একটা সময় ছিল, যখন কী খাচ্ছি কেন খাচ্ছি— এত কিছু না ভেবেই মানুষ মন ভরে খাবার খেতেন। কিন্তু ইদানীং সেই বোধ বদলেছে। এখন খাওয়ার আগে ভাবতে হয় খাবারে কতটা কার্বোহাইড্রেট আছে, কতটা প্রোটিন, কতটা সোডিয়াম গেল শরীরে কিংবা খাবারে ময়দা, পাম অয়েল বা কোনও রাসায়নিক আছে কি না! এই স্বাস্থ্যসচেতনতা সাধ করে আসেনি অবশ্য। চারপাশে রোগের এমন ঘনঘটা বেড়েছে যে, জিনিস কেনার আগে অনেকেই প্যাকেটের লেবেল পড়ে নেন। অথবা ‘চিনি ছাড়া’, ‘ময়দা ছাড়া’, ‘রাসায়নিক বর্জিত’ জাতীয় লেখা দেখে তবে কেনেন। কিন্তু বাজারে এমনও অনেক জিনিস আছে, যাকে আপনি ‘নিরাপদ’ এবং ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে জানলেও তা আদতে স্বাস্থ্যকর নয়। বরং নিরাপদ ভেবে খাওয়া সেই সব খাবার শরীরের ক্ষতিই করছে।
এইমস প্রশিক্ষিত আমেরিকা নিবাসী এক ভারতীয় চিকিৎসক সৌরভ শেঠি জানাচ্ছেন, প্যাকেজিংয়ে বড় বড় দাবি দেখে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই খাবার কিনছেন। কিন্তু সেই খাবার অনেক ক্ষেত্রেই পেটের ক্ষতি করছে। আর আপনি শরীরের উপকার হচ্ছে ভেবে সেই সব খাবার অনবরত খেয়েই চলেছেন। তাই কয়েকটি খাবারের বিষয়ে একটু বাড়তি সতর্ক হওয়া দরকার। সেগুলি কী কী?
১। ফলের স্বাদের ইয়োগার্ট বা দই
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, দইয়ের যে প্রোবায়োটিক গুণ পেটের জন্য ভাল, ফ্লেভার্ড ইয়োগার্টে সেটাই পাওয়া যায় না। স্বাদ এবং গন্ধের জন্য যে মিষ্টি এবং কৃত্রিম স্বাদ ও গন্ধ ব্যবহার করা হয় ওই ধরনের দইয়ে, তা দইয়ের প্রোবায়োটিক গুণ নষ্ট করে দেয়। সাধারণ বাড়িতে পাতা টক দই পেটে ল্যাক্টোব্যাসিলি, বিফিডো ব্যাক্টেরিয়ার মতো উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে ভাল রাখে। কিন্তু কৃত্রিম স্বাদ এবং গন্ধের জন্য যে সমস্ত উপাদান দইয়ে মেশানো হয়, তা কিছু ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দেয়।
২। প্রোটিন বার
ওজন কমাতে চাইলে অনেকেই নানা ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরি প্রোটিন বার খেয়ে থাকেন। কেউ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমান প্রোটিন বার খেয়ে। কেউ বেলায় বা বিকেলে জলখাবার হিসাবে খান। কিন্তু চিকিৎসক জানাচ্ছেন অধিকাংশ প্রোটিন বারেই নিম্ন মানের মধু মেশানো থাকে যা চিনিরই নামান্তর। এছাড়া থাকে নানা সিন্থেটিক উপাদান, সরবিটল, মাল্টিটলের মতো ক্ষতিকর অ্যালকোহলজাত উপাদানও। যা পাকস্থলী এবং অন্ত্রের দেওয়ালের ক্ষতি করতে পারে। যা থেকে প্রদাহ, গ্যাস এমনকি, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।
৩। গ্রানোলা বা মুজ়লি
ওজন কমানোর ডায়েটে প্যাকেটজাত গ্রানোলা বা মুজ়লিও খান অনেকেই। অনেকে প্রাতরাশে খালি পেটে দই দিয়ে ওই মুজ়লি মেখে খান এবং ভাবেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। কিন্তু আদতে হচ্ছে উল্টোটাই। বাজারচলতি ৯০ শতাংশ মুজ়লিতেই থাকে চিনি। থাকে প্রিজ়ারভেটিভও। যা নিয়মিত খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৪। ডায়েট সোডা
বোতলে বড় বড় করে লেখা থাকে জ়িরো ক্যালোরি ড্রিঙ্ক, জ়িরো সুগার ড্রিঙ্ক। তা দেখেই প্রভাবিত হয়ে কিনে ফেলেন অনেকে। শরীরের ক্ষতি করছেন না ভেবে খানও। কিন্তু চিকিৎসক শেঠি বলছেন, ওই ধরনের পানীয়কে মিষ্টি বানানোর জন্য যে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা হয়, তা অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতি করতে পারে।
৫। স্যালাডের স্বাদবর্ধক ড্রেসিং
শরীরের উপকার হবে ভেবে নানারকম ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ ফলমূলের স্যালাড খাচ্ছেন অনেকে। আর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তাতে মিশিয়ে নিচ্ছেন বাজারচলতি স্যালাড ড্রেসিং। মেয়োনিজ়, থাউজ়্যান্ড আইল্যান্ড, বার্বিকিউ— ইত্যাদি নানা স্বাদের ড্রেসিং পাওয়া যায়। চিকিৎসক বলছেন, একটিও পেটের জন্য নিরাপদ নয়। তাই স্যালাড খেলে ড্রেসিং এড়িয়ে চলুন। ভাল মধু, লেবুর রস, দই বা গোলমরিচ দিতে পারেন মশলা হিসাবে।
৬। নানা স্বাদের উদ্ভিজ দুধ
ইদানীং অনেকেই গরুর দুধ না খেয়ে সয়ামিল্ক, আমন্ড মিল্ক বা ওয়ালনাট মিল্ক খাচ্ছেন। বিশেষ করে যাঁরা ভিগান অর্থাৎ প্রাণীজ কোনও খাবারই খান না অথবা যাঁরা ল্যাকটোজ় ইন্টলারেন্ট অর্থাৎ দুগ্ধজাত খাবার খেলেই যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরাও ওই ধরনের উদ্ভিজ দুধ পছন্দ করেন। বাজারে নানা ধরনের ফ্লেভার্ড প্ল্যান্ট বেসড মিল্ক পাওয়া যায়। রোজ় আমন্ড মিল্ক, স্ট্রবেরি কিংবা ব্লু বেরির স্বাদের আমন্ড মিল্ক ইত্যাদি। অনেকেই সেই স্বাদু দুধ খেতে ভালবাসেন। কিন্তু চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ধরনের দুধে চিনি থাকে তাকে সিন্থেটিক রং এবং কৃত্রিম স্বাদ-গন্ধ বর্ধক উপাদান। যা পেটের ক্ষতি করে।