Advertisement
E-Paper

বেনারসি আসল না কি নকল? বিয়ের শাড়ি কেনার সময়ে মান বুঝবেন কী ভাবে?

বেনারসি শাড়ি বলে যা যা বিক্রি হয় বাজারে, সব তো আসল নয়। কড়ি গুনে দামি শাড়ি কেনার আগে, আসল-নকল চেনার উপায় জানা দরকার। পথ দেখালেন শহরের পোশাকশিল্পীরা।

বেনারসি অবশ্য আর শুধু বিয়ের পোশাক বা বিয়েবাড়ির পোশাক হিসাবে পরা হয় না।

বেনারসি অবশ্য আর শুধু বিয়ের পোশাক বা বিয়েবাড়ির পোশাক হিসাবে পরা হয় না। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০১
Share
Save

টলিউডের শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় থেকে বলিউডের মৌনী রায়, পত্রলেখা— বিয়ের অনুষ্ঠানে বেনারসি শাড়ি পরতেই দেখা যায় অধিকাংশ বাঙালি কনেকে। সে তিনি মুম্বইয়ে থাকুন বা বিদেশে, বিয়ের দিনে বেনারসি পরবেন ভাবলে সেই শাড়ি ঠিকই খুঁজে নেন। তবে বাঙালির কাছে বেনারসি শুধু আবেগ নয়। পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়ের মতো অনেকেই মানেন যে, ‘‘বাঙালির কাছে বেনারসি একটা বিনিয়োগও।’’ কারণ, সারা জীবনে এমন দামি সিল্ক বার বার কেনেন না অধিকাংশে। ফলে জিনিসটি ভাল হল কি না, তা বোঝা জরুরি। মুশকিল হল, আরও বহু জিনিসের মতো বেনারসি শাড়িও তার খাঁটিত্ব হারাচ্ছে। বাংলার বাজারে নকল বেনারসির ভিড় আছে যথেষ্ট। পোশাকশিল্পী পরমা ঘোষ বলছেন, ‘‘পাওয়ার লুমে বেনারসির মতো দেখতে শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। অবশ্য সে সব শাড়ির নকশায় শিল্প নেই। সবই আসলে শিল্পীদের হাতে তৈরি নকশাকে নকল করা।’’ আর অনেকে না বুঝে সেই শাড়িই কিনছেন।

বেনারসির ভোলবদল

বেনারসি শাড়ির চাহিদা এখন আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বেনারসি আর শুধু বিয়ের পোশাক বা বিয়েবাড়ির পোশাক হিসাবে পরা হয় না। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, মণীশ মলহোত্র, আবু জানি এবং সন্দীপ খোসলার মতো বহু পোশাকশিল্পী বলিউডের নায়িকাদের বেনারসি শাড়ি পরাচ্ছেন। তা দেখে উৎসাহী হয়ে অনেকে আবার সাধারণ অনুষ্ঠানেও বেনারসি পরছেন। মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা অম্বানীকে তাঁর স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান কিংবা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে হাজির হতে দেখা যায় বেনারসিতে সেজে। ভারী কাজের শাড়ি বলে যে বেনারসি শুধু বিয়ের জন্য কেনা হত, এখন তা-ই ভোল পাল্টে পুরোদস্তুর পার্টিওয়্যার! বুটি-নকশাহীন শুধুমাত্র পাড় দেওয়া বেনারসিও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যে শাড়িটি কিনছেন, তা আসল কি না, চিনবেন কী করে?

