Advertisement
E-Paper

টিভির পর্দায় রঙিন মাছের ঝাঁক, প্রবাল দেখেছেন, সমুদ্রের নীচের জগৎ চাক্ষুষ করবেন কী ভাবে?

সমুদ্রের নীচে রয়েছে আর এক জগৎ। সে জগতের রঙিন ছবি টেলিভিশন বা সিনেমার পর্দায় দেখলেও, প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা খুব কম জনেরই আছে। যে কোনও বয়েসিরা, সমুদ্রের প্রাণিজগৎ চাক্ষুষ করতে পারেন খুব সহজেই। জেনে নিন উপায়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৬
সমুদ্রের নীচেও রয়েছে এমন এক জগত, যার আহ্বান এড়ানো কঠিন। এমন রূপ উপভোগে কোথায় যাবেন?

সমুদ্রের নীচেও রয়েছে এমন এক জগত, যার আহ্বান এড়ানো কঠিন। এমন রূপ উপভোগে কোথায় যাবেন? ছবি: শাটারস্টক।

গাছপালা, পশুপাখি, নদী-পাহাড়— এ সব যদি বিস্ময় জাগায়, তবে সেই অভিজ্ঞতাকে গুনে গুনে দশ গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সমুদ্রের নীচের অদেখা জগৎ। সেই জগতের সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষের পরিচয় মূলত টেলিভিশনের পর্দায়। একাধিক টিভি চ্যানেলে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এমন অনেক তথ্যচিত্র রয়েছে, যা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। সমুদ্রের নীচের জগৎ নিয়ে সিনেমাও কম হয়নি। আবার বহু সিনেমায় সুচারু ভাবে সেই সৌন্দর্য ব্যবহৃতও হয়েছে। যেমন হিন্দি ছবি ‘জিন্দেগি মিলেগি না দোবারা’য় দেখানো স্কুবা ডাইভিং-এর দৃশ্যটি মনে দাগ কেটে যায়।

কিন্তু এ সবই তো ছবির পর্দায় দেখা যায়। তা কি প্রত্যক্ষ করার কোনও উপায় আছে? অনেকেই বলবেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে সমুদ্রের নীচের জীবজগৎ দেখা হবে না, কারণ সেই সাহস নেই। তবে সমুদ্রের নীচের দৃশ্য, জীবজগৎ প্রত্যক্ষ করা যায় খুব কাছ থেকে। ভারতের কোথায় গেলে এবং কী ভাবে সেই দৃশ্য উপভোগ করা যায়?

গ্লাসবটম বোট

সমুদ্রের তলদেশের জীবজগৎ, মাছের ঝাঁকের ঘুরে বেড়ানো প্রত্যক্ষ করার সবচেয়ে সহজ এবং ভাল উপায় হল গ্লাসবটম বোট। ছোট ছোট যন্ত্রচালিত নৌকোর মাঝের অংশে থাকে এমন স্বচ্ছ কাচ, যা দিয়ে সমুদ্রের নীচের জীবন স্পষ্ট দেখা যায়। বিশেষ বিশেষ জায়গায়, যেখানে সমুদ্রের নীচে প্রবাল, মাছ, পাথর, প্রাণীর আনাগোনা যথেষ্ট সেখানে পর্যটকদের জন্য এই ধরনের নৌকো চালু রয়েছে। এক ঘণ্টা বা আধ ঘণ্টার সময়সীমায় তা বুকিং করা যায়।

ভারতের নানা প্রান্তে এই ধরনের নৌকো চেপে সামুদ্রিক জীবন দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ভাল অভিজ্ঞতাটি হতে পারে আন্দামানের জলিবয় দ্বীপে। এই দ্বীপ প্রবাল যাতে সঠিক ভাবে বংশবৃদ্ধি করতে পারে সে জন্য নানা ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটকদেরই যাওায়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এখানে প্রবাল খুব ভাল দেখা যায়। এ ছাড়াও আন্দামানেই নীল আইল্যান্ডের ভরতপুর সমুদ্র সৈকত, পোর্টব্লেয়ারের কাছে নর্থ বে আইল্যান্ড এবং হ্যাভলকেও গ্লাসবটম বোটে চাপার সুবিধা মেলে। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ‘গালফ অফ মেরিন ন্যাশনাল পার্ক’-এও গ্লাসবটম বোট চালু রয়েছে। আর এই সুযোগ পেতে পারেন লক্ষদ্বীপের একাধিক স্থানেই।

সেমি সাবমেরিন

সেমি সাবমেরিন বা ডুবো জাহাজ থেকেও সমুদ্রের প্রাণিজগতকে চাক্ষুষ করা যায়।

সেমি সাবমেরিন বা ডুবো জাহাজ থেকেও সমুদ্রের প্রাণিজগতকে চাক্ষুষ করা যায়। ছবি: সংগৃহীত।

আন্দামানেই রয়েছে সেমি সাবমেরিন চাপার সুযোগ। যেখানে সাবমেরিনের কাচের জানলা দিয়ে সমুদ্রের তলদেশের জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নর্থ-বে আইল্যান্ডেই রয়েছে সেই সুযোগ। এক ঘণ্টার প্যাকেজ। বয়স্ক, শিশু— সকলেই এটি চাপতে পারেন। গুজরাতের দ্বারকাতেও অদূর ভবিষ্যতে এমন পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

স্নরকেলিং

সমুদ্রের উপরিভাগে ভেসে বা সাঁতরে, সমুদ্রের নীচের জীবন চাক্ষুষ করার এক ক্রীড়া হল স্নরকেলিং। এই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য সাঁতার জানাটা সব সময় জরুরি নয়। অনেক জায়গাতেই টিউব ধরতে দেওয়া হয় পর্যটকদের। সেটি ধরে পর্যটকেরা সমুদ্রের উপরে সহজে ভাসতে পারেন। স্নরকেলিং করার জন্য ‘স্নরকেল’ নামক বিশেষ নল ব্যবহার দেওয়া হয় যার সাহায্যে শ্বাস নিতে হয়। কারণ, এই জলক্রীড়ায় মুখে একটি মাস্ক দেওয়া হয়। তার সঙ্গেই থাকে স্নরকেল। আর কোথাও সাঁতারের সুবিধার জন্য দেওয়া হয় ফিন, যা পায়ে পরানো হয়।

আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপের এলিফ্যান্ট বিচ, নর্থ বে আইল্যান্ডে জলের তলদেশের সামুদ্রিক উদ্ভিদ এবং প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। লাক্ষাদ্বীপের আগাত্তি দ্বীপ, কাভারত্তি দ্বীপ, বঙ্গারাম অ্যাটল, কদমত দ্বীপেও স্নরকেলিং হয়। এখানে খুব ভাল প্রবাল দেখা যায়। গোয়ার গ্র্যান্ড আইল্যান্ডে স্নরকেলিংয়ের সুবিধা মেলে। এ ছাড়া, কর্নাটকের নেত্রাণী দ্বীপ-সহ তামিলনাড়ুর কোনও কোনও স্থানে স্নরকেলিং করানো হয়।

আন্ডারওয়াটার সি ওয়াকিং

সমুদ্রের নীচে এই ভাবে হাঁটাও যায়।

সমুদ্রের নীচে এই ভাবে হাঁটাও যায়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

সমুদ্রের নীচে হেঁটে হেঁটে মাছ, প্রাণী, প্রবাল দেখার সুযোগ মেলে এই ক্রীড়ায়। জলে নামানোর আগে কিছু সঙ্কেত শিখিয়ে দেওয়া হয়, যা সমুদ্রের তলদেশে বার্তা আদান-প্রদানে সাহায্য করবে। কারণ, সমুদ্রের নীচে কথা বলা যায় না, বললেও তা দ্বিতীয় কারও কানে আসবে না। জলে নামানোর ঠিক আগের মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ একটি হেলমেটের মতো জিনিস পরিয়ে দেওয়া হয়। সেটি পরানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিতে হয়, যাতে সমুদ্রের নীচে পৌঁছনো যায়। সেখানেও লোক থাকেন, যাঁরা হাত ধরে নীচের কিছু জায়গা দেখান। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ দেখা যায়।

আন্দামান, লক্ষদ্বীপ-সহ বিভিন্ন জায়গায় এই সুযোগ মেলে। আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপ, এলিফ্যান্ট সমুদ্র সৈকতে এই সুযোগ মেলে। এ ছাড়াও রস আইল্যান্ডে এই জলক্রীড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

স্কুবা ডাইভিং

স্কুবা ডাইভিং সবচেয়ে ভাল উপায় সমুদ্রের তলদেশের জীবন প্রত্যক্ষ করার জন্য।

স্কুবা ডাইভিং সবচেয়ে ভাল উপায় সমুদ্রের তলদেশের জীবন প্রত্যক্ষ করার জন্য। ছবি: সংগৃহীত।

স্কুবা ডাইভিং হল, সমুদ্রের তলদেশের সামুদ্রিক জীবন দেখতে জলের তলায় ডুব দেওয়া। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট পোশাক, সরঞ্জাম আছে। নিয়ে যেতে হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারও। স্কুবা ডাইভিংয়ের আগে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পর্যটকদের ক্ষেত্রে সঙ্গে একজন কেউ থাকেন, যিনি বিষয়টি পরিচালনা করেন। প্রাথমিক ধাপে স্কুবা ডাইভিং করার জন্য সাঁতার না জানলেও চলে।

আন্দামান, লক্ষদ্বীপ, পুদুচেরি, কর্নাটক, গোয়ায় স্কুবা ডাইভিং করা যায়। পুদুচেরির টেম্পল রিফ, ফোর কর্নারস্‌, দ্য হোল, র‌্যাভাইনস্ এই জায়গাগুলি থেকে স্কুবা ডাইভিং করা যায়। চাইলে এখান থেকে স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণও নিতে পারেন কেউ। স্কুবা ডাইভিং হয় আন্দামানের বিভিন্ন দ্বীপেও। তার মধ্যে রয়েছে হ্যাভলক, নীল, রস। পর্যটকদের জন্য মিনিট ১৫-র স্কুবা ডাইভিং করানো হয়।

Travel Tips Scuba Diving Snorkeling Port Blair
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy