অসমে কোনও হিন্দু বাঙালিকে উপমুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করার কথা বলে বিতর্কে জড়ালেন শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব। কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলের অন্দরমহলেও এ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। সমালোচনায় সরব হয়েছে বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন সংগঠন।
রাজ্যের পুরভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবি নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে সুস্মিতাদেবী জানান, অসমে বিজেপি-ঝড়ের মুখে দলকে বাঁচাতে বাঙালি উপমুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করা উচিত। তাঁর মন্তব্য ছিল, “মোদী-হাওয়া রুখতে হলে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক দখল করতে হবে। সে জন্য এক জন হিন্দু বাঙালিকে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী করা ভাল।”
এ নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে শিলচরের সাংসদ আজ অবশ্য বলেন, “আমি বরাক-ব্রহ্মপুত্র বা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ করতে চাইনি। সুনির্দিষ্ট ভাবে বাঙালি হিন্দু ভোট সংক্রান্ত প্রশ্নে ওই জবাব দিয়েছি। এ নিয়ে এত হইচই কেন হচ্ছে তা বুঝছি না।” তবে সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য রাজ্য জুড়ে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। দলেও বিরোধিতার মুখে পড়েছেন সুস্মিতাদেবী। তাঁর নিজের জেলার দলীয় সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার বলেন, “হিন্দু-মুসলমান বা বাঙালি-বড়ো-কার্বি হিসেবে নয়, সর্বজনগ্রাহ্য কোনও নেতাই মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী হন।” তাঁর মন্তব্য “সাংসদকে বলেছি, নাগরিকত্বের প্রশ্নে বাঙালিরা যেন হয়রানির শিকার না হন, দলের স্বার্থে সে দিকে নজর রাখতে হবে।” হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেস সভাপতি অশোক দত্তগুপ্তের কথায়, “এ সব না বলে বরাক উপত্যকার উন্নয়নের কথা তুললে ভাল হতো।”
ধর্মীয় বিভেদমূলক মন্তব্য করায় সুস্মিতাদেবীর পাশে দাঁড়াতে নারাজ ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম দত্ত বলেন, “বাঙালিরা দুই উপত্যকায় দীর্ঘ দিন ধরেই বঞ্চনার শিকার। তাঁদের স্বার্থে কেউ কথা বললে আমরা তাঁর পাশে থাকব। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান ভাগ করা হলে আমরা তাতে নেই।”
এর জেরে সুস্মিতাদেবীকে নিশানা করেছে বিজেপিও। শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল বলেন, “কংগ্রেস শুধু বিভেদ, তোষণের রাজনীতি করে। হিন্দু বাঙালিদের জন্য এত চিন্তা থাকলে তিনি নাগরিকত্ব, ডি-ভোটারের মতো সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করতে পারতেন।”
শুধু বরাক নয়, সুস্মিতাদেবীর মন্তব্যের প্রতিবাদে সভা-সমিতি হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতেও। সরব হয়েছেন বাঙালিরা। ‘নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমন্বয় সমিতি’র রাজ্য সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার বলেছেন, “এতে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। তাতে সমস্যা বাড়তে পারে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি সমাজের।”
তাঁর যুক্তি, কংগ্রেস ও অগপ মন্ত্রিসভায় সব সময় বাঙালি প্রতিনিধি ছিলেন। একই বক্তব্য বাঙালি যুব-ছাত্র ফেডারেশনের কার্যবাহী সভাপতি কমল সেনেরও। করিমগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী বিনোদলাল চক্রবর্তীও সুস্মিতাদেবীর সমালোচনায় সরব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy