Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Serial Killer

অসুস্থদের বাঁচিয়ে একদা হিরো ৩০০ মানুষের খুনি! রহস্য ফাঁস কী ভাবে

হোগেলের প্রাক্তন সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে, রোগীকে ওষুধ খাইয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিয়ে যেত সে।

এই চিকিৎসাকর্মীর হত্যালীলায় আতঙ্কিত জার্মান সমাজ। ছবি: এএফপি।

এই চিকিৎসাকর্মীর হত্যালীলায় আতঙ্কিত জার্মান সমাজ। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
অল্ডেনবার্গ, জার্মানি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ১৮:০৪
Share: Save:

জীবন আর মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করতে ভালবাসত এই জার্মান চিকিৎসাকর্মী। ভুল ওষুধ খাইয়ে রোগীদের সে নিয়ে যেত মৃত্যুর কাছাকাছি। তার পর আবার অসুস্থ রোগীদের বাঁচিয়ে সহকর্মীদের কাছে হিরো হওয়ার মজা নিত সে। যদিও অনেক সময়ই তার এই খেলার ধকল সামলাতে না পেরে মারা যেতেন নিরপরাধ রোগীরা। ২০০০ থেকে ২০০৫, এই পাঁচ বছরে জার্মান চিকিৎসাকর্মী নিলস হোগেল-এর শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০০ রোগী, যা তাকে করে তুলেছে বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের সব থেকে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার।

জার্মান শহর ওল্ডেনবার্গের একটি হাসপাতালে কাজ করতেন নিলস হোগেল নামের এই চিকিৎসাকর্মী। কিছু দিনের মধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন, একের পর এক রোগীর রহস্যমৃত্যু হচ্ছে এই হাসপাতালে। মৃত্যুর কোনও কারণ খুঁজে না পেলেও প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই রোগীর আশপাশে দেখা গিয়েছেন হোগেলকে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিকে বাড়ছিল রহস্যমৃত্যুও। কিছু বুঝতে না পেরে হোগেলকে ‘রিলিজ’ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, তার রিলিজ লেটারে লেখা হয়েছিল ভাল ভাল কথাও। সেই চিঠি নিয়েই এই স্বাস্থ্যকর্মী কাজ জোগাড় করে অন্য একটি হাসপাতালে। সেখানেও শুরু হয় একই ঘটনা। চার মাসের মধ্যে হোগেলের দায়িত্বে থাকা পাঁচ রোগীর রহস্যমৃত্যু হয় নতুন হাসপাতালেও।

হোগেলের প্রাক্তন সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে, রোগীকে ওষুধ খাইয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিয়ে যেত সে। কখনও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খাইয়ে রোগীদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট করিয়ে দিত সে। এর পর রোগীকে ফের বাঁচানোর চেষ্টা করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবশ্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন অসুস্থ মানুষেরা।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে মহিলা সাংবাদিককে গুলি করে খুন

জার্মান পুলিশের গোয়েন্দাদের অনুমান, পাঁচ বছরে অন্তত ৩০০ রোগীকে খুন করেছে হোগেল। এতটাই সুক্ষ্ম ছিল তার হাতের কাজ, যে তদন্ত শুরু করতেই দশ বছর সময় লেগে যায় দুঁদে জার্মান গোয়েন্দাদেরও। হোগেলের বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজে বের করতে জার্মানি, তুরস্ক আর পোল্যান্ডের বিভিন্ন করবখানা থেকে ১৩০টিরও বেশি মৃতদেহ বের করে আনেন জার্মান পুলিশের গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত ৪৩টি খুনের কথা নিজেই স্বীকার করেছে সে। ৫২টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার দায় থাকতেও পারে বলে জানিয়েছে হোগেল। আর পাঁচটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার কোনও হাত নেই বলে জানিয়েছে এই সাড়াজাগানো সিরিয়াল কিলার, যা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে কুখ্যাত নাজি জমানার মৃত্যু মিছিলের কথা।

আরও পড়ুন: ইউরোপে আশ্রয়ের স্বপ্নডুবি ৭০ জনের, বাংলাদেশি বেশি

১৫ বছর ধরে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে যে ভাবে হত্যালীলা চালিয়ে গিয়েছে এই খুনি স্বাস্থ্যকর্মী, তাতে হতবাক জার্মান নাগরিক সমাজ। দেশের আইন নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সন্দেহ হওয়ার পরও তদন্ত শুরু করতে এত দেরি করল কেন পুলিশ, উঠছে সেই প্রশ্নও। লাল ফিতের ফাঁস কাটিয়ে পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত, এই নিয়ে এখন একমত সবাই। যদিও সব কিছুর পরও নির্বিকার হোগেল। নিজের থেকে কোনও মৃত্যুর ঘটনাই স্বীকার করছে না সে। পুলিশ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করলে, তবেই সে বলছে তার জড়িয়ে থাকার ভয়ঙ্কর গল্প। এ ভাবেই তার কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৩টি মৃত্যুর স্বীকারোক্তি আদায় করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Serial Killer Serial Killing Germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE