Advertisement
E-Paper

মোদীর মাহাত্ম্য প্রচারে ভিডিও বানালেন নিহালনি

বরফ ঢাকা পাহাড়ের সামনে সামান্য শীতপোশাকে শিবের মত ধ্যানে বসে নরেন্দ্র মোদী। পিছনে হিমালয় না আল্পস, বোঝার উপায় নেই। মৃত্যুর ৬৭ বছর পর ধরাধামে শুধু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই দেখা করতে এসেছেন মহাত্মা গাঁধী। মোদীর জমানায় ঝা-চকচকে শহর গড়ে উঠেছে, যার সঙ্গে হুবহু মিল মস্কোর বিজনেস সেন্টারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ২২:৫৮

বরফ ঢাকা পাহাড়ের সামনে সামান্য শীতপোশাকে শিবের মত ধ্যানে বসে নরেন্দ্র মোদী। পিছনে হিমালয় না আল্পস, বোঝার উপায় নেই। মৃত্যুর ৬৭ বছর পর ধরাধামে শুধু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই দেখা করতে এসেছেন মহাত্মা গাঁধী। মোদীর জমানায় ঝা-চকচকে শহর গড়ে উঠেছে, যার সঙ্গে হুবহু মিল মস্কোর বিজনেস সেন্টারের। একটি ইট-পাথরের কোনও ফারাক নেই। কিংবা তাক লাগানো ফ্লাইওভার। গুগ্‌ল-মামায় ভর করলেই দেখা যায়, সেটি দুবাইয়ের এক্সপ্রেসওয়ে। অথচ দেখানো হয়েছে, ভারতেরই কোনও শহর হিসেবে।

নরেন্দ্র মোদী দিল্লি দখলের ১৮ মাস পর রাতারাতি এত পরিবর্তন ১২৫ কোটি ভারতবাসীর চোখে না পড়ুক, চোখে পড়েছে এক জনের। তিনি সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান পহলাজ নিহালনি। আপাদমস্তক মোদী-ভক্ত। লোকসভা ভোটের সময় এই ব্যক্তিই ‘হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী’ স্লোগান তুলে জনপ্রিয় করেছিলেন। আর এ বারে মোদী জমানায় সেন্সর বোর্ডের দায়িত্ব পেয়ে মোদী-তর্পণে একটি ছ’ মিনিটের ভিডিও বানিয়েছেন। বিভিন্ন হলে সিনেমার ফাঁকে সেটিই দেখানো হচ্ছে। লক্ষ্য, ১৮ মাসে মোদীর সাফল্য তুলে ধরা।

কিন্তু, সেই সাফল্যের স্বপ্নের গরুকে এমন গাছে তুলে দিয়েছেন নিহালনি, যা নিয়ে এখন ক্ষুব্ধ খোদ নরেন্দ্র মোদীই। অবিলম্বে এই ভিডিও প্রদর্শন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরকে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই বার্তা পৌঁছে দিতে। গত কয়েক দিন ধরেই বিতর্কের শিরোনামে রয়েছেন নিহালনি। জেমস বন্ডের ছবিতে চুম্বনের দৃশ্য বাদ দেওয়ার জন্য। অথচ এতদিন ‘শোলা অউর শবনম’, ‘আগ হি আগ’ গোছের যে সব ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি, তাতে সেই অর্থে বাজারি উপাদান কম ছিল না। কিন্তু, এখন তিনি দাবি করেন, বয়সের সঙ্গে ‘সংস্কারি’ হয়ে পড়েছেন।

মোদী-ভজনার ভিডিও বন্ধ করার পিছনে আরও কারণও রয়েছে। লোকসভার সময় যে সব স্বপ্ন মোদী দেখিয়েছেন, সে সব এখনও বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে, কল্পনার শক্তি কোনও ভাবেই আটকে রাখতে পারেনি নিহালনিকে। পরিকাঠামোয় বিদেশি ছবি ধার নিয়ে ‘মোদীর-ভারত’কে তো তিনি কল্পনায় সাফল্য বলে সাজিয়ে তুলেছেন। ভারতের মানুষকে দেখাতে গিয়েও ধার নিয়েছেন ফ্রান্সের। শুধু কি তাই? আকাশেও বাদ যাননি। ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি অনায়াসে এ দেশের কোনও বিমানকে তুলে ধরে দেখানো যেত। কিন্তু, সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান সেখানেও ধার নিয়েছেন আমেরিকার। সে দেশের এফ-১৪ টমক্যাট বিমানকে দেখিয়ে বেমালুম ভারতের বলে চালিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলযান দেখিয়ে ভারতের গর্বকে অনায়াসে মেলে ধরতে পারতেন। ধারেকাছেই যায়নি। ভারতের মহাকাশের সাফল্য তুলে ধরতে জাপানের এইচটিবি-৩, নাসার আটলান্টিস আর ‘ডিসকভারি সাটল’কে দেখিয়ে মোদীর গুণগানে মত্ত নিহালনি। ভোটের সময় ঢাক পিটিয়ে নিজেকে মোদীভক্ত বলতেন। মোদীকে তাঁর ‘অ্যাকশন হিরো’ বলে অ্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। বিজেপি নেতারাই ঘরোয়া মহলে বলছেন, এখন বদান্যতায় এতটাই নুব্জ হয়েছেন যে মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছেন।

মোদীর সাফল্য তুলে ধরতে যে ভিডিও বানিয়েছেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় তো উঠেইছে। তার থেকেও বড় কথা সেটি হাস্যকর জিনিসে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy