হ্যান্ডবিল, মাইকে প্রচার, কড়া পদক্ষেপের হুমকি - কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি। রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর জুড়ে দামাল শুয়োরের দাপট কিছুতেই কমছিল না। অগত্যা শুয়োর ধরতে শনি, রবি সপারিষদ পথে নেমেছিলেন জঙ্গিপুরের পুর-কর্তৃপক্ষ। যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতারাও। আর কয়েকজন পুরকর্মী। শনিবার ও রবিবার এই দু’দিনে শহর ঢুঁড়ে প্রাপ্তি বলতে মোটে একটা শুয়োর। বাকিরা তাহলে গেল কোথায়? “খবর-টবর দেখে গা ঢাকা দিয়েছে বোধহয়” বিরক্ত হয়ে জবাব এক পুরকর্মীর।
সকাল থেকে শুয়োরের পিছনে দৌড়তে দৌড়তে পুরকর্মীরা বিরক্ত হলেও ধনুকভাঙা পণ নিয়ে পথে নেমেছিলেন খোদ পুরপ্রধান। শুয়োর দেখলেই গাড়ি থামিয়ে লাফ দিয়ে নেমে পড়ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ প্রচারের আলোয় চলে আসা বরাহদেরও যে এত বুদ্ধি কে জানত! পুরপ্রধানকে দৌড়তে দেখে তারাও হাওয়া। দিনভর এই শুয়োরের পিছনে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে পুরপ্রধানের তখন গলদঘর্ম অবস্থা।
রাজ্য জুড়ে শুয়োর নিয়ে সতর্কতার মধ্যেই জঙ্গিপুরে শুয়োরের অবাধ বিচরণের ছবি ও খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতেই হইচই শুরু হয় জেলা প্রশাসনে। এরপরে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, শহর থেকে শুয়োর সরানোর দায়িত্ব নিতে হবে পুরসভাকেই। ফলে পুরকর্তৃপক্ষ এখন সময় পেলেই কর্মীদের নিয়ে পথে নেমে পড়ছেন। নাওয়া খাওয়া শিকেয় উঠেছে। ছুটির দিনেও রেহাই মিলছে না। কিন্তু বরাহকুলের তেমন খোঁজ মিলছে কই? অথচ শহর জুড়ে শুয়োরের সংখ্যা তো খুব কম নয়। পুর-কর্তৃপক্ষের হিসাবে, কয়েকশো তো বটেই।
যে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে শুয়োরের অত্যাচারে লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন, সেখানেও দেখা মেলেনি একটিরও। শনিবার দিনভর কসরতের পর একটা শুয়োর পাকড়াও করতেই পুরকর্মীদের আনন্দ দেখে কে! আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে তাকে তোলা হল ভ্যানরিকশায়। কর্মীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন শুয়োর ধরার বিরল দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে। শুয়োর অভিযান সেদিনের মতো শেষ। গাড়িতে ওঠার সময় পুরপ্রধানের মোবাইলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মেসেজ‘জাপানি এনসেফ্যালাইটিস থেকে বাঁচতে শুয়োর থেকে দূরে থাকুন। শুয়োরের খোঁয়াড় থাকলে সেখানে নিয়মিত ধোঁয়া দিন।’ “এই শুয়োরের জন্য কপালে আরও কী কী দুর্ভোগ আছে কে জানে!” মোবাইল পকেটে রাখার সময় বিড়বিড় করেন পুরপ্রধান।