শনিবার সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে ‘অতুল্য গঙ্গা’র তিন সদস্যের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা।
তিন জনেই এক সময়ে দেশের জন্য লড়াই করেছেন। এখনও তাঁদের লড়াই চলছে। তবে সীমান্তে নয়। তিন প্রাক্তন সেনার লড়াই এখন দেশের অভ্যন্তরে, দেশকে বাঁচাতে। লড়াইয়ের নাম ‘অতুল্য গঙ্গা’।
সকলে বলে থাকেন ভারতের প্রাণ প্রবাহিত হচ্ছে গঙ্গার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সেই গঙ্গার নিজের প্রাণই এখন ওষ্ঠাগত। দূষণের চোটে এখন তার জলে বিষের মাত্রা বেড়েছে। সেই গঙ্গাদূষণের বিরুদ্ধে লড়তেই পথে নেমেছেন এই তিন প্রাক্তন সেনা। তাঁদের নাম হেম লোহুমি, গোপাল শর্মা এবং মনোজ কেশ্বর। ইলাহাবাদ থেকে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর গঙ্গার পূর্ব পাড় ধরে হাঁটা শুরু করেন ওই তিন জন। শনিবার বিকেলে কলকাতায় এসে পৌঁছয় দলটি। তিন প্রাক্তন সেনার সঙ্গে শহরে এসেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েক জন সদস্য। কলকাতা থেকে তিন দিনে তাঁরা হেঁটে পৌঁছবেন গঙ্গাসাগর।
এখানেই শেষ নয়। গঙ্গাসাগর থেকে আবার উল্টো পথে হেঁটে গঙ্গার উৎসস্থল গোমুখে পৌঁছবেন তাঁরা। সেখান থেকে আবার ইলাহাবাদ। তবে ফেরার পথের পুরোটাই হবে গঙ্গার পশ্চিম পাড় ধরে। সব মিলিয়ে ৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটার পরিকল্পনা রয়েছে এই তিন প্রাক্তন সেনার। ভেবে রেখেছেন, সময় লাগবে ৭-৮ মাস।
কেন এমন ভাবনা? এ দিন সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে দলের অন্যতম সদস্য মনোজ কেশ্বর আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘গঙ্গাকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত করাই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। গঙ্গার জলে যেন আর এক ফোঁটা দূষিত বস্তু না থাকে, সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা পথে নেমেছি।’’
ঠিক কী ভাবে গঙ্গাদূষণ বন্ধের কথা ভাবছেন তাঁরা? মনোজ জানালেন, এই প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হল, গঙ্গাদূষণের মানচিত্রীকরণ করা। ‘‘প্রতি ৫ কিলোমিটার অন্তর জলের গুণমান পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, যেখানে-যেখানে কোনও নালা এসে গঙ্গায় মিশেছে, সেই নালা বা উপনদীর জল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তাতে দূষণের মাত্রা কতটা। এ থেকেই বোঝা যাবে, কোন এলাকায় নদী কতটা দূষিত বস্তু গ্রহণ করছে’’, বলছেন তিনি।
কিন্তু তিন প্রবীণের লড়াই কি পারবে গঙ্গাকে সাফসুতরো করে ফেলতে? দলটি পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জায়গায় থাকবে, কাজকর্ম কী হবে, তার পুরোটাই ঠিক করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রাজ্যে এই প্রোজেক্টের ভারপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নীলয় চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘যে সব জায়গায় ‘অতুল্য গঙ্গা’র দল থেকেছে, সেই সব ছোট শহর, গ্রাম বা পাড়ায় পাড়ায় ‘গঙ্গাগোষ্ঠী’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রবীণরা নন, নবীনরাই বেশি মাত্রায় এগিয়ে এসেছেন।’’
কিন্তু মাত্র ৩ জনের উদ্যোগে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব কি? মনোজের গলায় আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত। ‘‘আমরা শুরুটা করেছি। অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এ বার এগিয়ে আসছে আমাদের দেখে। কোনও কোনও দিন পথে সঙ্গও দিচ্ছেন সংগঠনের সদস্যেরা। সকলে একসঙ্গে লড়লে এ লড়াই মোটেই কঠিন হবে না।’’ বলতে বলতেই দ্রুত হাঁটা দিলেন তাঁরা। গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে। সাগর-প্রমাণ দূষণকে সাফ করাই উদ্দেশ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy