Advertisement
E-Paper

মেহদি কি সাইবার-জঙ্গি, ধোঁয়াশা

জেহাদি ভাবধারা প্রচারে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার মেহদি মসরুর বিশ্বাসের বিচরণ শুধুই সাইবার দুনিয়ায় ছিল, এমনটা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ। তাঁদের মতে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনের হয়ে মেহদি আরও বড় কোনও পরিকল্পনার অংশ নিয়েছিলেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদতে কলকাতার উত্তরে বিমানবন্দরের কাছে কৈখালির বাসিন্দা ওই বছর চব্বিশের যুবক। বেঙ্গালুরুতে কর্মসূত্রে গিয়ে তিনি ‘শামি উইটনেস’ নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে লাগাতার আইএসের প্রচার চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছিল একটি ব্রিটিশ চ্যানেল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩

জেহাদি ভাবধারা প্রচারে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার মেহদি মসরুর বিশ্বাসের বিচরণ শুধুই সাইবার দুনিয়ায় ছিল, এমনটা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ। তাঁদের মতে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনের হয়ে মেহদি আরও বড় কোনও পরিকল্পনার অংশ নিয়েছিলেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদতে কলকাতার উত্তরে বিমানবন্দরের কাছে কৈখালির বাসিন্দা ওই বছর চব্বিশের যুবক। বেঙ্গালুরুতে কর্মসূত্রে গিয়ে তিনি ‘শামি উইটনেস’ নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে লাগাতার আইএসের প্রচার চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছিল একটি ব্রিটিশ চ্যানেল। পরে কর্নাটক পুলিশও সেই দাবি সমর্থন করেছে।

শনিবার ভোরে মেহদিকে তাঁর বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করার পর তাঁকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাদের মতে, মেহদি কট্টরপন্থী। শত্রুর মুণ্ডচ্ছেদ বা অপহৃত মহিলাদের যৌনদাসী বানিয়ে রাখাকেও অন্যায় বলে মনে করেন না তিনি।

সোমবার সংসদে বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অবশ্য বলেন, “এখনও পর্যন্ত তদন্তে জানা গিয়েছে, মেহদি মসরুর বিশ্বাস কেবল আইএসআইএসের ভাবধারা ও তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য টুইটার-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা রি-পোস্ট করতেন। তিনি কোনও ব্যক্তিকে আইএসআইএসে যোগদান করিয়েছেন, এমন তথ্য মানতে অস্বীকার করেছে মেহদি।” রাজনাথ বলেন, “টুইটারে মেহদির অ্যাকাউন্টের নাম ছিল শামি উইটনেস। ওই যুবক নিয়মিত ভিত্তিতে আইএসের বিভিন্ন সাইটে যেতেন। সেই সাইটগুলিতে আরবি ভাষায় দেওয়া জঙ্গিদের বক্তব্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পোস্ট করতেন।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, জেরায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মেহদি জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আইএসের বক্তব্য পোস্ট করা বা ভাবধারা প্রচারের বাইরে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না।

সাইবার দুনিয়ায় মেহদির কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তলব করা হয়েছে ভারতে টুইটারের বিপণন বিভাগের প্রধানকে। জনপ্রিয় এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের এ দেশের এক শীর্ষকর্তাকে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। এর আগে টুইটারের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ। মেহদি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য তাঁরা পাচ্ছেন না বলে টুইটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন গোয়েন্দারা। তবে বেঙ্গালুরুর ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গয়াল আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অবশেষে এই বিষয়ে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর টুইটার দিতে শুরু করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “তদন্ত কেবল শুরু হয়েছে। তাই মেহদির গতিবিধি কেবল সাইবার দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল কি না, তা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়। ওই যুবক আরও বড় কোনও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। দেখতে হবে, ওই শিকড় কত দূর গিয়েছে।”

শনিবার, মেহদিকে গ্রেফতার করার পরে কর্নাটক পুলিশের ডিজি এবং বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার দু’জনেই জানিয়েছিলেন, ওই বাঙালি যুবকের সঙ্গে সরাসরি কোনও জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক কিংবা কোনও জঙ্গি সংগঠনের নেতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কোনও প্রমাণ মেলেনি। একটি বহুজাতিক সংস্থার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মেহদির কাজকর্ম যে কেবল সাইবার জগতের মধ্যেই আটকে ছিল, সে কথা ওই দিন বার বার বলেছিলেন ওই দুই শীর্ষ পুলিশ কর্তা।

কিন্তু তার পর হঠাৎ এখন অন্য রকম সুর কেন পুলিশের গলায়?

গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেহদির বিষয়ে তাড়াহুড়ো করে গ্রেফতারি ও আইনের কঠোর ধারা প্রয়োগ করায় কর্নাটক পুলিশের অন্দরেই সমালোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ওই অফিসারদের দাবি, সাইবার দুনিয়ার মধ্যেই মেহদির গতিবিধি আটকে থাকার কথাই যখন প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, তখন চটজলদি ওই যুবককে গ্রেফতার ও সেই ব্যাপারে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার না করলেই ভাল হতো। বরং, মেহদিকে পাকড়াও করে এ সব থেকে বিরত থাকার জন্য বোঝানো যেতে পারত, সতর্ক করা যেতে পারত এবং তার পর নজরদারি রাখতেও অসুবিধে হত না।

কর্নাটক পুলিশের একাংশের মতে, একটি ব্রিটিশ চ্যানেল খবর করে দেওয়া এবং মেহদিকে চিহ্নিত করতে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই সিক্স-এর সহযোগিতাসব মিলিয়ে অনর্থক হইচই করা হল। অথচ ডেনমার্কের মতো দেশ সাম্প্রতিক অতীতে এই ধরনের কট্টরপন্থী প্রচারকদের বুঝিয়ে নিরস্ত করার পথই বেছে নিয়েছিল। আবার হায়দরাবাদ থেকে চার যুবক ইরাকে আইএসে যোগ দিতে বাড়ি থেকে রওনা হলেও শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে তাদের ধরে এনে বোঝানো হয়। তার গ্রেফতার করা হয়নি।

মেহদিকে গ্রেফতার করার পর বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে এখন অন্য রকম বলা হচ্ছে, এমনই সন্দেহ গোয়েন্দাদের একাংশের।

isis twitter handle @shamiwitness mehdi masroor biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy