ওজন কমানো মানেই কৃচ্ছ্রসাধন। মেদ ঝরানো মানেই পছন্দের খাবার পরিত্যাগ। রোগা হওয়া মানেই নুন-তেল ছাড়া সেদ্ধ স্বাদহীন খাবার খাওয়া। এমন ধারণা নিয়ে চলেন অনেকেই। ফলে ওজন ঝরানোর পথে হাঁটা শুরু করেও কেউ কেউ থমকে যান। আর এখানেই প্রয়োজন সঠিক পরামর্শের। ঠিক যেমন ভাবে ঘি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসানের চেষ্টা করে চলেছেন পুষ্টিবিদ ঋজুতা দিবেকর, যেমন ভাবে ভাতকে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করছেন পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী, তেমন ভাবেই পুণের পুষ্টিবিদ এবং ফিটনেস প্রশিক্ষক মোহিতা মাসকারেনহাস জানাচ্ছেন, পছন্দের বিরিয়ানি খেয়েও ওজন কমানো যায়।
মনে পড়ে যায়, অভিনেতা রণবীর কপূর দেহের আকারে বদল আনার জন্য এক সময়ে দেড় বছর টানা নির্দিষ্ট খাদ্যাতালিকা মেনে চলেছিলেন। সে সময়ে নৈশভোজে মাঝেমধ্যে বিরিয়ানিও খেতেন তিনি। কারণ, বিরিয়ানি মানেই যে অস্বাস্থ্যকর, তা নয়। চালের পাশাপাশি বিরিয়ানিতে ডিম, মাংস ইত্যাদি সব থাকে। ফলে একটি খাবার থেকেই তিনি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট শরীরে পৌঁছে যেতে পারে।
বিরিয়ানি খান বিনা সঙ্কোচে। ছবি: সংগৃহীত।
তা হলে বিরিয়ানি খেয়ে ওজন কমানোর কোন টোটকার কথা বলছেন পুণের পুষ্টিবিদ?
রান্নার কৌশল আর উপকরণের পরিমাণ একটু পাল্টালেই বিরিয়ানি খেয়ে মেদ কমানো সম্ভব বলে দাবি মোহিতার। সবচেয়ে আগে যা দরকার, তা হল, লিন প্রোটিন। তাই মুরগির চর্বিহীন অংশ ব্যবহার করাই ভাল। চালও মাপমতো রাখতে হবে। যদি ২০০ গ্রাম চালে বিরিয়ানি রান্না করেন, তা হলে ৪০০ গ্রাম বোনলেস চিকেন নিতে হবে, যেগুলি টুকরো টুকরো করে রাখতে হবে আগে থেকে। ১০০ গ্রেম গ্রিক ইয়োগার্ট এবং মশলাপাতি দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে মাংস। ম্যারিনেট করা মাংস ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। চাল ধুয়ে রেখে দিতে হবে আধ ঘণ্টা মতো।
গন্ধ এবং স্বাদ বজায় রাখতে মশলার ব্যবহার চলবে, তবে কোনও কিছুই যেন ছাঁকা তেলে ভাজা না হয়। পেঁয়াজ ডিপ ফ্রাই না করে খুব সামান্য ঘিয়ে (১ টেবিল চামচ) হালকা সাঁতলে নিলেই যথেষ্ট। চাইলে পেঁয়াজ এয়ার ফ্রায়ারেও দেওয়া যেতে পারে। এতে তেল কম লাগে আর ক্যালোরিও কমে যায়। বাকি পদ্ধতি এবং উপকরণ নিজের পছন্দ মতো পরিমাণে যোগ করে দেওয়া যায় এর পর। তবে বিরিয়ানির সঙ্গে সব্জি ভরা রায়তা রাখলে ভাল। গ্রিক লো-ফ্যাট ইয়োগার্ট আর সব্জি দিয়ে তৈরি রায়তা ৩০০ গ্রাম খাওয়া যায়।
এর পর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা হল পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ। এই রেসিপিটি চার জনের জন্য ধরলে এক জনের অংশ হবে মোট বিরিয়ানির এক চতুর্থাংশ। এই পরিমাণে থাকে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি আর প্রায় ৩০ গ্রাম প্রোটিন, যা ওজন কমানোর ডায়েট হিসেবে যথেষ্ট সুষম।
পুষ্টিবিদের মতে, এই দুই নিয়ম মানলেই বিরিয়ানি আর ‘অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার’-এর তকমা পাবে না। সঠিক কৌশলে তৈরি করলে এটি ওজন কমানোর পথেও সহায়ক হয়ে ওঠে। তাই যাঁরা ওজন কমানোর সময়ে প্রিয় খাবারটি দূরে ঠেলে রাখেন, তাঁদের জন্য কাজে আসতে পারে মোহিতার এই কৌশল।