বিয়ে নিয়ে মনে ভয়? উত্তর দেবেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
কেউ বলেন, বিয়ের বয়স হয়ে গেল। এর পরে দেরি হয়ে যাবে। কেউ আবার বলেন, বিয়ের কোনও বয়স হয় না। আর এ সব নিয়েই চলতে থাকে তর্ক। কেউ বিয়ে করেন ২৫ বছর বয়সে, কেউ আবার বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলেও অপেক্ষা করেন মনের মতো সঙ্গীর জন্য। যাঁদের সামনে বিয়ে, যাঁরা বিয়ে করতে চলেছেন, তাঁদের মন কী বলছে? বিয়ে মানেই কি শুধু সাজুগুজু আর ফোটোশুট? বিয়ে মানে আসলে এক বিরাট বদল। আর এক জনের সঙ্গে এক ছাদের নীচে যৌথযাপন। অনেক নতুন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া, নতুন নতুন ভূমিকার সঙ্গে বোঝাপড়া। এত বড় বদলের সামনে দাড়িয়ে মনের মধ্যে নানা নরম সওয়াল-জবাবের পর্ব চলতেই থাকে। চলছে বিয়ের মরসুম। প্রায়ই সকালের ঘুম ভাঙে আশপাশের বাড়ি থেকে আসা সানাইয়ের শব্দে। বাড়িভর্তি হইচই, অনেক আত্মীয়স্বজনের সমাগম! কিন্তু যাঁদের আদতে বিয়েটা হচ্ছে, তাঁদের মন কী বলছে?
এ সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘সামনে বিয়ে, ভয় করছে’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘‘আমার বয়স ২৮। দীর্ঘ দিনের বন্ধুর সঙ্গেই বিয়ে করতে চলেছি। ওর বাড়ির সকলের সঙ্গে আমার ভালই আলাপ। সমস্যাটা সেখানে নয়। আমার মনে ভয় একটাই উৎস। আদৌ আমি পারব তো? ঘরোয়া কাজে ততটা পটু নই, কী ভাবে গোটা সংসার সামলাব? তা ছাড়া বাবা-মা, ভাইকে ছেড়ে চলে যাওয়ারও ভীতি রয়েছে মনে। ভয় যেন আমার বিয়ের জন্য আনন্দটাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।’’
বিয়ের আগে কর্মজীবন নিয়েও অনেকের মনে নানা চিন্তা। বিয়ের পর সংসার ও কর্মজীবনের মধ্যে কী ভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন সেই প্রশ্নও অনেকের মনে। আর এক জন লিখেছেন, ‘‘আমি চাকরি করি। অফিসে এক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছি। আমার বিয়ের তারিখ যত এগিয়ে আসছে আমার মনে ভয় ও উদ্বেগ বাড়ছে! পারব তো সংসারের পাশাপাশি অফিস সামলাতে? কাজের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না তো?’’
বিয়ের পর নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলতে হবে, এই চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন মনোবিদ। প্রশ্নের জবাবে অনুত্তমা বললেন, ‘‘সব চিঠিতেই আমরা দেখতে পেলাম বিয়ে নিয়ে তাঁদের মনে এক ধরনের দ্বৈততা আসছে। যেমন আনন্দও আসছে তেমনই আবার মনে কিছু না কিছু নিয়ে একটা ভয়ও কাজ করছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই চিন্তাটা আসা স্বাভাবিক। কারণ আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানে পদার্পণ মানেই মেয়েদের জীবনে এক বিরাট বদল। বদলটা কীরকম? একটা নতুন পরিবারে তাঁকে চলে আসতে হয়। তাঁর নিজস্ব পরিসরে অবধারিত একটা বদল আসে। নতুন পরিবারের মানুষগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব কী না, এই চিন্তা সারা ক্ষণ চলতে থাকে মনের মধ্যে। তার পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকটাও দেখতে হয় বইকি।
আসলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠাটি আমাদের উপর এত নতুন দায়িত্ব, সম্পর্ক চাপিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে আর আমর সেই ঝাড়া হাত-পা প্রেম বিষয়টি যেন কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হতে শুরু হয় বিয়ের ঠিক আগে আগে। ইদানীং বিয়ের নিয়মকানুনে যেমন বদল এসেছে, তেমন সহাবস্থানের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বদল এসেছে। নতুন পরিবারের সকলের মন আপনি জয় করতে পারবেন, এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপানারও তাঁদের সকলকে দারুণ না-ই লাগতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। এই সব ক্রিয়াপদজনিত দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। বিয়ে তো কোনও পরীক্ষা নয়, তা হলে পারবেন তো? এই ভাবনা কেন মাথায় আনছেন। নতুন বাড়িতে আপনারও নিজস্ব পরিসর লাগবে এ কথা সঙ্গীকে আগে থেকেই বলে রাখুন, নতুন পরিবারের লোকজনকেও বুঝতে হবে সে কথা। ঠিক যেমন নিজের বাড়িতে থাকেন চেষ্টা করুন সেই পরিবেশটা নতুন বাড়িতেও তৈরি করার। এই সব ভাবনা কিন্তু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মনেও আসবে যে, তাঁদের আচার আচরণ আপনার ভাল লাগবে তো? এই ভাবনা কিন্তু পারস্পরিক। তাই এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করবেন না। আমি আমার কাজে নতুন পরিবারের সকলের মন জয় করে নেব, সকলে আমাকে নিয়ে মাতামাতি করবে, এই ধারণা ঠিক নয়। বরং আপনি যেমন, তেমনটাই থাকার চেষ্টা করুন। এক রাতে ভোলবহল করা যায় না। তাই শুরু থেকেই আপনি যেমন, তেমনটাই থাকার চেষ্টা করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy