Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Health

কোলোরেক্টাল ক্যানসারকে হারাতে সচেতন হোন গোড়াতেই

ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অত্যধিক পরিমাণে প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া, অ্যালকোহল পান, ধূমপান করা, ওজন বৃদ্ধি, শারীরচর্চা না-করা এই রোগের অন্যতম কারণ।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৪
Share: Save:

কোলোরেক্টাল ক্যানসার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সমীক্ষা বলছে, কোলন (বৃহদন্ত্র) এবং রেক্টামে (মলদ্বার) হওয়া এই ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বহু বছর ধরেই আমেরিকায় বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। রোগের ঊর্ধ্বমুখী রেখচিত্র দেখে ২০০০ সাল থেকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন গোটা মার্চ মাসকে কোলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে চিহ্নিত করেন। চলতি বছরে কোভিড-১৯ হানায় ত্রস্ত বিশ্ব ভুলেই গিয়েছে সে কথা‌। এ শহরে সরকারি ভাবে না-হলেও প্রতি বছর গোটা মার্চ জুড়ে বেসরকারি উদ্যোগে কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে কিছু আলোচনা ও স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করা হয়।

চিকিৎসকদের মতে, ‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসেবে পরিচিত এই ক্যানসার সম্পর্কে গোড়াতেই সচেতন হলে ঠেকানো যায় মৃত্যু। কিন্তু পাশ্চাত্যের খাদ্যাভ্যাস যতই আমাদের মধ্যে মিশছে, তত বাড়ছে এই রোগের ঝুঁকি।

ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অত্যধিক পরিমাণে প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া, অ্যালকোহল পান, ধূমপান করা, ওজন বৃদ্ধি, শারীরচর্চা না-করা এই রোগের অন্যতম কারণ। তাঁর কথায়, “কোলোরেক্টাল ক্যানসার দ্বিতীয় পর্যায়ে (স্টেজ ২) ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা হলে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাধ্যমে দীর্ঘ বছর বেঁচে থাকতে পারেন। তবে মনোবল হারালে চলবে না।” এ শুধু কথার কথা নয়। কোলোরেক্টাল ক্যানসারকে হারানো তিন সংগ্রামীর কাহিনি জানান দিয়ে যায় এই কথার সত্যতা।

ভোর পাঁচটা। নিজের অটো নিয়ে সিঁথির মোড়ে হাজির বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা গৌতম অধিকারী। সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত সিঁথির মোড় থেকে দমদম স্টেশন, অনবরত যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেন বছর সাতচল্লিশের গৌতম। ২০০৫ সালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মলদ্বারে টিউমারের অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর। ধরা পড়ে কিছু সমস্যা। কিন্তু, ফের অস্ত্রোপচার করতে চাননি। কয়েক বছর পরে বন্ধ করে দেন চিকিৎসা। সমস্যা বাড়তে থাকায় ২০১৭ সালের শেষে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে এক ক্যানসার শল্য চিকিৎসককে দেখান। পরীক্ষায় জানা যায়, ক্যানসার আক্রান্ত গৌতমের দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি। তাঁর আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ওই চিকিৎসক এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে পুরো কোলন বাদ দেন। এর পরে চলে কেমোথেরাপি। কয়েক মাস বিশ্রাম নিয়েই কাজে বেরিয়ে পড়েছিলেন গৌতম। তিনি বলেন, “সামনের বছর মেয়েটা মাধ্যমিক দেবে। খরচ বাড়ছে। পাঁচটি মুখ আমার দিকে তাকিয়ে। বসে থাকলে চলবে?”

বছর ৭৪-এর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুপ্রিয় রায়। বছর দুই ধরে যে শারীরিক পরিবর্তন বহন করছেন, তা নিয়ে তাঁর অন্তত মাথাব্যথা নেই। সহানুভূতিও চান না। বছর দুই আগে মলের সঙ্গে রক্ত বেরোতে দেখে সুপ্রিয়বাবু মনে করেছিলেন, অর্শ। চিকিৎসকের কাছে গেলে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে, মলদ্বারে ক্যানসার হয়েছে তাঁর। অস্ত্রোপচার করে বন্ধ করতে হয়েছে মলদ্বার। এখন পেট থেকে পাইপের মাধ্যমে মল জমা হয় একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে। দিনে দু’-তিন বার সেই ব্যাগ নিজেই পরিষ্কার করেন সুপ্রিয়বাবু। তার মধ্যেই বাজার, রান্না-সহ যাবতীয় ঘর ও বাইরের কাজ একা সামলাচ্ছেন অকৃতদার বৃদ্ধ। তাঁর কথায়, “আমার বাড়িতে ১২ জন ছাত্রছাত্রী আসে গান শিখতে। ওই ব্যাগ নিয়েই তো সব করছি। জীবনের ছন্দ রাখতে পরিবর্তনটা মেনে নিতে হবে।”

অস্ত্রোপচারে ডান কোলন বাদ দিয়ে তেরো বছর ধরে সুস্থ আছেন হাওড়ার ডোমজুড়ের বছর ৫৮-র মানিক বেরা। নিউ কোলোরা হাইস্কুলের করণিক মানিকবাবু কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে এসে যে দিন জানতে পেরেছিলেন তাঁর ক্যানসার, সে দিন সঙ্গে কেউ ছিলেন না। বাড়ি ফিরে আলোচনা করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। এখন আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী— সকলেই ক্যানসারের চিকিৎসায় পরামর্শ নিতে ভরসা করেন মানিকবাবুকে। আর মানিকবাবু বলছেন, “নিজে এই রোগের যন্ত্রণা বুঝি। সেটা যাতে অন্যদের একটু কম হয়, পাশে থেকে সেই চেষ্টাই করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Colorectal Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE