ত্বকের জেল্লা, তারুণ্য ধরে রাখার জন্য যে কোলাজেনের ভূমিকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এটি এক ধরনের প্রোটিন, যা ত্বককে টানটান, উজ্জ্বল রাখে। এই বিষয়টি উপলব্ধি করে ফেলার পর কোলাজেন বাড়ানোর জন্য কখনও ট্রিটমেন্ট করানো হচ্ছে, কখনও বা পাউডার খাওয়া হচ্ছে, অথবা সিরাম মাখা চলছে চারদিকে। কিন্তু আগের প্রজন্মে ঠাকুরমা-দিদিমারা কি কোলাজেন সম্পর্কে অবগত ছিলেন? তাও তো তাঁদের ত্বক নতুন প্রজন্মের থেকে অনেক গুণ ভাল ছিল। ভাবছেন, কোনও সামগ্রী ছাড়া কী ভাবে কোলাজেন উৎপাদন বজায় রেখেছিলেন তাঁরা? রহস্য লুকিয়ে হেঁশেলেই। হাতের কাছেই রয়েছে এমন ৫টি জিনিস, যা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে আপনার ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ার গতি কমিয়ে দিতে পারে। কোনটি কী ভাবে খাবেন, যাতে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়?
আমলকি
কমলালেবুর চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এতে। শরীরের কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে, এমন ফ্রি র্যাডিকালগুলির সঙ্গে লড়াই করে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
সকালে টাটকা টাটকা আমলকির রস খেতে পারেন। অথবা সুস্বাদু স্মুদিতে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। বা নুন মাখানো শুকনো আমলকিও খেতে পারেন মুখশুদ্ধি হিসেবে। গোটা আমলকি চিবিয়ে খেতে পারলে তো সবচেয়ে ভাল হয়।
হলুদ
প্রদাহ, ব্রণ এবং নিস্প্রভ ত্বকের জন্য কার্যকরী। কোলাজেন সংরক্ষণেও সাহায্য করে। হলুদের সক্রিয় যৌগ কারকিউমিনের এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা ত্বককে অকালবার্ধক্য থেকে রক্ষা করে।
কোনটি কী ভাবে খাবেন, যাতে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়? ছবি: এআই
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
ঘুমোনোর আগে এক চিমটে হলুদ গরম দুধে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। দ্রত ত্বকে ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে হলে হলুদ, মধু ও দই দিয়ে ফেস মাস্ক বানিয়ে মেখে নিতে পারেন। ডাল, সব্জি, এমনকি স্মুদিতেও মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ভাল মতো শোষণের জন্য সব সময় সামান্য গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়ে নেবেন।
ঘি
সেরা প্রাকৃতিক চর্বিজাতীয় উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম। ঘি ত্বককে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখে এবং এটি ভিটামিন এ এবং ই সমৃদ্ধ, যা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
পরিশোধিত তেলের পরিবর্তে এক চামচ ঘি দিয়ে রান্না করুন খাবারদাবার। অন্ত্র এবং ত্বকের উপকারের জন্য হালকা গরম জলে বা সকালের কফিতে মিশিয়ে নিতে পারেন। এমনকি শুষ্ক ঠোঁট এবং কনুইয়ে ক্রিম হিসেবে মেখে নিলেও উপকার পাওয়া যাবে।
তিল
আকারে ছোট এই বীজের একাধিক গুণ। কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। তিল স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ। আপনার ত্বককে উজ্জ্বল এবং চুলকে সুস্থ রাখে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
স্যালাড বা সব্জির উপর রোস্ট করা তিল ছড়িয়ে দিতে পারেন। তিলের গুঁড়োর সঙ্গে গুড় এবং ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। কোল্ড-প্রেসড তিলের তেল গায়ে মাসাজও করা যায়।
অশ্বগন্ধা
ত্বকে ক্লান্তির ছাপ? জেল্লা হারিয়েছে ত্বক? মানসিক চাপের কারণেই ত্বকের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। মানসিক চাপের ফলে কোলাজেন উৎপাদনও কমে যায়। মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম অশ্বগন্ধা। স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে এবং স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এটি। ফলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে দেরিতে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
রাতে ঘুমোনোর আগে এক চামচ অশ্বগন্ধা গুঁড়ো গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করে নিন। নয়তো স্মুদিতে মিশিয়েও খাওয়া যায়। এ ছাড়া ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়।
তবে এ সবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে জল। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় না থাকলে কোনও পন্থাই কাজে দেবে না। তাই সারা দিনে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে।