পুজোর তিথিরই নাম বসন্ত পঞ্চমী। সেই পুজোয় বাসন্তী বা নিদেনপক্ষে উজ্জ্বল হলুদ রং ছাড়া কি মানায়!
তর্ক করে কেউ বলতেই পারেন সরস্বতী পুজোয় রঙের চেয়ে শাড়ির গুরুত্বই বেশি। কারণ বাঙালি মেয়েদের জীবনে প্রথম শাড়ির অভিজ্ঞতা হয় সরস্বতী পুজোতেই। চাইলে কেউ এ-ও বলতে পারেন যে, দেবী নিজে শুভ্রবসনা! তবে ভক্তদের হলুদ পরিধান নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? কিন্তু সে সব তর্ক এক দিকে আর সরস্বতী পুজোর হলুদ শাড়ি আর এক দিকে।
সরস্বতী পুজো বসন্তের আগমনবার্তা বয়ে আনে। আর বসন্ত মানে ঔজ্জ্বল্য। হলুদের থেকে উজ্জ্বল রং রামধনুর সাতরঙে আর একটিও আছে কি! হলুদকে বলা হয় আনন্দের রং। আর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তে লিখে গিয়েছেন ‘আনন্দবসন্তসমাগমে!’ ফলে সরস্বতী পুজো মানে হলুদ শাড়ি। ব্যস!
সাদা, তসর, ঘিয়ে, কমলা— যে রঙই পরুন, হলুদ শাড়ি দেখলে যতটা সরস্বতী পুজো বলে মনে হয়, তা আর কোনও শাড়িতে মনে হওয়া অসম্ভব। কিন্তু হলুদ শাড়ি পরার ঝক্কিও কম নয়। শাড়ি নয় বেছে নিলেন, কিন্তু সঙ্গে কোন রঙের ব্লাউজ় সবচেয়ে ভাল দেখাবে?
টলিউডের তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একটু অন্য রকম সাজের জন্য যে সব নতুন পোশাক পরিকল্পকদের উপর ভরসা করেন, তমশ্রী রায় তাঁদের একজন। সোহিনী সরকার থেকে শুরু করে অর্জুন চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমা ঘোষ, মধুমিতা সরকার,উষসী রায় তাঁর পরিকল্পিত পোশাক পরেন। তমশ্রী বলছেন, ‘‘হলুদের সঙ্গে খুব ভাল মানায় যে দুটো রং, তা হল গোলাপি আর সবুজ। তবে ইদানীং আর কেউ বিপরীত রঙের ব্লাউজ় পরতে চান না। এখন চল হয়েছে একই রঙের শাড়ি আর ব্লাউজ়ের। ফলে হলুদ শাড়ির সঙ্গে নায়িকারা হলুদ ব্লাউজ়ই পরতে চাইছেন। আর সেটা দেখতেও ভাল লাগছে।’’
কাজল। ছবি সংগৃহীত।
আসলে হলুদ রং নিজেই এত উজ্জ্বল যে, তার পাশে যে কোনও রংই ফিকে দেখায়। তাই হলুদকে সবচেয়ে ভাল সঙ্গত দিতে পারে হলুদ রংই। বলিউডেও তারকারা ইদানীং হলুদ শাড়ির সঙ্গে হলুদ রঙের ব্লাউজ় বেছে নিচ্ছেন। ছবিতে কাজলকে যেমন হলুদ শাড়ি আর হলুদ ব্লাউজ়ে দেখাচ্ছে মোহময়ী।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। ছবি সংগৃহীত।
জাতীয় পুরস্কার নেওয়ার জন্য লেবু হলুদ রঙের বাংলার তাঁত বেছে নিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তার সঙ্গেও ওই একই রঙের কাঞ্জিভরমের ব্লাউজ় পরেছেন তিনি। আবার জাহ্নবী কপূরের বাসন্তী হলুদ জড়ির কাজ করা শাড়ির সঙ্গে তাঁকেও ওই একই রঙের ব্লাউজ় পরিয়েছেন বলিউডের তারকাদের পছন্দের পোশাক শিল্পী মণীশ মলহোত্র।
জাহ্নবী কপূর। ছবি সংগৃহীত।
মুম্বইয়ে মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজোয় ক্যাটরিনা কইফ পরেছিলেন বাসন্তী হলুদ সিল্কের শাড়ি আর ব্লাউজ়। সেই শাড়িতে নকশা বুটি নামমাত্র। পেটাই জরির অনুজ্জ্বল পাড়। ব্লাউজ়ও একই রঙের। তবু তাতেই নায়িকা এমন উজ্জ্বল যে, বিশেষ গয়নাগাটিও পরতে হয়নি!
ক্যটরিনা কইফ ছবি সংগৃহীত।
হলুদ রংটাই এমন! বাংলা ছবির অভিনেতাদের পোশাকের নকশা করা সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, যে কোনও শাড়িতে বা পোশাকে হলুদের ছোঁয়া থাকলেই সেই পোশাক বা শাড়ি অন্য মাত্রা পায়, আলাদা করে চোখে পড়ে। সৈকতের বিশেষত্ব তাঁর কাঁথার কাজ। তিনি বলছেন, ‘‘আমার সংগ্রহের যে শাড়ি বা ধুতির কাজ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, সেটি অমলতাসের নকশা। হলুদ ঝালরের মতো অমলতাস ফুল কাঁথার কাজে শাড়িতে থাকলেই সেই শাড়ি সবার আগে বিক্রি হবে। তবে আমি আমালতাসের নকশা গাঢ় রঙের শাড়িতেই করেছি বেশি। আমি মনে করি না হলুদ রঙের সঙ্গে বিপরীত রং ভাল লাগে না!’’
অদিতি রাও হায়দরি
সৈকতের মতে, হলুদ রঙের সঙ্গে উজ্জ্বল জাম রং বা লাল-কালো কিংবা সবুজ-মেরুন নকশা করা ব্লাউজ় ভাল লাগবে। হলুদের সঙ্গে ভাল লাগবে হালকা সবুজ রং। বা হালকা আকাশি রংও। ব্লাউজ়ে সামান্য সাদা লেসের কাজ থাকলে হলুদ রঙের সঙ্গে অনেক বিপরীত রং, যেমন আকাশি, কালো, মেরুন বা গাঢ় নীল সুন্দর মানিয়ে যাবে।
করিনা কপূর। ছবি সংগৃহীত।
হলুদের সঙ্গে বিপরীত রঙের ব্লাউজ় পরলে সাদা লেসের কাজ রাখার কথা বলছেন সৈকত। তমশ্রীও হলুদের সঙ্গে অফ হোয়াইট বা ক্রিম রঙের ব্লাউজ় পরতে বলছেন। টলিউড অভিনেত্রী সোহিনী বিগত বেশ কয়েক বছর তাঁরই নকশা করা শাড়ি পরেছেন সরস্বতী পুজোয়। অভিনেত্রীর বাড়িতে পুজোও হয়। তমশ্রী বলছেন, ‘‘সাদা হলুদের কনট্রাস্টও আমি পরিয়েছি সোহিনীদিকে। তবে সোহিনীদি সাদা শাড়ি পরেছিলেন। তাঁর ব্লাউজ়ে ছিল হলুদের ছোঁয়া। আবার গত বছর সরস্বতী পুজোয় ওঁকে হলুদ চেক শাড়ির সঙ্গে বেছে দিয়েছিলাম হলুদ বুটি দেওয়া তুঁতে নীল তাঁতের ব্লাউজ়।
সোহিনী সরকার। ছবি সৌজন্যে তমশ্রী রায়।
হলুদের সঙ্গে বিপরীত রঙের ব্লাউজ় পরতে দেখা গিয়েছে বলিউডের কারিনা কপূর, অদিতি রাও হায়দারি, কঙ্গনা রনৌত, সারা আলি খানকেও। হাতে আর মাত্র এক দিন। বসন্ত পঞ্চমীতে আপনি কাকে অনুসরণ করতে চলেছেন?