মণীশ মালহোত্রের বেনারসিতে নীতা অম্বানী। মাঝে, সাদা বেনারসিতে বিয়ের রিসেপশনে পত্রলেখা। ডান দিকে, বিয়ের অনুষ্ঠানে লাল বেনারসি শাড়িতে মৌনী রায়।

মণীশ মালহোত্রের বেনারসিতে নীতা অম্বানী। মাঝে, সাদা বেনারসিতে বিয়ের রিসেপশনে পত্রলেখা। ডান দিকে, বিয়ের অনুষ্ঠানে লাল বেনারসি শাড়িতে মৌনী রায়। ছবি: সংগৃহীত।

জুড়ে থাকাই চাবিকাঠি

পারিবারিক সূত্রে বেনারসের সঙ্গে যোগ রয়েছে পরমার। তাঁর বাবার ঠাকুরমা ছিলেন বেনারসের কন্যা। সেখানে তাঁদের বাড়িও ছিল। বেনারসে যেখানে শাড়ি তৈরি হয়, সেখানেও বহু বার গিয়েছেন পরমা। একটা সময়ে প্রতি বছর যেতেন। তিনি বলছেন, ‘‘বেনারসি শাড়ি শিল্পীরা কী ভাবে বোনেন, কী ভাবে তার উপরে জরির কাজ করেন, তা আমি দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি বেনারসি শাড়ি হাতে বোনা খাঁটি জিনিস কি না, তা বোঝা যাবে শাড়ির উল্টো পিঠে চোখ রাখলেই।’’ পরমা জানাচ্ছেন বেনারসির জরির বুননেই লুকিয়ে খাঁটি জিনিস চেনার চাবিকাঠি। কী ভাবে বুঝবেন? পরমা বলছেন, ‘‘একটা সময়ে বেনারসি শাড়ি কিনলে শাড়িতে ‘নেট’ বা জাল বসাতেই হত। বিয়ের সময়ে রূপটানশিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদার আমাকে সাজিয়েছিলেন। তিনি বলে দিয়েছিলেন, ‘বেনারসিতে নেট বসাবে’। কারণ, তা না হলে হাতের চুড়ি লেগে জরি নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হয়ে যাবে শাড়িও। হাতে বোনা যে কোনও শাড়িরই বেশি যত্ন নিতে হয়। সেটাই স্বাভাবিক। এখন কিন্তু আর বেনারসি শাড়িতে নেট বসাতে দেখবেন না। কারণ, এখন বেনারসি শাড়ির জরি নষ্ট হওয়ার সুযোগই নেই।’’

বেনারসে গিয়ে বেনারসি শিল্পীদের কাছে চলে যান পরমা ঘোষ। তাঁদের কাজ বসে দেখতেই ভাল লাগে তাঁর।

বেনারসে গিয়ে বেনারসি শিল্পীদের কাছে চলে যান পরমা ঘোষ। তাঁদের কাজ বসে দেখতেই ভাল লাগে তাঁর। বেনারসি বুননের ছবি: পরমা ঘোষ। পরমার ছবি: সংগৃহীত।

পরমার জানাচ্ছেন, খাঁটি বেনারসি শাড়ির জরি সব সময়ে জুড়ে জুড়ে থাকে। অর্থাৎ, একটি বুটি থেকে আরও একটি বুটি বা পাড়ের নকশায় কখনও জরির সুতো বিচ্ছিন্ন হবে না। কিন্তু পাওয়ার লুমে বোনা বেনারসির জরি কাটা থাকবে। প্রতিটা বুটির সুতো সেখানেই শেষ হবে। কাটা হয়েছে যে, তা বোঝাও যাবে স্পষ্ট। সুতো যদি শাড়ির ভিতরে লেগে না থাকে, তা হলে চুড়ি লেগে নষ্ট হওয়ারও সুযোগ নেই। পাওয়ার লুম আর খাঁটি বেনারসির মধ্যে ফারাক ওই জুড়ে থাকা জরি থেকেই বোঝা সম্ভব।

সরকারে ভরসা?

