Advertisement
E-Paper

বয়স্কেরা শীতে থাকুন সাবধানে

তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সামনের ক’টা দিন পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে শীতের প্রকোপ অনুভূত হবে। শীতে বয়স্ক মানুষদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরি। জানাচ্ছেন চিকিৎসক শ্যামল দাস।সাক্ষাৎকার নিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সামনের ক’টা দিন পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে শীতের প্রকোপ অনুভূত হবে। শীতে বয়স্ক মানুষদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরি। জানাচ্ছেন চিকিৎসক শ্যামল দাস।সাক্ষাৎকার নিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৫

প্রশ্ন: শীতে বয়স্ক মানুষদের কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

উত্তর: শীতে বয়স্ক মানুষদের মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে সংক্রমণজনিত রোগই প্রধান। অ্যাজমা, এমফাইসিমা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগের পাশাপাশি বাতজনিত রোগও শীতের সময়ে বাড়ে। যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও এই সময়ে সাবধানে থাকা উচিত। চামড়ার নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাড়তে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও। অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য বয়স্ক মানুষদের অসামর্থ্য বা ইনফার্মিটি তৈরি হয়। এর জন্য তাঁদের জীবনযাত্রায় ছাপ পড়ে। অতিরিক্ত ঠান্ডা মোকাবিলা না করতে পারলে হাইপোথারমিয়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন: হাইপোথারমিয়া কী?

উত্তর: মানব শরীরের স্বাভাবিক যা তাপমাত্রা, অতিরিক্ত শীতের জন্য তা খুব কমে গেলে, শরীরের অঙ্গগুলো অতিরিক্ত কম তাপমাত্রায় বিকল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক, হৃদয়, ফুসফুসের মতো অঙ্গগুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ কী? এর প্রাথমিক প্রতিবিধান কী ভাবে করা উচিত?

উত্তর: হাইপোথারমিয়ার প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে যাবে। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসাড় হতে শুরু করবে। অনুভূতি থাকবে না। শরীরের বিভিন্ন পেশিতে টান ধরবে। রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে।

রোগীর শরীরের উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা অথচ গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। যদি জ্ঞান থাকে, তবে উষ্ণ পানীয় খাওয়াতে হবে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সচল হবে। তাই অতিরিক্ত ঠান্ডার সময়ে বয়স্ক মানুষদের জন্য ‘রুম হিটারে’র ব্যবস্থা করা উচিত। শীত উপভোগ্য, যদি তা মোকাবিলা করার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষেরই শীত মোকাবিলা করার সামর্থ্য থাকে না। তাই প্রতি বছরেই অত্যধিক ঠান্ডায় অনেকে প্রাণ হারান।

প্রশ্ন: শীতে অনেকেই এলার্জির সমস্যায় ভোগেন। এলার্জি কেন হয়? এতে কী সমস্যা হতে পারে? প্রতিকারের উপায় কী?

উত্তর: এই সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গিয়ে বাতাস খুব শুষ্ক হয়ে যায়। বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ে। এগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে এলার্জির সৃষ্টি করে। এলার্জি হলে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়। এতে প্রাথমিক ভাবে শ্লেষ্মা বাড়ে। হাঁচি- কাশি হতে শুরু করে। শ্বাসনালীর প্রদাহ ব্রঙ্কিওলে পৌঁছলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এতে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এলার্জি থেকে বাঁচতে কুয়াশা এড়ানো উচিত। কুয়াশায় একাধিক দূষিত পদার্থ থাকে। এগুলি শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে গিয়ে নানা ধরনের রোগ সংক্রমিত করতে পারে। এ ছাড়া রাস্তার ধুলো থেকে বাঁচতে ‘পলিউশন মাস্ক’ ব্যবহার করা উচিত।

প্রশ্ন: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বয়স্ক মানুষেরা সকালের দিকে খুব বেশি হাঁপাতে থাকে বা একটানা কাশি হয়। এর কারণ কী?

উত্তর: এর কারণ, সারা রাত তাঁরা ঘরে উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে থাকেন। সকালের দিকে কম তাপমাত্রায় ফুসফুসের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস ঢোকার ফলে সমস্যা তৈরি হয়। তাছাড়া, দিনে মানুষ যে মিউকাস জাতীয় তরল পদার্থ বা শ্লেষ্মা বের করে দেয়, রাতের দিকে তা পারে না। সেটা সারা রাত ধরে ফুসফুসে জমা হতে থাকে। এর জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শুরু হয় কাশি। অনেক ক্ষেত্রে ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন: ব্রঙ্কাইটিস কী? কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়?

উত্তর: ব্রঙ্কাইটিস রোগে সকালের দিকে একটানা কাশি হয়। সেই সঙ্গে প্রচুর শ্লেষ্মা বের হতে থাকে। অনেক সময় কাশতে কাশতে রক্তক্ষরণ হয়।

ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঠান্ডা যাতে না লাগে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে সকাল ও রাতের দিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ হাতের কাছে রাখতে হবে।

শ্বাসকষ্টের সমস্যায় নেবুলাইজার বা ইনহেলার জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। সমস্যা বাড়লে অক্সিজেন পর্যন্ত দিতে হতে পারে। যাদের এ ধরনের সমস্যা থাকে, তাঁদের সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই ইনহেলার ব্যবহার করা উচিত।

প্রশ্ন: ইনহেলার ব্যবহারে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি?

উত্তর: আগে এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ইনজেকশন ব্যবহার করা হত। তাতে যে স্টেরয়েড থাকত, তা সরাসরি রক্তে মিশে যেত। তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিল। কিন্তু ইনহেলারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ রক্তে মেশে না। এতে ভয়ের কারণ নেই। তাই হাঁপানি, অ্যাজমার রোগীদের অন্তত শীতের সময়ে হাতের কাছে ইনহেলার অবশ্যই রাখা উচিত।

প্রশ্ন: শীতের সময় বাতের সমস্যা বাড়ে?

উত্তর: শীতের সময়ে শরীরের বিভিন্ন সন্ধি বা জয়েন্টগুলি আড়ষ্ট হয়ে যায়। সচলতা হারিয়ে ফেলে। এতে অস্থিসন্ধির ব্যথা বাড়তে পারে। অস্টিওপোরেসিস, অস্টিওআর্থাইটিস বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের গাঁটে ব্যথা, হাঁটু, কোমরে ব্যথা বাড়তে পারে। এই সময়ে বয়স্ক মানুষদের একটা সাধারণ সমস্যা হল পা অবশ হয়ে পড়ে যাওয়া। তবে, হাঁটাচলা একেবারে বন্ধ করে দিলেও সমস্যা বাড়বে। তাই হাঁটাচলা করতে হবে। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অবলম্বন নিয়ে হাঁটতে হবে। কেউ যদি পাশে থাকেন, তাহলে আরও ভাল। পাশাপাশি ব্যায়ামও করা দরকার। বয়স্ক মানুষদের হাড়ে ক্যালসিয়াম কম থাকে। তাই পড়ে গেলে হাড়ে চিড় ধরা বা হাড় ভেঙে যাওয়ার ভয় থেকেই যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে।

প্রশ্ন: শীতে আর কী কী সমস্যা হয়?

উত্তর: শীতে রক্তের ধমনীগুলি সঙ্কুচিত হয়। তাই রক্ত়চাপে তারতম্য হতে পারে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রসেছে, তাঁদের এই সময়ে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। শীতের আমেজে তেলেভাজা, চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়। এ ধরনের খাবারে সমস্যা বাড়তে পারে। বরং মরসুমি শাক, আনাজ, ফল খেলে অনেকটাই ভাল থাকা যায়। নিয়মিত স্যালাড খাওয়া উচিত। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁদের এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। ইসবগুলের ভুসি বা তন্তু বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন— পাকা বেল, বেলের মোরব্বা খুব উপকারী।

প্রশ্ন: শীতে ত্বকে কী ধরনের সমস্যা হয়?

উত্তর: শীতে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ভাঁজ পড়ে যায়। হাতের তালু, পায়ের তলা ফেটে যায়। নিয়মিত ক্রিম, ভেসলিন, নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে।

প্রশ্ন: এ সময়ে অনেকেই বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

উত্তর: দেশি চিকিৎসা বা ঘরোয়া টোটকার অবশ্যই কিছু গুণাগুণ রয়েছে। মধু, তুলসী পাতা, তেজপাতা, মিছরি, গোলমরিচ, লবঙ্গ, আদা দিয়ে তৈরি ‘ক্বাথ’ খেলে কাশিতে আরাম মেলে। নিয়মিত মধু খাওয়া যেতে পারে। মধু শরীরকে যেমন গরম রাখে তেমনই প্রচুর শর্করা থাকায় তাৎক্ষণিক শক্তি বর্ধক হিসাবেও উপযোগী। কিন্তু ডায়াবেটিসের সমস্যায় মধু খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া চ্যবনপ্রাশও খেতে পারেন।

Winter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy