সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই ঘরদোর পরিষ্কার করার মানুষটি হাজির। তাকে কাজ বুঝিয়ে আপনি গেলেন রান্নাঘরে। রাঁধুনিকে সকাল থেকে রাতের রান্নাবান্না বুঝিয়ে দিতে হবে। দেখতে হবে ফ্রিজে কী কাঁচা বাজার রয়েছে, মুদির দোকান থেকে কিছু আনার দরকার আছে কি না। কারণ, সে সব নিয়ে আসতে হবে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে। এর পাশাপাশি, বাড়িতে কখনও জলের কলের সমস্যা, রান্নাঘরের চিমনির সমস্যা, জলের পাম্প থেকে শুরু করে বিদ্যুতের সংযোগ— নানা রকম সমস্যা হতে পারে একটা বাড়িতে সংসার চালাতে হলে। সেই সবও খেয়াল করতে হবে। দরকার মতো ডাকতে হবে, মেরামতের মিস্ত্রী। খেয়াল রাখতে হবে নানা রকম বিল পেমেন্ট করার কথাও। আর এই সব সামলে অফিস যাওয়া, কাজ সামলানো, পরিস্থিতির সাপেক্ষে বসের বকুনিও সামলানো। আর বাড়িতে যদি সন্তান থাকে তবে তাকে সামলানোও একটা বড় কাজ। এই সব কিছু করতে হয় বাড়ির কর্ত্রীকে। বা তাঁর অভাবে কর্তাকেই। কেমন হয় যদি এই সব কিছু আপনার হয়ে অন্য কেউ সামলে দেন? আর কেমন হয় যদি এই সব কাজ করে মাসে লক্ষ টাকা উপার্জন করা যায়? দেখা যাচ্ছে দু’টিই সম্ভব। এবং এ কাজের জন্য চাহিদাও তৈরি হচ্ছে।
সাহিল জানিয়েছিলেন হোম ম্যানেজারের কথা।
দিন কয়েক আগেই নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর তালিকাভুক্ত এক ভারতীয় ‘বেস্ট সেলিং’ লেখক সাহিল ব্লুম একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন নিজের এক্স হ্যান্ডলে। তিনি লিখেছিলেন, এমন কাউকে যদি পাওয়া যায়, যিনি আমার বাড়ির সব কাজ সামলে দেবেন, আর আমি আমার দরকারে শুধু তাঁকে যোগাযোগ করলেই সবটা জানতে বুঝতে পারব, তবে আমি তাঁকে প্রতি মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত বেতন দিতে রাজি আছি।
৫০০ ডলার মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৫,০০০ টাকা। অনেক কর্পোরেট অফিসে এই বেতনে কাজ করেন এমবিএ পাশ করা তরুণ-তরুণীরা। তবে হোম ম্যানেজারের কাজে এই বেতন বলতে গেলে কিছুই নয়। এক আইআইটি পাশ করা ভারতীয় তরুণ জানাচ্ছেন, তিনি তাঁর বাড়ি সামলানোর জন্য একজন শিক্ষিত হোম ম্যানেজার রেখেছেন এবং তাঁকে তিনি প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা বেতন দেন!
আমনের পোস্ট।
আইআইটি থেকে শিক্ষিত ওই তরুণের নাম আমন গোয়েল। তিনি একটি সংস্থার সিইও। যে সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা তাঁরই স্ত্রী হর্ষিতা শ্রীবাস্তব। আমন জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকেন, যে সংসার সামলানোর সময় পান না। তাই বাড়ি সামলানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজের এক জন শিক্ষিত হোম ম্যানেজার রেখেছেন। আমন বলছেন, ‘‘ইনি আমাদের সারা দিনের খাওয়াদাওয়ার মেনু থেকে শুরু করে, আমাদের পোশাক গুছিয়ে দেওয়া, বাড়ির প্রয়োজনীয় মেরামতি করানো, কাপড় কাচানো, এমনকি, দোকানপাট করার কাজ— সব করে দেন।’’
এমন কাজের জন্য লোক কোথায় পেলেন, তার জবাবে আমন বলেছেন, ‘‘আমাদের হোম ম্যানেজারের কাজ করেন যিনি, তিনি এক কালে হোটেলে অপারেশন হেড হিসাবে কাজ করতেন। তিনি উচ্চশিক্ষিতও।’’
আমনের বাড়িতে রান্না করার, ঘর পরিষ্কার করার আলাদা পরিচারক রয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মাও। সারা দিন যখন আমন এবং তাঁর স্ত্রী কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন ওই ম্যানেজারই বাড়ির সব কিছু দেখেন। কিন্তু তার জন্য মাসে এক লক্ষ টাকা বেতন?
বাবা-মায়ের সঙ্গে আমন গোয়েল এবং তাঁর স্ত্রী হর্ষিতা শ্রীবাস্তব।
আমন বলছেন, ‘‘আমরা আমাদের যে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি, তার জন্য সময় এবং নিশ্চিন্ত মনোযোগ দরকার। মাসে এক লক্ষ টাকা দেওয়াটা খুব বেশি মনে হতেই পারে। কিন্তু আমাদের কাছে আমাদের সময়ের দাম আরও বেশি। আর সব থেকে বড় কথা খরচ করতে পারছি বলেই করছি।’’
বাড়ি সামলানোর জন্য হোম ম্যানেজার রাখার এ সমস্ত কথা আমন লিখেছেন সমাজমাধ্যমেই। লেখক সাহিলের পোস্ট ট্যাগ করে। তার পরে সমাজমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এই ধরনের কাজ কী ভাবে পাওয়া যায় যেমন জানতে চেয়েছেন। তেমনই কেউ কেউ এমন কাজের লোক পেতে কী করতে হবে তা-ও জিজ্ঞাসা করেছেন। অবশ্য আমনের লক্ষ টাকা খরচ করে হোম ম্যানেজার রাখার সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, সংস্থার টাকা এ ভাবেই ওড়ান এই ধরনের মানুষ। আমন অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ওই বেতন দেন তাঁর ব্যক্তিগত উপার্জন থেকে।