পরমার মতো খাঁটি বেনারসি চিনতে শাড়ি উল্টে দেখার কথা বলছেন অভিষেকও। তবে তিনি আরও একটি পথ দেখাচ্ছেন। অভিষেক বলছেন, ‘‘আসল জরি হাতে ধরলেই বোঝা যায়। জরি ভাল হলে তার মধ্যে খড়খড়ে বা অমসৃণ ভাব থাকবে না। আসল জরি অনেক নরম এবং মসৃণ হবে। যে হেতু শাড়ির উল্টো দিকে জরির সুতো বেশি থাকে। এবং তাতে বাইরের পালিশ পড়ে না, তাই পরীক্ষা করার জন্য শাড়ির পিছন দিকের জরিই পরীক্ষা করুন।’’ তবে তার পাশাপাশি, বেনারসি চেনার জন্য সরকারি শংসাপত্রেও আস্থা রাখতে বলছেন অভিষেক। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে সেটা করা সহজ।

অভিষেক রায় বেনারসি চেনার সহজ উপায় হিসাবে বলছেন সরকারের সিল্ক মার্ক ট্যাগ দেখার কথা।

অভিষেক রায় বেনারসি চেনার সহজ উপায় হিসাবে বলছেন সরকারের সিল্ক মার্ক ট্যাগ দেখার কথা। ছবি: সংগৃহীত।

তাঁর কথায়, ‘‘বেনারসি চিনতে হলে আমি প্রথমে সরকারি সিল্কমার্ক ট্যাগ দেখে নিই। বেনারসি আসল কি না, সেই শংসাপত্র সরকার যদি দেয়, তা হলে আর বাড়তি চিন্তা থাকে না।’’ তবে এখন যে হেতু সব কিছুই নকল হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে, তাই বেনারসি কেনার আগে আরও কয়েকটি পরীক্ষা করে দেখতে বলছেন তিনি। অভিষেক বলছেন, ‘‘বেনারসি কিনতে গেলে গায়ে ফেলে দেখতে আপত্তি নেই। গায়ে ফেলার পরে যদি দেখেন বেনারসি ফুলে রয়েছে, গায়ে বসছে না, তবে বুঝতে হবে খাঁটিত্বের অভাব রয়েছে।’’

বেনারসি কি ওজনদার?

বেনারসি শাড়ি হাতে নিয়ে তার ওজন দেখেও খাঁটিত্বের পরীক্ষা করা যায়। ভাল সিল্কে বোনা বেনারসি সাধারণত হালকা হয়। অবশ্য, সেখানেও আরও একটি শর্ত আছে। ভারী শাড়ি মানেই নকল, তা কিন্তু না। বেনারসিতে জারদৌসি কাজ থাকলে তখন আর তা হালকা সিল্কের উপর বোনা সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন পরমা। তিনি বলছেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে বেনারসির বুননের সময়েই শিল্পীরা বুদ্ধি খরচ করে শাড়ির সিল্কের ধরন নিশ্চয়ই বদলে নেন। কারণ শাড়ির স্থায়িত্বের জন্যই সেটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।’’

বেনারসি শাড়িতে বলিউডের নায়িকারা। (বাঁ দিক থেকে) তমান্না ভাটিয়া, জাহ্নবী কপূর এবং আলিয়া ভট্ট।

বেনারসি শাড়িতে বলিউডের নায়িকারা। (বাঁ দিক থেকে) তমান্না ভাটিয়া, জাহ্নবী কপূর এবং আলিয়া ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।

খাঁটি বেনারসি দামদার

খাঁটি বেনারসি শাড়ি পরার ইচ্ছে হলে বাংলার নকল বেনারসির ভিড় থেকেই তা চিনে নিয়ে ইচ্ছেপূরণ সম্ভব। তবে খাঁটি বেনারসি শুধু কিনবেন বললেই তো হল না। খাঁটি বেনারসির জন্য উচিত দামও দিতে হবে। অভিষেক বলছেন, ‘‘খুব কম নকশা বা কম বুটিদার শাড়িও ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো দাম হওয়ার কথা। নকশা বাড়লে দামও বাড়বে।’’ যে কোনও শিল্পেরই কদর করতে হয়। বেনারসের শিল্পীদের হাতে বোনা শিল্প কিনতে হলেও কাঞ্চনমূল্যে উচিত মর্যাদা দিতে হবে।

Benarasi Saree

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}