Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
International News

চিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে হংকং প্রসঙ্গ নিরাপত্তা পরিষদে তুলল আমেরিকা, ব্রিটেন

দু’টি দেশই হংকংয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনটির দিকে আঙুল তুলেছে নিরাপত্তা পরিষদে।

সেনা নামানোর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের।—ফাইল ছবি।

সেনা নামানোর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের।—ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ১০:৫৫
Share: Save:

আর শুধুই তোপ দাগা নয়, করোনার ‘বদলা’ নিতে এ বার চিনের পক্ষে অস্বস্তিকর হংকং ইস্যু রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তুলল আমেরিকা। তার পুরনো উপনিবেশ বলে রাষ্ট্রপুঞ্জে সরব হল ব্রিটেনও। দু’টি দেশই হংকংয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনটির দিকে আঙুল তুলেছে নিরাপত্তা পরিষদে। তার ফলে, বেজায় চটেছে চিন। জানিয়েছে, এটা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তোলার মতো কোনও ইস্যুই নয়।

ব্রিটেনের পুরনো উপনিবেশ হংকংয়ে চিনের ভূমিকা নিয়ে শনিবার হোয়াইট হাউসে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “বেজিং হংকংয়ের দীর্ঘ দিনের গর্ব ও ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এটা হংকংয়ের মানুষের পক্ষে তো বটেই, চিন আর গোটা বিশ্ববাসীর পক্ষেও হৃদয়বিদারক ঘটনা।’’

তিনি জানান, এই সবের প্রতিবাদেই হংকংকে দেওয়া কিছু বিশেষ সুযোগসুবিধা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “হংকংকে যে সব বিশেষ সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়, আমি আমার প্রশাসনকে সেই সব প্রত্যাহার করে নিতে বলেছি।’’

সেই বিশেষ সুযোগসুবিধাগুলি কী কী, তা-ও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানিয়েছেন, এর ফলে বন্দি প্রত্যর্পণ, প্রযুক্তি সহায়তা, রফতানির মতো বহু ক্ষেত্রে যেসব সুযোগসুবিধা দেওয়া হত হংকংকে, দু’-একটি বাদে সেইগুলি আর দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন- বারবার বেফাঁস বলে দিল্লির অস্বস্তি বাড়ান ট্রাম্প

আরও পড়ুন- ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে নতুন রাস্তাটা, ঠেকাতে মরিয়া ড্রাগন

মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পায়ো বুধবারই কংগ্রেসে জানিয়েছিলেন, আমেরিকার আইনে এত দিন যে সব সুযোগসুবিধা দেওয়া হত হংকংকে, সেগুলি আর দেওয়া হবে না।

স্বশাসিত হংকংয়ে নিজেদের রাশ টেনে ধরতে ওই এলাকাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনতে চাইছে চিন। বৃহস্পতিবার সেই বিতর্কিত আইন পাশও হয়েছে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে। কিন্তু বেজিংয়ের ওই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে আমেরিকা। সেই চাপ বাড়াতে এ বার নয়া কৌশল নিল ওয়াশিংটন। চিন ওই আইন পাশের পর দিনই, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এত দিন ধরে তাঁরা হংকংকে যে সব সুবিধা দিয়ে আসছিলেন তার কয়েকটি প্রত্যাহার করা হবে। হংকংকে রফতানি-সহ নানা ক্ষেত্রে সুবিধা দিয়ে আসছিল আমেরিকা। সেই সব সুবিধা কেড়ে নেওয়ার পথেই হাঁটছে ট্রাম্প প্রশাসন।

শুধুই হংকং নয়, মার্কিন দেশে আগত চিনা পড়ুয়াদের একাংশের উপরেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে চলেছে আমেরিকা। চিনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়াদের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘‘বছরের পর বছর ধরে চিনা সরকার আমাদের শিল্পের গোপন তথ্য হাতিয়ে দেওয়ার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।’’ ট্রাম্পের এই অভিযোগের ভিত্তি এফবিআইয়ের দেওয়া তথ্য। তাতে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রযুক্তি চুরির এক হাজার অভিযোগের তদন্ত করছে মার্কিন ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি, যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য বলছে, আমেরিকায় আগত বিদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে চিন থেকেই সবথেকে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আসে। সেই সংখ্যাটা তিন লক্ষ ৭০ হাজারের মতো। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সেই প্রক্রিয়া এমনিতেই বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে।

দুনিয়া জুড়ে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নিয়ে চিন ও আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হংকং ইস্যু। বিশ্ব জুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই স্বশাসিত ওই এলাকায় নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। বৃহস্পতিবার প্রায় বিনা বাধায় ওই বিতর্কিত আইন পাশ হয়ে গিয়েছে চিনে। এরপর এনপিসির স্ট্যান্ডিং কমিটি ওই আইনটির খসড়া তৈরি করবে। তারপর সেটি ঘোষণা করা হবে। সে জন্য অবশ্য মাস দু’য়েক সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আইন পাশ হতেই ফের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে হংকং।

এক সময় ভাইরাসের উৎস নিয়ে নিয়ম করে চিনকে বিঁধছিলেন ট্রাম্প। বেজিংয়ের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, চিনকে আড়াল করতে গিয়ে বিশ্বকে করোনা-সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে হু। এই অভিযোগ তুলে হু-এর অনুদানও স্থগিত করে দিয়েছিলেন তিনি। এর মাঝেই তিনি ঘোষণা করেছেন হু-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তাঁর দেশ। এখন, আমেরিকার চিন বিরোধিতার তালিকায় যোগ হয়েছে হংকং ইস্যুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump US China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE