাঁকে যে পদ দেওয়া হবে, তা গ্রহণ করতে তিনি প্রস্তুত। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, আডবাণী দু’দিকের পথই খুলে রাখছেন।

কিন্তু সব মিলিয়ে ভোটপর্বের মধ্যেই বিজেপিতে জল যে ঘোলা হচ্ছে, তাতে সংশয় নেই। দলের একটি সূত্র বলছে, জোশী, সুষমাদের নিরস্ত করতে ইতিমধ্যেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন মোদী-শিবিরের নেতারা। তাঁদের দাবি, ভাগবত তথা সঙ্ঘ নেতৃত্ব এ বার হস্তক্ষেপ করুন। না হলে দলের ক্ষতি হচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, সঙ্ঘের আর্জিও কি শুনবেন জোশীরা? সেটাই এখন মোদী-শিবিরের উদ্বেগ।

narendra modi murli manohar joshi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy