Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Joint pain

হাড় ও অস্থিসন্ধির যক্ষ্মায় ভয় পাবেন না

ঠিক সময়ে এ রোগ ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু করার পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে আরোগ্য লাভ সম্ভব

ঊর্মি নাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৬
Share: Save:

হাঁটু, কোমর বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হলে প্রথমেই ধরে নেওয়া হয় আর্থ্রাইটিস। কিন্তু হাড়ের ব্যথা মাত্রই বাত বা নার্ভের সমস্যা নয়, যা সচরাচর ভেবে থাকি। যক্ষ্মার পূর্বাভাসও হতে পারে! শুধুমাত্র ফুসফুস নয়, মস্তিষ্ক, বৃক্ক, যকৃৎ, হাড়, অস্থিসন্ধিসহ শরীরের যে কোনও অঙ্গে যক্ষ্মা হতে পারে। হাড় ও অস্থিসন্ধির যক্ষ্মা প্রসঙ্গে অর্থোপেডিক ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বোন অ্যান্ড জয়েন্ট টিউবারকিউলোসিস সবচেয়ে বেশি হয় মেরুদণ্ডে, তারপর কোমর, হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে। যে কোনও যক্ষ্মাই প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।’’

কেন হয় হাড় ও অস্থিসন্ধিতে যক্ষ্মা?

শরীরের যে কোনও অঙ্গে বিশেষ করে ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে তার জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস রক্তের মধ্য দিয়ে শরীরের যে কোনও হাড় বা অস্থিসন্ধিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে শরীরের কোনও অঙ্গে যক্ষ্মা হওয়ার দু-তিন বছর পরেও হাড়ে বা অস্থিসন্ধিতে টিবি হতে পারে। যে কোনও যক্ষ্মার ক্ষেত্রে অপুষ্টি বড় কারণ। এ ছাড়া মদ্যপান, ধূমপান এই রোগের পথ প্রশস্ত করে। ‘‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। বিশেষ করে, এডস রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিক, ক্যানসার রোগী, কিডনি বা লিভারে দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই। জেনেটিক ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি ডিসঅর্ডার থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বয়স্কদের তুলনায় বোন অ্যান্ড জয়েন্ট টিউবারকিউলোসিস হওয়ার প্রবণতা শিশু, কিশোর এবং অল্পবয়সিদের মধ্যে বেশি,’’ বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

কী করে বুঝবেন

মেরুদণ্ড, কোমর, গোড়ালি, পিঠ ইত্যাদি শরীরের যে কোনও হাড়ে বা জয়েন্টে যক্ষ্মার জীবাণু বাসা বাঁধলে সেখানে ব্যথা হবে। কখনও কিছুটা অংশ ফুলে যেতে পারে, স্টিফ হতে পারে। ব্যথা এতটাই প্রবল হয় যে রোগী অনেক সময়ে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে চলতে পারেন না। যতক্ষণ না ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠে ততক্ষণ ডাক্তার দেখানোর প্রবণতা সাধারণের মধ্যে কম। এর ফলে রোগনির্ণয়ে দেরি হয়ে যায়। ‘‘হাঁটু, কোমর, গোড়ালি বা যে কোনও জয়েন্টে নিয়মিত ব্যথার পাশাপাশি মাঝে মাঝে জ্বর হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গগুলি দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে,’’ বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

চিকিৎসা

সময় মতো যক্ষ্মা ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। কিন্তু হাড় ও অস্থিসন্ধির যক্ষ্মার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ডায়াগনসিস। খুব বেশি দেরি হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সময় মতো অসুখটি ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা চলে প্রায় বারো থেকে আঠারো মাস। চিকিৎসা চলাকালীন মাসে অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে শরীরের পরিস্থিতি জানিয়ে তাঁর পরামর্শ নিতে হবে। বোন টিবিতে প্রয়োজনে অপারেশন করার রাস্তা খোলা থাকে। ওষুধ শুরু হওয়ার এক-দু’মাস পর থেকে সুস্থ অনুভব করলে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অবহেলা করেন। ‘‘এতে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হয়। ওষুধের কোর্স অসম্পূর্ণ থাকলে যক্ষ্মার জীবাণু আবার কার্যকর হতে পারে। তখন সারিয়ে তোলা খুব মুশকিল,’’ বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়। শুধু ওষুধ নয়, ডায়েট ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নিয়মিত মাছ, মাংস, ডিম, আনাজপাতি, ফল, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল, স্প্রাউট ইত্যাদি ভিটামিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম, হাই প্রোটিন খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ডায়েট চার্ট (অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে) মেনে চলতে হবে। দুগ্ধজাত খাদ্যে সমস্যা না থাকলে দিতে হবে দুধ, ঘরে পাতা দই, ছানা ইত্যাদি। মদ, সিগারেট, ভাজাভুজি, কোল্ডড্রিঙ্ক, বাইরের খাবার নৈব নৈব চ।

কতটা ছোঁয়াচে

ভয়ানক ছোঁয়াচে নয় হাড় ও অস্থিসন্ধির যক্ষ্মা। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মার জন্য হাড়ে যক্ষ্মা হলে সংক্রমণের সম্ভবনা থাকবে। তাই একই বাড়িতে রোগীর সঙ্গে থাকার সময়ে পরিবারের সদস্যদের সাবধান হতে হবে।

    ঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু করালে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব। যদিও সেরে ওঠার পরে প্রায় দেড়-দু’বছর সচেতন থাকা ভাল। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
    প্রয়োজনে তাঁর পরামর্শ নিয়ে ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে হবে। হাঁটু, কোমর, মেরুদণ্ড যে অংশে টিবি হয়েছিল সেই অংশে যেন আঘাত না লাগে, ক্ষত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।

    চিকিৎসার সময়ে স্বাভাবিক জীবনের তাল কাটে। বিশেষত অল্পবয়সিদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, মেলামেশা বা স্কুলে যাওয়ায় ছেদ পড়ে। এতে অবসাদ আসবেই। শিশু হোক বা বয়স্ক, রোগীর পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত তাদের মানসিক ভরসা জুগিয়ে যেতে হবে।


    (সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

    অন্য বিষয়গুলি:

    arthritis
    সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
    Advertisement
    Advertisement

    Share this article

    CLOSE