Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
অ্যাসিডিটি

সত্যিই অ্যাসিডিটি হয়েছে কিনা জানেন? মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন যে!

খিদে পাক বা না পাক, লোভনীয় খাবার তা সে কাঁচা সব্জি বা মাছ মাংসই হোক কিংবা তেলেভাজা, রোল, পিৎজা থেকে শুরু করে যাই হোক না কেন, ভোজন বিলাস বাঙালির ধর্ম। 

খাওয়াদাওয়াই কেবল নয়, ঘুমের পরিমাণ, শ্রম সব কিছুর উপরেই হজমপ্রক্রিয়া অনেকটা নির্ভর করে। ছবি: শাটারস্টক।

খাওয়াদাওয়াই কেবল নয়, ঘুমের পরিমাণ, শ্রম সব কিছুর উপরেই হজমপ্রক্রিয়া অনেকটা নির্ভর করে। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ১৩:৪২
Share: Save:

কোভিড ১৯ যে চাইনিজ, ইতালিয়ান, আমেরিকান মায় বাঙালি খাবার দাবারও বিশেষ পছন্দ করে না সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবুও লক ডাউনের সময় মনে অল্পস্বল্প ভয় ভাবনা থাকলেও জমিয়ে খাওয়ার ব্যাপারে কেউই পিছিয়ে নেই। খিদে পাক বা না পাক, লোভনীয় খাবার তা সে কাঁচা সব্জি বা মাছ মাংসই হোক কিংবা তেলেভাজা, রোল, পিৎজা থেকে শুরু করে যাই হোক না কেন। ভোজন বিলাস বাঙালির ধর্ম।

এদিকে ভরা পেটে অথবা খিদে না পেলেও খাবার দেখে হামলে পড়ার ফলে হজম সংক্রান্ত গোলযোগ অবধারিত। তাই অতি সাবধানি মানুষ আজকাল কথায় কথায় হাইপার অ্যাসিডিটি নিবারণকারী ওষুধ প্রোটনপাম্প ইনহিবিটরকে চিরসঙ্গী করে নিয়েছেন। এর ফল কিন্তু মোটেও ভাল নয়, বললেন গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট কর্মবীর চক্রবর্তী।

অ্যাসিডিটি ব্যাপারটা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা টান আছে মনে হয়। কর্মবীরবাবুর মত, ''যে কোনও শারীরিক কষ্টের সঙ্গেই বেশির ভাগ মানুষ অ্যাসিডের যোগসাজশ খুঁজে বের করেন। তা সে মাথা ব্যথাই হোক বা বুকে ব্যথা। অ্যাসিডিটি তো এসে আমাদের কানে কানে বলে না যে ‘‘সাবধান, আমি এসে গেছি।’’ নিজেরাই ভেবে ফেলেন যে তিনি অ্যাসিডিটিতে ভুগছেন, তারপর ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেতে শুরু করেন।''

আরও পড়ুন: আদৌ কি দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণ হতে পারে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?​

তিনি জানান, শারীরিক কষ্টের ধরন দেখে তবেই বোঝা যাবে তা আদৌ অ্যাসিডিটি কিনা। কিন্তু কষ্টের কথা না বলে যদি শুধু বলেন, অ্যাসিড হয়েছে তবে পরামর্শদাতা অ্যান্টাসিড খেতে বলেন। ইচ্ছেমত অ্যান্টাসিড বা প্রোটনপাম্প ইনহিবিটর খেলে শরীরের সম্পূর্ণ সিস্টেমের ওপর তার প্রভাব পড়ে যা মোটেও কাম্য নয়, বললেন কর্মবীর। আগে অ্যান্টাসিড খাওয়া হত, ইদানিং সকলে নির্বিচারে মুড়িমুড়কির মত প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খেয়ে নেন। এই বদ অভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিত বলে তাঁর অভিমত। গলা-বুক জ্বালা মূলত হাইপার অ্যাসিডিটির লক্ষণ। তবে গলা জ্বালা সবসময় হাইপার অ্যাসিডিটির লক্ষণ নাও হতে পারে। তাই কোনও রকম সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পেটে টিউমার থাকলেও অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বাড়ে। ছবি:শাটারস্টক

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সুজয় মৈত্র জানালেন, কিছু বাহ্যিক কারণ হাইপার অ্যাসিডিটির জন্যে দায়ী। যখন তখন খাবার খাওয়া, মশলাদার ও ভাজা খাবার, ফিজিক্যাল মুভমেন্টের অভাব বা নাগাড়ে চুপচাপ শুয়ে বসে থাকা আর খেয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত চাপ, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি। আমিষ খাবার বেশি খেলেও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া যারা ইচ্ছে মতো ব্যথার ওষুধ খান, তাঁদেরও এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে ভিটামিন ডি-র অভাব হতে পারে বিপজ্জনক, কেন জানেন?​

অ্যাসিডিটি হলে বেশিরভাগ মানুষই ভাবেন বুঝি বা অ্যান্টাসিড খেলেই সমস্যা চলে যাবে। এক দিকে অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন অন্যদিকে তেলে ভাজা, রোল, চাউমিন খাবারের অভ্যেস, স্মোকিং আর মদ্যপান করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অবশ্য পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ এবং পেটে টিউমার থাকলেও অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বাড়ে। তাই লাগাতার কোনও কারণ ছাড়া এই সমস্যা চলতে থাকলে নিজেদের ইচ্ছে মতো দোকান থেকে অ্যান্টাসিড কিনে না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুজয় মৈত্র।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির কারণ ভাজা খাবার খাওয়া এবং সারাক্ষণই খাই খাই করে খিদে পাক না পাক খেয়ে নেওয়া। অবশ্য দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলেও পেটের অ্যাসিড ক্ষরণ বেড়ে যায়।

প্রচুর জলপান করলে কমে অ্যাসিডিটির সমস্যা। ছবি: শাটারস্টক

অনেকে ছুটির দিনে বা নিয়ম করে মদ্যপান করেন আর সিগারেট ছাড়া জীবন মনে করেন পানসে। তাঁদেরও অ্যাসিডিটির সমস্যা বেশি দেখা যায়। সুজয় মৈত্র জানালেন, মুখ টক হয়ে যাওয়া, গলা বুক জ্বালা, বদ হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও অনেক সময় অ্যাসিডিটির কারণে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করে, বমি পায়, কারও কারও বমিও হয়। ঘন ঘন খালি পেটে চা, কফি, সিগারেট খেলেও অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। বাড়তি নুন খেলেও পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: করোনাকালে অটিস্টিকদের নিয়ে চিন্তা, হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছে এই সব নেটওয়ার্ক​

অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। তার মধ্যে প্রধান হল খিদে না পেলে কোনও মতেই খাওয়া চলবে না, বললেন সুজয় বাবু। অন্যদিকে দীর্ঘক্ষণ খালিপেটে থাকা চলবে না। অনেকেই বারে বারে বিস্কুট খান। বিস্কুটের বদলে কলা, ছোলা, মুড়ি, বাদাম খেতে পারেন। যথেষ্ট পরিমাণে জলপান করা দরকার। কোভিডের সময় তো বটেই অন্য সময়েও বাইরের খাবার না খাওয়াই ভাল। তবে কলা, আপেলের মত গোটা ফল কিনে ধুয়ে খাওয়া যেতে পারে। টোস্ট বা ডিম সেদ্ধও চলতে পারে।

আরও পড়ুন: বাইরে বেরলেও কমেনি ঝুঁকি, ‘নিউ নর্ম্যাল’-জীবনে কী করবেন, কী করবেন না​

মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট জাতীয় ফুড অ্যাডিটিভ বাদ দিয়ে চাইনিজ খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিপ ফ্রাই যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। খাবার আগে হাত মুখ সাবান দিতে ভুললে চলবে না। এতে কোভিড ১৯-সহ অন্যান্য রোগ জীবাণুদেরও আটকাতে পারবেন। সুষম খাবার খেয়ে অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ করুন, ভাল থাকুন।

আরও পড়ুন:অশ্বগন্ধা, আমলকি, কালমেঘ, গুলঞ্চ, কোন ভেষজ উপাদান কখন খাবেন, কেন​

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE