মিথ্যা বলে সাময়িক ভাব পার পেয়ে যাওয়া যতটা সহজ, পরে তা সামলানো ততটাই কঠিন। এই মিথ্যার কারণেই ভেঙে যায় সম্পর্ক, বন্ধুত্ব। হারিয়ে যায় বিশ্বাস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যা বলাটা একটা স্বভাব। যারা মিথ্যা বলে তাদের এই অভ্যাসের কারণে কষ্ট পায় কাছের মানুষেরা। অথচ মিথ্যাবাদীদের তাতে বিশেষ কিছু যায় আসে না। মিথ্যা বলা কখনই আটকাতে পারবেন না। বরং মিথ্যাবাদীদের থেকে সাবধান থাকাই ভাল। কী ভাবে বুঝবেন মিথ্যা কথা? কিছু লক্ষণ বলে দিচ্ছেন মনোবিদরা।
সত্যি বলতে কী…
আমরা হয়তো ভেবেই নিই যে কেউ সত্যি কথাই বলছে। কিন্তু মিথ্যেবাদী যেহেতু জানে সে মিথ্য কথা বলছে তাই বিশ্বাস করানোর জন্য, ‘সত্যি কথা বলতে কী’…বা ‘বিশ্বাস কর’ এই ধরনের শব্দবন্ধ বেশি ব্যবহার করেই থাকে।
বুঝিয়ে বলছি/বিশদে বলতে গেলে…
মিথ্যেবাদীদের ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিজেদের বানানো গল্প মনে করে নিতে হয়। তাই অনেক সময়ই খুব বেশি খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করলে তারা নিজেদের গল্প বিশ্বাস করাতে চায়। যেমন, ‘‘ঠিক সাড়ে ১২টার সময় আমি দেখলাম প্রচণ্ড ঝড়ে গাছটা পড়ে গেল।’’ এ রকম ব়ড় ঘটনার সময় খুব কম লোকেরই নিখুঁত ভাবে সময় খেয়াল করার কথা মনে থাকে।
আমি কখনই করি না/আমি সব সময় করি
কখনই বা সব সময়ের মতো শব্দ বেশির ভাগ সময় মিথ্যাই হয়ে থাকে। কারণ, আমরা প্রায় কোনও কিছুই ‘কখনই করি না’ বা ‘সব সময় করি’ এমনটা হয়। কিন্তু মিথ্যেবাদীরা বিশ্বাস করানোর জন্য এই শব্দগুলো বলে থাকে।
কথার মধ্যে ‘ওরা’, ‘সে’, ‘আমরা’ বেশি ব্যবহার করা, ‘আমি’ প্রায় ব্যবহার না করা
কোনও কথার দায় মিথ্যাবাদীরা নিতে চায় না। ফলে আমি শব্দের বদলে তারা ওরা, সে, আমরা ব্যবহার করে দায় এড়াতে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী মিথ্যাবাদীরা—
১। খুব বেশি নেগেটিভ অনুভূতি, যেমন ঘেন্না, বিরক্তি, রাগ, দুঃখ, প্রকাশ করে
২। ‘কিন্তু’ বা ‘তা ছাড়া’ জাতীয় শব্দ এরা প্রায় ব্যবহার করেই না
এই সমীক্ষার জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ৬৭ শতাংশ নিখুঁত ভাবে লাই ডিটেকশন করতে পারে বলে দাবি করেন গবেষকরা। এর আগে ব্যবহৃত লাই ডিটেক্টর মাত্র ৫২ শতাংশ সঠিক ভাবে এই কাজ করতো বলে দাবি তাঁদের।
‘না’, ‘যুক্তি-প্রমাণ’, ‘কম কথা’
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশন বিভাগের গবেষকরা তাঁদের জাতীয় সমীক্ষায় দেখিয়েছেন কী ভাবে মার্কিন নাগরিকরা রোজকার জীবনে মিথ্যা বলে থাকেন। ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে এক হাজার মার্কিন নাগরিককে নিয়ে সমীক্ষা করে তাঁরা দেখেন, তাঁদের ৬০ শতাংশ সারা দিনে একবারও মিথ্যা বলেননি। ৪০ শতাংশ কোনও না কোনও ভাবে মিথ্যা বলেছেন। মিথ্যাবাদীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মিথ্যা বলেছেন। গবেষকরা দেখিয়েছেন, নিজেদের জীবনের কোনও অপ্রীতিকর বিষয়ে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যাবাদীরা তা অস্বীকার করে। কোনও ক্ষেত্রে যুক্তি বা প্রমাণ না চাইলেও তারা নিজেদের আচরণ সম্পর্কে যুক্তি দিতে উদ্যত হয়। অনেক সময়ই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এরা অল্প কথায় কাজ সেরে ফেলতে চায়।
আরও পড়ুন: একাকী সময় কাটানো মানেই একাকিত্ব নয়
এই শব্দগুলো ব্যবহার করা মানেই কি কেউ মিথ্যা বলছেন?
মনসমাজকর্মী মোহির রণদীপ বলছেন, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোনও সমীক্ষারই একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা ঠিকই যে কিছু কিছু শব্দ শুনলে মনে হয় কেউ কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন, বা এর গভীরেও হয়তো কোনও কথা রয়েছে। আবার ভেবে দেখুন কিছু কথা আঞ্চলিক ভাবেই আমাদের ভাষার মধ্যে চলে আসে। যেমন, বাঙালিরা বিশ্বাস কর বা মা কালীর দিব্যি, এই ধরনের কথাগুলো ব্যবহার করে থাকেন। তার মানে কি যারা এগুলো বলছেন তারা মিথ্যা বলছেন? হয়তো অভ্যাসবশতই তিনি ওই কথাটা বলে থাকেন। অতটা সচেতন ভাবে বলেন না। তাই কারও কোনও কথা শুনে যদি মনে সন্দেহও জাগে, তা হলে আমরা অনুমান হয়তো করতে পারি, কিন্তু সব সময় তিনি মিথ্যাই বলছেন এমনটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে অবশ্যই ভেবে দেখুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy