ফেলুদা বলেছিল, ‘‘সোনার কেল্লা মানে কি সোনা দিয়ৈ তৈরি? সোনার বাংলা, সোনার ছেলে, সোনার ফসল সব কি সত্যিকারের সোনা দিয়ে বানানো?’’ দুবাইয়ের সোনার পোশাক নিয়ে অবশ্য এমন প্রশ্ন তোলা যাবে না। শুনতে যতই অলীক লাগুক, সে পোশাকে একটি সুতোও নেই। পুরোটাই সোনায় বোনা আর তাতে নকশা তোলা মিনাকারী শিল্প এবং দামি পাথর দিয়ে। দেখার পোশাক নয়, এ পোশাক গায়ে পরাও যায়।
দুবাইয়ের মতো ‘প্রাচুর্যের’ দেশ ছাড়া এমন পোশাক আর কোথাই বা বানানো হতে পারে। দুবাইয়ের শিল্পীরাও দেশের সেই ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখেই পোশাকের নাম দিয়েছেন ‘দুবাই ড্রেস’।
দুবাই ড্রেস তৈরি করতে সোনা লেগেছে ১০ কেজি। আর এই সোনার পুরোটাই ন্যূনতম খাদ মেশানো ২২ ক্যারাটের সোনা। যে সোনার কেবল ১০ গ্রামের দাম দিন কয়েক আগে ভারতে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ১০০ গ্রামের দাম সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা। ১ কেজি সোনা ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকারও বেশি। ১০ কেজি সোনার দাম কত হতে পারে, তা হিসাব করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে হিসাব সেখানেই থেমে থাকবে না। এ তো শুধু সোনা নয়, সোনার তৈরি পোশাক। তাই সেই পোশাকের নকশা, কারুকাজ এবং তার ভাবনার দামও রয়েছে।
দুবাই ড্রেস তৈরি করেছে যে সংস্থা তারা জানিয়েছে, ওই পোশাকটি তৈরি করতে টানা ৯৮০ ঘণ্টা ধরে পরিশ্রম করেছেন শিল্পীরা। সব মিলিয়ে, তৈরি হওয়ার পরে ওই পোশাকের ওজন দাঁড়িয়েছে ১০.০৮১২ কেজি। যা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ভারী সোনার পোশাক হিসাবে গিনেজ় বুক অফ ওয়ার্লড রেকর্ডস-এ নাম তুলেছে বলে জানিয়েছে দুবাইয়ের ওই সংস্থা আল রামাইজ়ান।
দুবাই ড্রেসের চারটি ভাগ। একটি শিরসজ্জার, একটি নেকলেস যার ঝুল হাঁটু পেরিয়ে নেমেছে। এক জোড়া কানের দুল আর একটি কোমরে বাঁধার বেল্ট। যার নাম হিয়ার। এর মধ্যে নেকলেসটিকেই সোনার পোশাক বলা হচ্ছে। যার ওজন প্রায় ৮,৮১০.৬০ গ্রাম। মুকুট এবং টায়রার ওজন ৩৯৮ গ্রাম। কানের দুলের ওজন ১৩৪.১ গ্রাম এবং কোমরের বেল্টটি ৭৩৮.৫ গ্রাম ওজনের।
এই সব ক’টি গয়নাই তৈরি হয়েছে জালি নকশার কারুকাজে। তার উপর বসানো হয়েছে হিরে, চুনি, পান্না। রয়েছে ফিরোজা রঙের মিনাকারী নকশাও। যার দাম ধার্য করা হয়েছে ৪৬ লক্ষ আরব দিরহাম। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১১ কোটি টাকার সমান। তবে এটি দুবাইয়ের দাম। এর উপরে ভারতের ট্যাক্স বসলে তার দাম আকাশ ছোঁবে।