অভিনেত্রী বা অভিনেতারা সুন্দর হন, সে কথা আলাদা। কিন্তু জাপানি তরুণ-তরুণীদের সকলের ত্বকই প্রায় দাগহীন। মুখে সব সময় ফুটে ওঠে জেল্লা। নির্মেদ শরীর। আর এ সব দেখেশুনে গত কয়েক বছর ধরে জাপানি রূপচর্চার কৌশল নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন, জাপানি পন্থা অনুসরণ করতে।
কিন্তু সৌন্দর্য নিয়ে তাঁদের ভাবনা কী? কী করেন তাঁরা এমন ত্বক পেতে?
ভারতীয় রূপচর্চার কৌশলের চেয়ে জাপানিদের ভাবনা যে পুরোপুরি পৃথক, তা কিন্তু নয়। ক্লিনজ়িং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজ়িংয়ের মূল কৌশল তাঁরাও প্রয়োগ করেন। তবে বাজারচলতি ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত উপকরণের চেয়ে তাঁরা আস্থা রাখেন প্রাকৃতিক উপাদানে। দূষণের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতেও যাতে ত্বকে কোনও সমস্যা না আসে, সেই লক্ষ্যেই তাঁরা রূপচর্চা করেন। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকলেই জেল্লা থাকবে, ত্বকের সজীবতা বজায় থাকবে— এমন পন্থাতেই বিশ্বাসী তারা।
জাপানি রূপচর্চার দর্শন গুরুত্ব দেয় প্রত্যেকের প্রয়োজনের উপর। ত্বকের ধরন আলাদা, সমস্যা আলাদা, সেই অনুযায়ী সঠিক উপকরণ চয়নেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যলাভ সম্ভব, এমনটাই মানেন তাঁরা।
কী বিশেষত্ব জাপানি রূপচর্চা কৌশলের?
· ব্যবহার করা সহজ
· শুধু ত্বক নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখায় জোর
· সঠিক উপকরণ বাছাই এবং সঠিক কায়দায় রূপচর্চা
· প্রথাগত এবং চিরাচরিত কৌশল অনুসরণ করা
· কী চাইছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া
সৌন্দর্যের গোপান কথা
জাপানি রূপচর্চায় বহু কাল ধরে প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহার হয়ে আসছে। চালের জল, সি-উইড, গ্রিন টি— এমন কিছু জিনিস কাজে লাগান তাঁরা।
আরও পড়ুন:
দৈনন্দিন জীবনে কী ভাবে তা ব্যবহার করবেন?
চালের জল: চাল ভেজানো জল শুধু ত্বক নয় চুলের জন্যও ভাল। রূপচর্চায় চাল ধোয়া জলের ব্যবহার বহু পুরনো ঘরোয়া রেওয়াজ। তা নিয়ে যদিও আলাদা করে বিশেষ গবেষণা নেই। চাল ধোয়া জল রেখে দিলে তা গেঁজিয়ে ওঠে। এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার ফলে ওই জল কার্যকর হয়ে ওঠে। ব্রণ-যুক্ত ত্বকের জন্য তা ভাল। জেল্লা ফেরাতেও কাজে আসে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে চাল ধোয়া জল। ওপেন পোরসের সমস্যা থাকলে, তা-ও নিরাময় করে। ত্বকে তেল বা সেবাম ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণেও এই জলের ভূমিকা রয়েছে।
চালের জল দিয়ে শিট মাস্ক তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। বাজারে কাগজ বা পাতলা কাপড়ের তৈরি মাস্ক কিনতে পাওয়া যায়। চাল ধোয়া জলে সেই মাস্কটি বেশ কিছু ক্ষণ ভিজিয়ে নিয়ে মুখের উপর বিছিয়ে রাখতে পারেন। আবার, চাল ধোয়া জল দিয়ে মুলতানি মাটি বা বেসন গুলেও মুখে মাখা যায়। সরাসরি চালের জলও মুখে মাখা যায়।
চুলের জন্যও তা কার্যকর। শ্যাম্পু করার পর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিন। তার পর চাল ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে রুক্ষ চুল মসৃণ হয়।
গ্রিন টি টোনার: ব্রণ বা ত্বকের ছোটখাটো সংক্রমণ প্রতিরোধ করে গ্রিন টি। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় বলিরেখা দূর করে ত্বক টানটান রাখতেও সক্ষম এটি। এতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। ব্রণ, র্যাশের সমস্যা থাকলে গ্রিন টি তৈরি করে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। ঠান্ডা চা টোনার হিসাবে ব্যবহার করুন।
কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার: পুষ্টির অভাব থাকলে ত্বক বা চুল কখনওই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হতে পারে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের অন্যতম জরুরি উপাদান কোলাজেন প্রোটিন হ্রাস পেতে থাকে। সেটি ধরে রাখার জন্য জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টিকর খাওয়া জরুরি। ডিম, মাংস, বিভিন্ন রকম বাদাম এবং বীজ, মাশরুম, আমলকি, পেঁপে, কলার মতো ফল কোলাজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।